পর্যায় সারণির বর্ণনা

Submitted by arpita pramanik on Wed, 02/13/2013 - 10:11

পর্যায় সারণির বর্ণনা (Description of Periodic table) :

বিভিন্ন মৌলগুলিকে বিভিন্ন পর্যায়ে কীভাবে সাজানো যায় তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় নীচে দেওয়া হল :

1. প্রথম পর্যায় :- এই পর্যায়ে মাত্র দুটি মৌল H এবং He জায়গা পেয়েছে । সাধারণ উষ্ণতায় দুটি মৌলই গ্যাসীয় । এই পর্যায়কে অতি হ্রস্ব পর্যায় বলে ।

2. দ্বিতীয় পর্যায় :- এই পর্যায়ে মোট আটটি মৌল আছে - Li,  Be,  B,  C,  N,  O,  F,  Ne স্থান পেয়েছে । এই পর্যায়কে প্রথম হ্রস্ব পর্যায় বলে । এদের মধ্যে Li এবং Be ধাতু, অন্যগুলি সবই অধাতু । সাধারণ উষ্ণতায় B ও C কঠিন । O,  N,  F ও  Ne গ্যাসীয় পদার্থ ।

3. তৃতীয় পর্যায় :- এই পর্যায়ের মৌলসংখ্যা আটটি - Na,  Mg,  Al,  Si,  P,  S,  Cl,  Ar । এই পর্যায়কে দ্বিতীয় হ্রস্ব পর্যায় বলে । এদের মধ্যে Na,  Mg এবং Al ধাতু, বাকিগুলি অধাতু । 

প্রথম ও দ্বিতীয় হ্রস্ব পর্যায়ে দেখা যায়, কোনো নির্দিষ্ট মৌল থেকে আরম্ভ করে পরের নবম মৌলে ধর্মের পুনরাবৃত্তি হয়; যেমন, Li ও Na  এবং F ও Cl । এই দুই পর্যায়ের মৌলগুলির ধর্মকে নীচের পর্যায়ের মৌলগুলি অনুসরণ করে; সেইজন্য এই মৌলগুলিকে আদর্শ মৌল (Typical elements) বা প্রতিনিধিমূলক মৌল (Representative elements) বলে ।

4. চতুর্থ পর্যায় :- এই পর্যায়ে 18টি মৌল আছে, যেমন— পটাশিয়াম (K) থেকে শুরু হয়ে ক্রিপটন (Kr) পর্যন্ত । এই পর্যায়কে প্রথম দীর্ঘ পর্যায় বলে ।  এই পর্যায়ে কোনো নির্দিষ্ট মৌল থেকে আরম্ভ করে অষ্টাদশ মৌলের পরের মৌলে ধর্মের পুনরাবৃত্তি ঘটে; যেমন— K এবং Rb -এর ধর্ম প্রায় একই রকম,  Br ও  I এর ধর্মও প্রায় একই । এই পর্যায়ে কঠিন অধাতু As,  তরল অধাতু Br এবং গ্যাসীয় অধাতু Kr । বাকি মৌলগুলি কঠিন ধাতু ।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের চেয়ে চতুর্থ পর্যায়ে 10 টি (Sc থেকে জিঙ্ক Zn পর্যন্ত) মৌল বেশি আছে । এই মৌলগুলি একাধিক যোজ্যতাসম্পন্ন এবং কয়েকটি বিশেষ ধর্মের অধিকারী বলে এই মৌলগুলিকে সন্ধিগত মৌল (Transitional elements) বলে । এদের মধ্যে Zn কিন্তু সন্ধিগত মৌল নয় । বাকি আটটি মৌল (K, Ca, Ga থেকে Kr পর্যন্ত) আদর্শ মৌলের মতো ।

5. পঞ্চম পর্যায় :- এই পর্যায়ে 18টি মৌল আছে; যেমন— রুবিডিয়াম (Rb) থেকে শুরু করে জেনন (Xe) পর্যন্ত । এই পর্যায়কে দ্বিতীয় দীর্ঘ পর্যায় বলে ।  এই পর্যায়ে 10টি মৌল (ইট্রিয়াম(Y) থেকে ক্যাডমিয়াম(Cd-) পর্যন্ত) বেশি আছে । একাধিক যোজ্যতাবিশিষ্ট এবং কয়েকটি বিশেষ ধর্মের অধিকারী বলে Cd ছাড়া এই মৌলগুলিকেও সন্ধিগত মৌল (Transitional elements) বলে । পঞ্চম পর্যায়ে বাকি আটটি মৌল (Rb,  Sr এবং In থেকে Xe পর্যন্ত) আদর্শ মৌলের মতো । এই পর্যায়ে কোনো নির্দিষ্ট মৌল থেকে আরম্ভ করে অষ্টাদশ মৌলের পরের মৌলে ধর্মের পুনরাবৃত্তি হয় । যেমন- Rb এবং Cs -এর ধর্মে যথেষ্ট মিল দেখা যায় ।

6. ষষ্ঠ পর্যায় :- এই পর্যায়ে 32 টি মৌল আছে, (Cs থেকে শুরু করে Rn) পর্যন্ত । এই পর্যায়কে প্রথম অতিদীর্ঘ পর্যায় বলে । এর মধ্যে আটটি আদর্শ মৌল আছে । Cs,  Ba এবং Ti থেকে Rn পর্যন্ত ] । এই পর্যায়ে La এবং Hf থেকে Au - 9টি মৌল হল সন্ধিগত মৌল । এছাড়া Ce থেকে Lu পর্যন্ত মৌলগুলিকে (14টি) প্রকৃতির মধ্যে খুব কম পাওয়া যায় এবং ধর্মের খুব বেশি সাদৃশ্য থাকায় এদের পর্যায়-সারণিতে এক জায়গায় স্থান দেওয়া হয়েছে । এদের বিরল মৃত্তিকা মৌল বা ল্যান্থানাইডস (Rare earth elements or Lanthanides) বলে ।  

7. সপ্তম পর্যায় :- এটি একটি অসম্পূর্ণ দ্বিতীয় অতিদীর্ঘ পর্যায় । বর্তমানে এই পর্যায়ে মোট মৌল সংখ্যা 23টি  । এর মধ্যে 6টি মৌল (Fr থেকে ইউরেনিয়াম U) প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, বাকি 17টি মৌলকে কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত করা হয়েছে । এইগুলিকে ইউরেনিয়ামোত্তর মৌল (Transuranic elements) বলা হয় । এই পর্যায়ের থোরিয়াম (Th) থেকে লরেন্সিয়াম([Lw) পর্যন্ত মৌলগুলিকে অ্যাক্টিনাইডস (Actinides) বলে । সপ্তম পর্যায়ের মৌলগুলি তেজস্ক্রিয় ([Radioactives) । Lw -এর পর নতুন আবিষ্কৃত মৌলগুলি হল রাদারফোর্ডিয়াম (Rf), হানিয়াম (Ha-105),  সিবরজিয়াম (Sg-106), নিলসবোরিয়াম (Ns-107), হ্যাসিয়াম (Hs) এবং মিটনেরিয়াম (Mt-109) ।

*****

Related Items

অ্যাম্মিটার এবং ভোল্টমিটারের ব্যবহার

কোনো বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ হচ্ছে কিনা, কিংবা হলে তার মান নির্ণয় করতে যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেই যন্ত্রকে গ্যালভানোমিটার বলে । ইটালির বিজ্ঞানী লুইগি গ্যালভানির নামে এই যন্ত্রের নামকরণ হয়েছে । তড়িৎপ্রবাহের ওপর চুম্বকের ক্রিয়া এই মূল নীতির ওপর ...

তড়িৎ চুম্বকত্ব (Electromagnetism)

কোনো চৌম্বক পদার্থের গায়ের ওপর অন্তরিত পরিবাহী তার জড়িয়ে তার ভিতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের সাহায্যে চৌম্বক পদার্থকে অস্থায়ী চুম্বকে পরিণত করা হলে, সেই চুম্বককে তড়িৎচুম্বক বলে । তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ করলে চৌম্বক পদার্থের চুম্বকত্ব লোপ পায় । বেশি শক্তিশালী তড়িৎচুম্বক ...

বৈদ্যুতিক মোটর (Electric Motor)

বিদ্যুৎ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রুপান্তরিত করার যন্ত্রের মধ্যে একটি হল মোটর । বৈদ্যুতিক মোটর দু'রকম - পরবর্তী প্রবাহের জন্য মোটর (A.C. Motor) এবং সমপ্রবাহের জন্য মোটর (D.C. Motor) । এখানে সমপ্রবাহের মোটর বা D.C. Motor বিষয়ে আলোচনা করা হল ।

তড়িৎপ্রবাহের ওপর চুম্বকের ক্রিয়া

তড়িৎপ্রবাহ যেমন চুম্বকের ওপর ক্রিয়া করে চুম্বক-মেরুকে বিক্ষিপ্ত করার সময় ওর ওপর একটি বল প্রয়োগ করে, সেই রকম চুম্বক- মেরুও তড়িৎপ্রবাহের ওপর ক্রিয়া করে । এর ফলে চুম্বক-মেরু তড়িদ্বাহী পরিবাহীর ওপর একটি বল প্রয়োগ করে, ফলে পরিবাহী ...

চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া

কোনো পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে তার চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় । ওই তারের কাছে একটি চুম্বক শলাকা থাকলে শলাকাটি বিক্ষিপ্ত হয় । একে চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া বলে । 1820 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ওরস্টেড সর্বপ্রথম চুম্বকের ...