পর্যায় সারণির ত্রয়ী সূত্র ও অষ্টক সূত্র

Submitted by arpita pramanik on Tue, 02/12/2013 - 23:40

পর্যায় সারণির ত্রয়ী সূত্র ও অষ্টক সূত্র

পর্যায় সারণি (Periodic table)

সুচনা (Introduction) : জল, বায়ু, আকাশ, মাটি নিয়ে এই যে অসীম বিশ্বপ্রকৃতি -এর মাঝে কত না বৈচিত্র্য, কিন্তু এই বিভিন্ন বৈচিত্র্যের মাঝেও সেই অনাদিকাল থেকেই মানুষ খুঁজতে চেয়েছে ছন্দ, খুঁজতে চেয়েছে মিল । পর্যায় সারণিও মানুষের বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টার একটি ফসল । রসায়ন বিজ্ঞানের ক্রমান্বয়ে উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অনেক প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম মৌল আবিষ্কৃত হল, যাদের সংখ্যা মোটামুটি 109 । এই বিভিন্ন মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম জানার পর দেখা গেল, কতকগুলি মৌলের মধ্যে রাসায়নিক ধর্মের অনেক মিল আছে । বিভিন্ন মৌলের মধ্যে রাসায়নিক ধর্মের সাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা মৌলগুলিকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজাবার চেষ্টা করতে থাকলেন । প্রতিটি মৌলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে । কোনো মৌল কঠিন, কোনোটি মৌল তরল আবার কোনটি গ্যাসীয় । আবার প্রতিটি মৌলের পৃথক পৃথক ধর্মও আছে । কিছু কিছু মৌলের মধ্যে ধর্মের মিল আবার কিছু কিছু মৌলের মধ্যে ধর্মের অমিলও দেখা যায় । বহুকাল থেকে এই ধর্মের ভিত্তিতে মৌলগুলির শ্রেণি বিন্যাসের চেষ্টা চলে আসছে ।  অনেক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে পারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে শ্রেণি বিন্যাসের চেষ্টা শুরু বলা যেতে পারে 1817 খ্রিস্টাব্দে ডবারাইনারের ত্রয়ী সুত্র থেকে (Dobereiner's Law of Traids) ।

ত্রয়ী সূত্র (Law of Triads) : রাসায়নিকভাবে সদৃশ প্রতি তিনটি মৌলের জোটের মাঝের মৌলটির পারমাণবিক ভর মোটামুটিভাবে অপর মৌলদ্বয়ের পারমাণবিক ভর দুটির গড় মানের সমান । এই সূত্রের ভিত্তিতে ডবারাইনার কয়েকটি মৌলকে তালিকার আকারে সাজান ।

Li 7 Ca 40 S 32 Cl 35.5
Na 23 Sr 88 Se 78 Br 80
K 39 Ba 137 Te 125 I 127

অকটেভ ব অষ্টক সূত্র (Law of Octaves) : 1864 খ্রিস্টাব্দে নিউল্য্যান্ড (Newland) বিভিন্ন মৌলগুলির ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজিয়ে দেখেন যে, কোন নির্দিষ্ট মৌলের সঙ্গে তার পরের অষ্টম মৌলের ধর্মের পুনরাবৃত্তি হয় । যেমন—

Li (7) Be (9.02) B (10.8) C (12) N (14) O (16) F (19)
Na (23) Mg (24) Al (27) Si (28) P (31) S (32) Cl (35.5)
K (39) Ca (40)          

ওপরের তালিকা অনুসারে Li -কে প্রথম মৌল ধরে পরের অষ্টম মৌল হয় Na, আবার Na -কে প্রথম মৌল পরের অষ্টম মৌল হয় K । প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় Li, Na এবং K -এর মধ্যে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের অনেক মিল আছে— নিউল্য্যান্ড এই বিষয়টির নাম দেন অষ্টক সূত্র । এই সূত্রের মূল কথা হল—  মৌলগুলিকে যদি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ভর হিসেবে সাজানো হয় তাহলে প্রত্যেক অষ্টম মৌলে ভৌত ও পারমাণবিক ধর্মের পুনরাবৃত্তি ঘটবে । এই সূত্রগুলি কিছু কিছু মৌলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও সমস্ত মৌলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হয় না । ফলে সূত্রগুলির নিজ নিজ কিছু সাফল্য থাকলেও সার্বজনীনভাবে স্বীকৃতি পায় নি ।

*****

Related Items

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের ব্যবহার

রসায়নাগারে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড খুবই প্রয়োজনীয় বিকারক । ক্লোরিনের শিল্পোত্পাদনে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের ব্যবহার হয় । অ্যাকুয়া রিজিয়া (অম্লরাজ) প্রস্তুতিতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের ব্যবহার হয়, যা সোনা গলাতে দরকার হয় । রঞ্জন শিল্পে, চর্ম শিল্পে, লোহার ওপর দস্তা ...

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের শনাক্তকরণ

সিলভার নাইট্রেট দ্রবণের সঙ্গে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় অদ্রাব্য সিলভার ক্লোরাইডের থকথকে সাদা অধঃক্ষেপ পাওয়া যায় । এই অধঃক্ষেপ নাইট্রিক অ্যাসিড -তে অদ্রাব্য কিন্তু অতিরিক্ত অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সিড -এ দ্রাব্য । হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মধ্যে ক্লোরিন এবং হাইড্রোজেন ...

হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের ধর্ম

হাইড্রোজেন ক্লোরাইড বর্ণহীন, শ্বাসরোধী, ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত, অম্লস্বাদ বিশিষ্ট গ্যাস । হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস বাতাসের চেয়ে প্রায় 1.3 গুণ ভারী, এর বাষ্পীয় ঘনত্ব 18.25। এই গ্যাস জলে অত্যন্ত দ্রাব্য, 0°C উষ্ণতায় এবং প্রমাণ চাপে 1 সিসি জলে 450 সিসি হাইড্রোজেন ক্লোরাইড ...

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড প্রস্তুতি

HCl -এর জলীয় দ্রবণ অর্থাৎ, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড প্রস্তুতি: গ্যাসীয় অবস্থায় HCl -কে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড বলে । এই গ্যাসের জলীয় দ্রবণকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড বলে । উত্পন্ন হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসকে জলে দ্রবীভূত করলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড পাওয়া যায় । ...

হাইড্রোজেন ক্লোরাইড এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড

1648 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী গ্লোবার রক সল্ট ও গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়া ঘটিয়ে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস তৈরি করেন । বিজ্ঞানী প্রিস্টলী 1772 খ্রিস্টাব্দে সমুদ্রের লবণ থেকে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড প্রস্তুত করেন । তিনিএই অ্যাসিডের নাম দেন সামুদ্রিক অ্যাসিড ...