পর্যায় এবং শ্রেণিতে মৌলসমূহের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা এবং তাদের পরিবর্তনশীলতা

Submitted by arpita pramanik on Wed, 02/13/2013 - 20:40

পর্যায় এবং শ্রেণিতে মৌলসমূহের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা এবং তাদের পরিবর্তনশীলতা

Periodic properties and their variation inPeriods and Groups

পর্যায়-সারণিতে একই শ্রেণির একই উপশ্রেণিভুক্ত মৌলদের ধর্মের মিল এবং অমিল দেখা যায় যেমন— হাইড্রোজেন ছাড়া উপশ্রেণি IA -এর সব মৌলগুলির উচ্চ পরা-তড়িৎধর্মী যারা আবার ক্ষারীয় ধাতু । পরা-তড়িৎযুক্ত আয়ন তৈরির প্রবণতা এদের প্রত্যেকের মধ্যে খুব প্রবল । এদের প্রতিটির অক্সাইড উচ্চ ক্ষারীয় ধর্মের । হাইড্রাইড এবং হ্যালাইড যৌগগুলি আয়নীয় । প্রতিটি মৌল জলের সঙ্গে তীব্রভাবে বিক্রিয়া করে ক্ষার এবং হাইড্রোজেন উত্পন্ন করে, আবার একই পর্যায়ের বা একই শ্রেণির অন্য মৌলের ধর্মের পরিবর্তনও একটি নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে ঘটে ।

[1] পরমাণুর আকার (Atomic size) : পরমাণুর আকার বলতে বোঝায় যে, পরমাণুর ব্যাসার্ধ । দেখা যায় যে, একই পর্যায়ে পরমাণুর ব্যাসার্ধ ক্রমাগত কমছে । পর্যায়-সারণির বামদিকে থেকে যদি ডানদিকে যাওয়া যায়; অর্থাৎ শ্রেণি-I থেকে শ্রেণি-VII -এর দিকে, তাহলে দেখা যাবে দ্বিতীয় পর্যায়ে লিথিয়ামের আকার ফ্লোরিনের থেকেও বড়ো ।  সুতরাং, পর্যায় বরাবর মৌলগুলির পারমাণবিক আকার কমছে । তৃতীয় পর্যায়েও সোডিয়ামের আকার সবচেয়ে বড়ো এবং ক্লোরিন পরমাণুর আকার সবচেয়ে ছোটো । দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের মৌলগুলিকে ক্রমহ্রাসমান পরমাণুর ব্যাসার্ধের মান অনুযায়ী সাজালে পাওয়া যায়,

দ্বিতীয় পর্যায় বরাবর : Li > Be > B > C > N > O > F

তৃতীয় পর্যায় বরাবর : Na > Mg > Al > Si > P > Cl

একটি শ্রেণির নিচের দিকে গেলে দেখা যাচ্ছে সেখানে একটির বেশি ইলেকট্রন স্তর বেশি যোগ হচ্ছে । যেমন— I -শ্রেণির লিথিয়াম থেকে পটাশিয়ামের পারমাণবিক আকার অনেক বড়ো । অনুরূপভাবে শ্রেণি VII-এ ফ্লুওরিন থেকে আয়োডিনে পারমাণবিক আকার ক্রমশ বৃদ্ধি পায় । প্রথম ও সপ্তম শ্রেণির মৌলগুলিকে ক্রমবর্ধমান পরমাণুর ব্যাসার্ধের মান অনুযায়ী সাজালে পাই—

প্রথম শ্রেণি বরাবর : Li < Na < K < Rb < Cs

সপ্তম শ্রেণি বরাবর : F < Cl < Br < I < At

[2] মৌলের ধাতব ও অধাতব চরিত্র (Metallic Character and Non-Metallic Character) :- কোনো একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের বামদিক থেকে ডানদিকে শ্রেণি VII পর্যন্ত অগ্রসর হলে দেখা যায় যে, মৌলগুলির পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মৌলদের তড়িৎ-ঋণাত্মকতা ধর্ম বা অধাতব ধর্ম ক্রমশ বৃদ্ধি পায় । যেমন— প্রথম হ্রস্য পর্যায়ের শ্রেণি IA -র Li উচ্চ পরা-তড়িৎধর্মী ধাতু, এরপর পরা-তড়িৎধর্মিতা ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে এবং তড়িৎ-ঋণাত্মকতা বৃদ্ধি পেতে থাকে । ওই পর্যায়ের শ্রেণি VIIB -এর মৌল ফ্লুওরিন সুউচ্চ তড়িৎ-ঋণাত্মকধর্মী অধাতু । আবার কোনো একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির ওপর থেকে নীচের দিকে তড়িৎ-ঋণাত্মকতা ধর্ম কমে আসে; অর্থাৎ, পরা-তাড়িতিক ধর্ম বা ধাতব ধর্ম বৃদ্ধি পায় । যেমন, শ্রেণি VIIB -এর হ্যালোজেন মৌলগুলি যদিও উচ্ছ তড়িৎ-ঋণাত্মক মৌল, তবুও ফ্লুওরিন থেকে আয়োডিনে তড়িৎ-ঋণাত্মকতা ধীরে ধীরে কমে আসে । যার ফলে আয়োডিনে খানিকটা পরা-তড়িৎধর্ম দৃষ্ট হয় । আবার শ্রেণির A উপ-শ্রেণিভুক্ত মৌল পাশের B উপ-শ্রেণিভুক্ত মৌলের তুলনায় উচ্চতর পরা-তাড়িতিক ধর্ম সম্পন্ন হয় ।

তড়িৎ-ঋণাত্বকতা এবং পাউলিং -এর সংজ্ঞা (Electro-negativity and Pauling's definition) : অসম তড়িৎ গুণসম্পন্ন দুটি পরমাণু দ্বারা গঠিত স্থায়ী অণুর মধ্যে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকা অবস্থায় একটি পরমাণু বন্ধন সৃষ্টিকারী ইলেকট্রন জোড়কে অপর পরমাণু অপেক্ষা অধিক আকর্ষণ করে নিজের দিকে টেনে আনে । এরূপ আকর্ষণ প্রবণতা বা ক্ষমতাকে বলা হয় অপরা তড়িৎধর্মিতা বা তড়িৎ-ঋণাত্মকতাতড়িৎ-ঋণাত্মকতার এটাই হল পাউলিং -এর সংজ্ঞা

পর্যায়-সারণির অনুভূমিক পর্যায়ে পরমাণু-ক্রমাঙ্ক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অপরা-তড়িৎধর্মিতা বৃদ্ধি পায় । আবার সারণির যে-কোনো শ্রেণিতে নীচের দিকে পরমাণু-ক্রমাঙ্ক বৃদ্ধির সঙ্গে অপরাধর্মিতা হ্রাস পায় । তড়িৎ ঋণাত্মকতার কোনো একক নেই, এটি একটি তুলনামূলক সংখ্যা মাত্র ।

*****

Related Items

জীবনক্রিয়ায় জৈব যৌগের ভুমিকা

প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহের বেশির ভাগ অংশ জৈব যৌগ দিয়ে গঠিত । তাই জীব জগতে জৈব যৌগের দান অতুলনীয় । জীবন ক্রিয়ার সঙ্গে জৈব যৌগ গভীর ভাবে জড়িত । জীবদেহের জীবনক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য জৈব যৌগের ভূমিকা অপরিসীম । জীবজগতে প্রত্যেক জৈবিক ক্রিয়ার কারণ ...

জৈব যৌগ ও জৈব রসায়ন

কার্বনের যে সমস্ত যৌগ প্রধানত জীবজগতে উত্পন্ন হয় এবং যে সমস্ত যৌগে কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এবং বৃত্তাকার শৃঙ্খলে যুক্ত থেকে বিভিন্ন সমধর্মী যৌগের শ্রেণি গঠন করতে পারে, সেই সমস্ত যৌগকে সামগ্রিকভাবে জৈব যৌগ বলে ...

কয়েকটি বিশিষ্ট ধাতু-সংকর ও তার ব্যবহার

পিতল, কাঁসা, ব্রোঞ্জ, অ্যালুমিনিয়াম-ব্রোঞ্জ, জার্মান সিলভার, ডুরালুমিন, ম্যাগনেলিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল, বাসনপত্র, নল, টেলিস্কোপ, মূর্তি, ব্যারোমিটার, বিভিন্ন যন্ত্রের অংশ, তুলাদন্ড, বিমানের কাঠামো, জলের কল প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয় । ...

ধাতু সংকর (Alloy)

দুই বা ততোধিক ধাতু পরস্পর মিশে যে সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উত্পন্ন করে, সেই কঠিন ধাতব পদার্থকে ধাতু সংকর বা সংকর ধাতু বলে । যেমন - তামা ও টিনের মিশ্রণে উত্পন্ন কাঁসা হল একটি সংকর ধাতু । অনেক ক্ষেত্রে ধাতু-সংকরে অধাতু থাকতে পারে । ...

তামা বা কপার (Copper)

অতি প্রাচীন কাল থেকে তামা বা কপারের ব্যবহার চলে আসছে । কানাডার লেক সুপিরিয়রের কাছে এবং সাইবেরিয়ার পর্বতে মুক্ত অবস্থায় তামা বা কপার পাওয়া যায় । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কপারকে বিভিন্ন যৌগরূপে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় । কপারের প্রধান আকরিকগুলি হল ...