নিউক্লীয় বিভাজন (Nuclear fission)

Submitted by arpita pramanik on Tue, 02/12/2013 - 21:10

নিউক্লীয় বিভাজন (Nuclear fission) :

যে নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় কোনো ভারী পরমাণু নিউক্লিয়াসকে উপযুক্ত শক্তিসম্পন্ন নিউট্রন কণা দ্বারা আঘাত করলে, ভারী পরমাণুর নিউক্লিয়াসটি বিভাজিত হয়ে দুটি প্রায় সমভর বিশিষ্ট টুকরায় পরিণত হয় এবং সেই সঙ্গে কয়েকটি নিউট্রন এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হয়, সেই ঘটনাকে নিউক্লীয় বিভাজন বলে । 

উদাহরণ : 1939 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী অটোহান এবং স্ট্রাসম্যান আবিষ্কার করেন যে, উপযুক্ত শক্তিসম্পন্ন নিউট্রন কণার দ্বারা ইউরেনিয়াম পরমাণুকে আঘাত করলে মোটামুটি সমান ভরের দুটি পরমাণু বেরিয়াম (Ba) এবং ক্রিপটন (Kr) তৈরি হয় এবং ওই সঙ্গে 3টি নিউট্রন (0n1) কণা নির্গত হয় । ইউরেনিয়ামের এরূপ ভাঙ্গনের ফলে প্রচুর পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় । [tex]{}_{92}{U^{235}} + {}_0{n^1} \to {}_{56}B{a^{141}} + {}_{36}K{r^{92}} + 3{}_0{n^1} + [/tex] শক্তি

বিভাজনে সৃষ্ট দুটি নিউক্লিয়াসের যুক্ত ভর আঘাত প্রাপ্ত নিউক্লিয়াসের আদি ভর অপেক্ষা কিছুটা কম হয়; অর্থাৎ এই বিক্রিয়ায় কিছু পরিমাণ ভর ঘাটতি হয় । আইনস্টাইনের ভর শক্তির তুল্যতা সমীকরণ E = mc² অনুযায়ী ওই হ্রাসপ্রাপ্ত ভর তুল্য পরিমাণ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় । হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিটি বিভাজনে প্রায় 200 Me V পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় । নিউক্লীয় বিভাজন থেকে প্রাপ্ত শক্তি যে কত বিপুল তার কিছুটা ধারণা প্রদত্ত উদাহরণ থেকে পাওয়া যেতে পারে— 1 পাউন্ড (=0.454 কেজি) U235 বিভাজিত করলে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় সেই শক্তি একটানা এক বছর ধরে 1 মেগাওয়াট হারে শক্তি সরবরাহ করতে পারে, যা প্রায় 1160 টন কয়লা পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন শক্তির সমান । প্রত্যেক বিভাজনে উৎপন্ন নিউট্রনগুলি অন্যান্য নিউক্লিয়াসগুলিকে বিভাজিত করে এবং ক্রমাগত এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে । একে শৃঙ্খল বিক্রিয়া (Chain reaction) বলে । এর ফলে খুব কম সময়ে বিপুল শক্তির উদ্ভব ঘটে । নিউক্লীয় বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে গত বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু বোমা তৈরি করা হয়েছিল । বিশেষ ব্যবস্থার সাহায্যে শৃঙ্খল বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে তাপশক্তি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে । এভাবে নিউক্লীয় বিভাজনের সাহায্যে মানুষের কল্যাণকর কাজে ব্যবহার করতে তাপ শক্তির উৎস হিসেবে নিউক্লীয় চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে ।

*****

Related Items

বাড়িতে বিদ্যুৎ-লাইন ব্যবস্থা

কোনো কারণে বাড়িতে বিদ্যুৎ লাইনে নিরাপদ সীমার অতিরিক্ত তড়িৎপ্রবাহ চালু হলে আগুন লেগে বিপদ ঘটতে পারে । বাড়িতে তড়িৎ বর্তনীর লাইনে নিরাপত্তার জন্য কম গলনাঙ্ক বিশিষ্ট কোনোও সংকর ধাতুর তৈরি এবং বেশি রোধের যে সরু তার শ্রেণি সমবায়ে লাইন তারের সঙ্গে সংযুক্ত করা ...

তড়িৎ-ক্ষমতা এবং শক্তি

কার্য করবার হারকে ক্ষমতা বলে । তড়িৎ-ক্ষমতা বলতে তড়িৎপ্রবাহের কার্য করবার হার-কে বোঝায় । বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ক্ষমতা ওয়াট [watt] নামক এককে প্রকাশ করা হয় । যে বৈদ্যুতিক যন্ত্র এক সেকেন্ডে [second] এক জুল [joule] কার্য করতে পারে, তার ক্ষমতাকে 1 ওয়াট [watt] বলা হয় । ...

তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফল ও তার প্রয়োগ

1841 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী জেমস প্রেসকট জুল সর্বপ্রথম পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহের ফলে তাপের সৃষ্টি সম্পর্কে তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন, এই সূত্রগুলিকে জুলের সূত্র বলা হয় । কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে পরিবাহী উত্তপ্ত হয়ে ওঠে— একেই তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফল বলে ...

রোধের সমবায় এবং তুল্যাঙ্ক রোধ

ব্যবহারিক ক্ষেত্রে একাধিক রোধকে একত্রে যুক্ত করে মোট রোধের মান বাড়ানো বা কমানোর প্রয়োজন হয় । একে রোধের সমবায় বলা হয় । কোনো তড়িৎ-বর্তনীর দুই প্রান্তে একাধিক রোধ যুক্ত থাকলে বর্তনীতে যে প্রবাহ হয়, রোধগুলির পরিবর্তে ওই দুই প্রান্তের সঙ্গে একটি মাত্র রোধ যোগ ...

রোধাঙ্ক (Resistivity)

একই প্রস্থচ্ছে এবং একই দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট বিভিন্ন তারের রোধ তারের উপাদানের ওপর নির্ভর করে । যেমন, একই প্রস্থচ্ছেদ এবং একই দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তামার ও রুপোর তারের রোধ কম । কোনো পদার্থের একক দৈর্ঘ্য এবং একক প্রস্থচ্ছেদবিশিষ্ট তারের রোধকে রোধাঙ্ক বলে । আবার একক প্রস্থচ্ছেদ ...