নাইট্রিক অ্যাসিডের শনাক্তকরণ বলয় পরীক্ষা

Submitted by arpita pramanik on Sat, 03/09/2013 - 12:15

নাইট্রিক অ্যাসিডের শনাক্তকরণ বলয় পরীক্ষা :

একটি টেস্ট-টিউবে নাইট্রিক অ্যাসিড কিংবা নাইট্রেট লবণের জলীয় দ্রবণ নিয়ে ওর সঙ্গে সদ্য প্রস্তুত FeSO4 দ্রবণ যোগ করা হল । এইবার টেস্ট-টিউবের গা-বেয়ে গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) ধীরে ধীরে দ্রবণের সঙ্গে যোগ করা হল । গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড ভারী বলে তলায় চলে যায় এবং নীচের স্তর গঠন করে । এর ওপরে দ্রবণের স্তর থাকে । এই দুই তরলের সংযোগস্থলে একটা বাদামী বলয় গঠিত হয় । এই পরীক্ষাকে বলয় পরীক্ষা (Ring Test) বলা হয় । নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) এবং নাইট্রেট লবণের শনাক্তকরণে এই পরীক্ষা করা হয় ।

বিক্রিয়া : গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড মেশালে FeSO4 দ্রবণের সঙ্গে HNO3 -এর বিক্রিয়ায় NO উৎপন্ন হয় । উৎপন্ন NO অবিকৃত FeSO4 -এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রোসোফেরাস সালফেট Fe(NO)SO4 উৎপন্ন করে । এর রং বাদামী— এটি হল বাদামী বলয় ।

    6FeSO4 + 3H2SO4 + 2HNO3 = 3Fe2(SO4)3 + 2NO + 4H2O

বর্তমান মতে উৎপন্ন NO, অবশিষ্ট FeSO4 -এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাদামী বর্ণের [FeNO(H2O)5]SO4 যৌগ উৎপন্ন করে । FeSO4 + 6H2O = [Fe(H2O)6]SO4

     [Fe(H2O)6]SO4 + NO = [Fe(NO)(H2O)5]SO4 + H2O

নাইট্রিক অ্যাসিডের মধ্যে হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন আছে  - প্রমাণ কর ।

[i] একটি ফ্লাস্কে ঝামা পাথর রেখে লোহিত-তপ্ত করে ওর ওপর ফোঁটা ফোঁটা গাঢ় নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) ফেলা হল । উৎপন্ন গ্যাসকে প্রথমে বরফে রাখা U-টিউবের মধ্য দিয়ে, পরে হিমমিশ্রে রাখা U-টিউবের মধ্য দিয়ে চালনা করা হল । এর ফলে শেষ U-টিউবের নির্গম-নল দিয়ে একটি বর্ণহীন গ্যাস নির্গত হতে দেখা যায় । এর মধ্যে শিখাহীন জ্বলন্ত পাটকাঠি ধরলে তীব্রভাবে জ্বলে ওঠে এবং ওই গ্যাস ক্ষারীয় পাইরোগ্যালেট দ্রবণে শোষিত হয় । সুতরাং, গ্যাসটি O2 । এই অক্সিজেন (O2) নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) থেকে আসে ।

[ii] বরফে রাখা U-টিউবের মধ্যে বর্ণহীন তরল জমা হয় যা অনার্দ্র CuSO4 -কে নীল করে ।  সুতরাং, বর্ণহীন তরলটি হল জল । জলে H2 আছে, এই H2 নাইট্রিক অ্যাসিড থেকে আসে । 

    4HNO3 = 2H2O + 4NO2 + O2

[iii] উত্তপ্ত কপারের ওপর দিয়ে নাইট্রিক অ্যাসিড বাষ্প চালনা করলে বর্ণহীন, গন্ধহীন একটি গ্যাস উৎপন্ন হয় । ওই গ্যাস জ্বলন্ত পাটকাঠিকে নিভিয়ে দেয় । ওই গ্যাসের মধ্যে জ্বলন্ত Mg জ্বলতে থাকে এবং বিক্রিয়া করে একটি সাদা পদার্থ উৎপন্ন করে যা ফুটন্ত জলের সঙ্গে বিক্রিয়ায় ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত অ্যামোনিয়া উৎপন্ন করে । সুতরাং সাদা যৌগটি নাইট্রাইড যৌগ যা N2 -এর সঙ্গে Mg -এর বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় । তাই, বর্ণহীন গ্যাসটি নাইট্রোজেন । এই N2 নাইট্রিক অ্যাসিড থেকে আসে । 

    5Cu + 2HNO3 = 5CuO + N2 ↑ + H2

 3Mg + N2 = Mg3N2,  Mg3N2 + 6H2O = 3Mg(OH)2 + 2NH3

নাইট্রিক অ্যাসিডের ব্যবহার :

[i] রসায়নগারে বিকারক হিসাবে যেমন— অ্যাসিডরূপে, জারক পদার্থরূপে নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) ব্যবহৃত হয় ।

[ii] বিস্ফোরক পদার্থ যেমন— নাইট্রো গ্লিসারিন যা ডিনামাইট তৈরিতে কাজে লাগে, ট্রাই-নাইট্রোটলুইন, পিকরিক অ্যাসিড প্রস্তুতিতে নাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয় ।

[iii] সার উৎপাদনে এবং নাইট্রেট লবণ তৈরিতে নাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয় ।

[iv] সেলুলয়েড, ওষুধ, সুগন্ধী নাইলন, প্লাস্টিক, রেয়ন, কৃত্রিম রং, কৃত্রিম সিল্ক তৈরিতে HNO3 ব্যবহৃত হয় ।

[v] অম্লরাজ (Aqua regia) প্রস্তুতিতে এবং বিভিন্ন ধাতু ও ধাতু সংকর দ্রবীভূত করতে নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) ব্যবহৃত হয় ।

[vi] ইলেকট্রোপ্লেটিং ও তড়িৎকোশে নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) ব্যবহৃত হয় ।

[vii] তামা ও পিতলের ওপর দাগ কেটে নক্সা করতে, রকেটের জ্বালানির জারক পদার্থ হিসাবে নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) ব্যবহৃত হয় ।

*****

Related Items

লোহা বা আয়রন (Iron)

আয়রনকে প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না । পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমাণে আয়রনের আকরিক পাওয়া যায়। ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে লোহার আকরিক পাওয়া যায় । ভূ-ত্বকে আয়রনের পরিমাণ 4.12 শতাংশ। ...

দস্তা বা জিঙ্ক (Zinc)

জিঙ্ক ধাতুকে প্রকৃতির মধ্যে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না । জিঙ্কের প্রধান আকরিকগুলি জিঙ্কাইট ক্যালামাইন , জিঙ্কব্লেন্ড। জিঙ্কব্লেন্ড জিঙ্কের প্রধান আকরিক । ভারতের রাজস্থান, বিহার, পাঞ্জাব ও তামিলনাড়ুতে জিঙ্কব্লেন্ড পাওয়া যায় । ...

ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium)

ম্যাগনেসিয়ামকে প্রকৃতির মধ্যে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না । এর নানা রকম যৌগ প্রচুর পরিমাণে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় । ম্যাগনেসিয়ামের সংকেত-Mg পারমাণবিক সংখ্যা- 12 পারমাণবিক ভর- 24.3 যোজ্যতা- 2 । এর প্রধান আকরিকগুলি হল ..

অ্যালুমিনিয়াম (Aluminium)

অ্যালুমিনিয়াম ধাতুকে মুক্ত অবস্থায় প্রকৃতির মধ্যে পাওয়া যায় না । যৌগরূপে এই ধাতুকে প্রকৃতির মধ্যে প্রচুর পাওয়া যায় । ভু-পৃষ্ঠের সব ধাতুর মধ্যে অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বিমান ও মোটর গাড়ির কাঠামো প্রস্তুতিতে, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক তার তৈরিতে অ্যালুমিনিয়াম ...

খনিজ ও আকরিক

যেসব খনিজ থেকে সহজে ও সুলভে প্রয়োজনীয় ধাতু নিষ্কাশন করা যায়, তাদের ওই ধাতুর আকরিক বলে । কোনো ধাতুর সব খনিজই খরচ ও সহজ লভ্যতার প্রেক্ষিতে ধাতু নিষ্কাশনের উপযুক্ত নাও হতে পারে । যে কারণে বলা হয়— কোনো ধাতুর আকরিকগুলি এর খনিজ, কিন্তু যেকোনো খনিজই ...