Submitted by arpita pramanik on Tue, 03/05/2013 - 21:53

নাইট্রিক অ্যাসিডের ধর্ম (Properties of Nitric Asid) :

ভৌত ধর্ম :-

[i] বিশুদ্ধ নাইট্রিক অ্যাসিড বর্ণহীন, ধূমায়মান, জলাকর্ষী এবং অম্লস্বাদ বিশিষ্ট তরল ।

[ii] স্বাভাবিক উষ্ণতায় নাইট্রিক অ্যাসিড উদ্বায়ী এবং এর গন্ধ স্বাসরোধী ।

[iii] নাইট্রিক অ্যাসিডের (HNO3) এর আপেক্ষিক গুরুত্ব 1.52 এবং স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) 86°C ও হিমাঙ্ক (Melting point) -42°C ।

[iv] নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) জলে যেকোন অনুপাতে দ্রাব্য ।

রাসায়নিক ধর্ম :

[১] তাপের প্রভাব : লোহিততপ্ত ঝামা পাথরের ওপর ফোঁটা ফোঁটা গাঢ় নাইট্রিক অ্যাসিড ফেললে, নাইট্রিক অ্যাসিড বিয়োজিত হয়ে বাদামী বর্ণের নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গ্যাস, জল এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে । অ্যাসিড দ্রবণ হলুদ বর্ণ হয় । 

    4HNO3 = 2H2O + 4NO2 + O2

[২] জারণ ধর্ম : নাইট্রিক অ্যাসিড তীব্র জারক । গাঢ় HNO3 সহজেই বিশ্লিষ্ট হয়ে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড এবং জায়মান অক্সিজেন উৎপন্ন করে । এই অক্সিজেন জারকের কাজ করে ।  2HNO3 = H2O + 2NO2 + O এভাবে উৎপন্ন NO2 নাইট্রিক অ্যাসিডে দ্রবীভূত হয়ে যায় । এজন্য HNO3 -কে অনেকদিন রেখে দিলে ওর রং হলুদ হয়ে যায় । 80°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে এবং শুষ্ক বায়ু বুদবুদ আকারে পাঠালে অ্যাসিডের হলুদ বর্ণ দূরীভূত হয় ।

অধাতব মৌলের জারণ

[i] জ্বলন্ত কার্বনকে গাঢ় নাইট্রিক অ্যাসিড জারিত করে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে । C + 4HNO3 = CO2 + 4NO2 + 2H2O

[ii] উত্তপ্ত এবং গাঢ় নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) সালফারকে (S) -কে  H2SO4 -এ জারিত করে । S + 6HNO3 = H2SO4 + 6NO2 + 2H2O

[৩] অম্লরাজ (Aqua regia) :- তিনভাগ আয়তনের গাঢ় HCl -এর সঙ্গে একভাগ আয়তনের গাঢ় নাইট্রিক অ্যাসিডের মিশ্রণকে অম্লরাজ বলে । দুটি অ্যাসিডকে এই আয়তন অনুপাতে মেশালে নাইট্রোসিল ক্লোরাইড এবং জায়মান ক্লোরিন উৎপন্ন হয় । এই মিশ্রণ দ্বারা সোনা, প্ল্যাটিনাম প্রভৃতি ধাতু দ্রবীভূত হয় ।

   3HCl + HNO3 = NOCl + 2Cl + 2H2O

   Au + 2HCl + 6Cl = 2HAuCl4

ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া :- ধাতুর সঙ্গে নাইট্রিক অ্যাসিড -এর বিক্রিয়ায় সাধারণত হাইড্রোজেন গ্যাস (H2) নির্গত হয় না । কারণ—  ধাতুর সঙ্গে নাইট্রিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায়, HNO3 অ্যাসিডের কাজ করে এবং সেই সঙ্গে জারকের কাজও করে । অ্যাসিড ধর্মের জন্য তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণিতে H2 -এর ওপরে অবস্থিত (Zn,  Mg,  Fe ইত্যাদি ) ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়ায় নাইট্রেট লবণ ও জায়মান হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয় । উৎপন্ন হাইড্রোজেন, অ্যাসিডের জারণ ধর্মের জন্য জারিত হয়ে জল উৎপন্ন করে এবং অ্যাসিড নিজে H দ্বারা বিজারিত হয়ে গাঢ়ত্ব অনুসারে এবং ধাতু বিশেষে নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড, অ্যামোনিয়া বা নাইট্রোজেনে পরিণত হয় ।

(a) কপারের সঙ্গে বিক্রিয়া :-

[i] গাঢ় ও উষ্ণ HNO3 -এর সঙ্গে ধাতব কপারের বিক্রিয়ায় কিউপ্রিক নাইট্রেট এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন করে ।

     Cu + 4HNO3 = Cu(NO3)2 + 2NO2 + 2H2O

[ii] শীতল এবং মধ্যম গাঢ় (1 : 1) নাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় কিউপ্রিক নাইট্রেট এবং নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন হয় ।

     3Cu + 8HNO3 = 3Cu(NO3)2  +  2NO + 4H2O

[iii] শীতল ও অতি লঘু নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) -এর সঙ্গে কপারের বিক্রিয়ায় কিউপ্রিক নাইট্রেট এবং নাইট্রাস অক্সাইড (Laughing gas) উৎপন্ন হয় ।

     4Cu + 10HNO3 = 4Cu(NO3)2 + N2O + 5H2O

[iv] উত্তপ্ত কপারের ওপর দিয়ে HNO3 বাষ্প চালনা করলে কিউপ্রিক অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন উৎপন্ন হয় ।

     5Cu + 2HNO3 = 5CuO + N2 + H2O

(b) লোহার সঙ্গে বিক্রিয়া :-

[i] শীতল ও লঘু নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) -এর সঙ্গে লোহার বিক্রিয়ায় ফেরাস নাইট্রেট এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উৎপন্ন হয় ।

    4Fe + 10HNO3 = 4Fe(NO3)2 + NH4NO3 + 3H2O

[ii] মধ্যম গাঢ় ও উষ্ণ HNO3 -এর সঙ্গে লোহার বিক্রিয়ায় ফেরিক নাইট্রেট এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎপন্ন হয় ।

     Fe + 4HNO3 = Fe(NO3)3 + NO + 2H2O

[iii] ঠান্ডা এবং অতি গাঢ় HNO3 -এর সঙ্গে বিশুদ্ধ লোহার বিক্রিয়া হয় না । এর কারণ গাঢ় HNO3 -এর সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে লোহার ওপরে আয়রণ অক্সাইডের, খুব সম্ভব ফেরোসোফেরিক অক্সাইডের (Fe3O4) খুব সুক্ষ্ম একটি আস্তরণ পড়ে; এই অক্সাইড HNO3 -এ অদ্রাব্য বলে লোহা আর অ্যাসিডের সংস্পর্শে আসতে পারে না, ফলে বিক্রিয়া বন্ধ হয় । এইরকম লোহাকে নিষ্ক্রিয় লোহা (Passive iron) বলে । নিষ্ক্রিয় অবস্থায় লোহার সাধারণ ধর্ম লোপ পায় ।

(c) ম্যাগনেসিয়াম ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া :-  

[i] ম্যাগনেসিয়াম ধাতুর সঙ্গে শীতল এবং লঘু HNO3 -এর বিক্রিয়ায় ম্যাগনেসিয়াম নাইট্রেট এবং হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয় ।

    Mg + 2HNO3 = Mg(NO3)2 + H2

এই বিক্রিয়া দ্বারা নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) -তে হাইড্রোজেনের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় । 

[ii] শীতল ও মধ্যম গাঢ় অ্যাসিডের সঙ্গে Mg -এর বিক্রিয়ায় ম্যাগনেসিয়াম নাইট্রেট ও নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে ।  

    3Mg + 8HNO3 = 3Mg(NO3)2 + 2NO + 4H2O

*****

Related Items

বিভিন্ন রাশির ব্যবহারিক এবং SI একক

তড়িৎ পরিমাণের ব্যবহারিক এবং SI একক ‘কুলম্ব’ [coulomb] । যে পরিমাণ তড়িৎ সিলভার নাইট্রেট দ্রবণে পাঠালে রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে ক্যাথোডে 0.001118 গ্রাম সিলভার জমা হয়, সেই পরিমাণ তড়িৎকে 1 কুলম্ব [coulomb] ধরা হয় । এর প্রতীক C ।

ওহমের সূত্র (Ohm’s Law)

ওহমের সূত্র থেকে রোধের সংজ্ঞা পাই, কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব-প্রভেদ এবং ওই পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহমাত্রার অনুপাতকে ওই পরিবাহীর রোধ বলে । যেসব পরিবাহী ওহম-সূত্র মেনে চলে তাদের ওহমীয় পরিবাহী বলে । যেমন— তামা, অ্যালুমিনিয়াম, লোহা প্রভৃতি বেশির ...

তড়িচ্চালক বল ও বিভব-প্রভেদ

যে বাহ্যিক কারণ স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে পারে বলবিজ্ঞানে তাকে বল বলা হয় । এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তড়িৎ-কোশের তড়িতাধান চালনা করার ক্ষমতাকে বলা হয় তার 'তড়িচ্চালক বল' । যার প্রভাবে বা যে কারণে তড়িৎ-বর্তনীর কোনো অংশে রাসায়নিক কিংবা অন্য কোনো রকম ...

তড়িৎ-বিভব এবং বিভব-প্রভেদ

কোনো তড়িৎগ্রস্থ বস্তুর তড়িৎ-বিভব বলতে ওই বস্তুর এমন এক তড়িৎ-অবস্থা বোঝায়, যার দ্বারা বোঝা যায় ওই বস্তু অন্য কোনো বস্তুকে তড়িৎ দেবে কিংবা অন্য কোনো বস্তু থেকে তড়িৎ নেবে । অসীম দুরত্ব থেকে একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে ...

তড়িতাধানের প্রবাহ - তড়িৎপ্রবাহ

কোনো পরিবাহী দিয়ে তড়িতাধানের প্রবাহ হলে তাকে তড়িৎপ্রবাহ বলা হয় । কিন্তু আধান ধনাত্মক ও ঋণাত্মক উভয় প্রকার হতে পারে । সুতরাং, কোন প্রকার আধানের প্রবাহ হলে তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তা বোঝা দরকার । প্রচলিত নিয়ম হল, পরিবাহী দিয়ে ধনাত্মক আধানের প্রবাহ হলে ...