Submitted by arpita pramanik on Tue, 04/09/2013 - 11:25

ধাতু সংকর (Alloys) :

দুই বা ততোধিক ধাতু পরস্পর মিশে যে সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উৎপন্ন করে, সেই কঠিন ধাতব পদার্থকে ধাতু সংকর বা সংকর ধাতু বলে ।  যেমন— কপার ও টিনের মিশ্রণে উৎপন্ন কাঁসা হল একটি সংকর ধাতু । অনেক ক্ষেত্রে ধাতু-সংকরে অধাতু থাকতে পারে । যেমন : ইস্পাত হল আয়রন এবং কার্বঁনের সংকর ধাতু ।

সংকর ধাতুর একটি উপাদান পারদ হলে, তাকে পারদ সংকর বা অ্যামালগাম বলে । 

সংকর ধাতুর বৈশিষ্ট্য :-

[i] ধাতু-সংকর হল দুই বা ততোধিক ধাতু অথবা ধাতু এবং অধাতুর সাধারণ মিশ্রণ ।

[ii] ধাতু-সংকর সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব— দুই রকমই হতে পারে । 

[iii] ধাতু-সংকরের ধর্ম তার উপাদান ধাতুগুলি থেকে ভিন্ন হয় ।

[iv] ধাতু-সংকরের কাঠিন্য তার উপাদান মৌলগুলির কাঠিন্য থেকে বেশি হয় এবং ক্ষয়ও কম হয় । যেমন— তামা নরম হলেও তামা ও টিনের মিশ্রণে প্রস্তুত ব্রোঞ্জ তামার চেয়ে অনেক বেশি শক্ত এবং জলবায়ু দ্বারা কম আক্রান্ত হয় । এজন্য লৌহ যুগের আগে তামার পরিবর্তে মানব সভ্যতায় ব্রোঞ্জ ব্যবহৃত হত ।

[v] অনেক ক্ষেত্রে এক বা একাধিক ধাতুর সঙ্গে অধাতুর, যেমন-কার্বন, সিলিকন, ফসফরাস প্রভৃতি মিশ্রিত করে ধাতু-সংকর উৎপন্ন করা হয় ।

[vi] একক ধাতুর চেয়ে ধাতু সংকর অনেক বেশি নমনীয়, ঘাতসহ এবং প্রসার্যমান হয় । 

ধাতু-সংকর প্রস্তুতি :- দুই বা ততোধিক ধাতু নির্দিষ্ট পরিমাণে একসঙ্গে গলিয়ে কিংবা দুই বা ততোধিক ধাতুকে পৃথক পৃথক পাত্রে গলিয়ে, গলিত ধাতুগুলিকে পরিমাণ মতো মিশিয়ে সংকর ধাতু তৈরি করা হয় । যেমন— দস্তা এবং তামা ধাতু পরিমাণ মতো নিয়ে একসঙ্গে গলিয়ে ঠান্ডা করলে পিতল নামে সংকর ধাতু উৎপন্ন হয় । অনুরূপে তামা এবং টিন ধাতুর মিশ্রণে কাঁসা প্রস্তুত হয় ।

ধাতু-সংকরের উপযোগিতা:- এইরকম সংকর ধাতু, একক ধাতু থেকে অনেক সময় ভিন্ন গুণসম্পন্ন হয়; যেমন- তামা (Cu) ও টিনের (Sn) মিশ্রণে কাঁসা (Bell Metal) উৎপন্ন হয় । এতে তামার ক্ষয় অনেক কমে যায় । সেজন্য খাদ্য দ্রব্য এতে রাখলে তামা দ্রবীভূত হয় না, ফলে তামার বিষ ক্রিয়া হয় না ।

[i] ধাতুর কাঠিন্য বাড়াবার জন্য, যেমন— লোহার সংকর ধাতু অ্যালনিকোর কাঠিন্য লোহার চেয়ে বহুগুণ বেশি । অ্যালনিকো (Fe 50% + Al 20% + Ni 20% + CO 10% ) নিজের ভারের 4000 গুণ ভার বহন করতে পারে । আবার তামা নরম ধাতু কিন্তু তামা ও টিনের ধাতু সংকর কাঁসা তামার তুলনায় অনেক বেশি শক্ত । 

ব্যবহার :-

[ii] তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা বাড়ানো বা কমানোর জন্য সংকর ধাতু ব্যবহার করা হয় ।  

[iii] নমনীয়তা, সম্প্রসারণশীলতা, ঘাত-সহনশীলতা, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংকর ধাতুর ব্যবহার হয় ।

[iv] জল প্রভৃতি ক্রিয়া দ্বারা ক্ষয় নিবারণের জন্য, যেমন- আর্দ্র বায়ুতে লোহার মরচে পড়ে, কিন্তু (Cr + Fe) এর সংকর ধাতু স্টেইনলেস স্টিলে মরচে পড়ে না ।

[v] জারণ-ক্রিয়া কামনোর জন্য সংকর ধাতু ব্যবহার করা হয় । আয়রন অ্যাসিড দ্বারা আক্রান্ত হয় কিন্তু লোহার সংকর ধাতু ডুরায়রন অ্যাসিড রাখার পাত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয় । 

[vi] সংকর ধাতুর গলনাঙ্ক উপাদান মৌলগুলির গলনাঙ্কের চেয়ে কম হয় । যেমন : রাংঝালের (Pb + Sn) গলনাঙ্ক সীসা ও টিনের গলনাঙ্ক থেকে কম । 

*****

Related Items

তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার, দুষণ ও সতর্কীকরণ

তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণরূপে একটি নিউক্লীয় ঘটনা । প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গনের ফলে যে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সৃষ্টি হয় তাকে চিকিত্সাবিজ্ঞান, কৃষিকার্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । রোগ নির্ণয় এবং রোগ ...

তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য

বিভিন্ন গবেষণার পর তেজস্ক্রিয়তা সম্বন্ধে নীচের বিষয়গুলি জানা যায় । তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণরূপে একটি নিউক্লীয় ঘটনা [nuclear phenomenon] । এর সঙ্গে নিউক্লিয়াস বহির্ভূত ইলেকট্রনের কোনো সম্পর্ক নেই । যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 83 -এর বেশি হয়, কেবলমাত্র তারাই ...

প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা ও তেজস্ক্রিয় রশ্মিসমূহের ধর্মাবলী

মৌলগুলি থেকে নিঃসৃত এই জাতীয় শক্তিশালী রশ্মিকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বলা হয় । বিভিন্ন মৌল দ্বারা তেজস্ক্রিয় রশ্মি নিঃসরণের এই ঘটনাকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা বলা হয় । যেসব পদার্থ থেকে এই রশ্মি বিকিরিত হয় সেই পদার্থগুলিকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ...

এক্স-রশ্মি ও সাধারণ আলোক-রশ্মির তুলনা

এক্স-রশ্মি এবং আলোক-রশ্মি উভয়েই তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ । শূন্য মাধ্যমে আলোক-রশ্মি এবং এক্স-রশ্মি উভয়ের বেগ (3 x 108 মিটার / সেকেন্ড) । উভয় রশ্মিই সরলরেখায় যায় । বিশেষ ব্যবস্থায় আলোক-রশ্মির মতো এক্স-রশ্মির প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ হয় । উভয় রশ্মিই ফটোগ্রাফিক ...

এক্স-রশ্মির ধর্ম ও এর ব্যবহার

এক্স-রশ্মি এক প্রকার তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ হওয়ায় তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্রের দ্বারা এই রশ্মির গতিপথের কোনো বিচ্যুতি ঘটে না । এক্স-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক কম। এই রশ্মি মানুষের চোখে অনুভূতি জন্মায় না । কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মিকে কঠিন এক্স-রশ্মি ...