দুই তড়িদ্দ্বারবিশিষ্ট তাপীয় আয়ন ভালভ

Submitted by arpita pramanik on Fri, 02/01/2013 - 14:10

দুই তড়িদ্দ্বারবিশিষ্ট তাপীয় আয়ন ভালভ বা ডায়োড ভালভ (Two electrodes thermionic valve or diode valve) :

বিভিন্ন ধরনের তাপীয় আয়ন ভালভ তৈরির কাজে তাপীয় আয়ন নিঃসরণকে ব্যবহার করা হয় । 1904 খ্রিস্টাব্দে স্যার ফ্লেমিং সর্বপ্রথম দুই তড়িদ্দ্বারবিশিষ্ট তাপীয় আয়ন ভালভ উদ্ভাবন করেন । প্রথমে এই ভালভকে ‘ফ্লেমিং ভালভ’ বলা হত । পরে এই ভালভের নাম হয়েছে ডায়োড ভালভ (diode valve) ।

একটি বায়ুশূন্য কাচের কুন্ডে দুটি তড়িদ্দ্বার ঢুকানো থাকে । এর একটি হল টাংস্টেন ফিলামেন্ট (F) এবং অন্যটি একটি চোঙাকৃতি নিকেল বা তামার চোঙ (P) । চোঙ P ফিলামেন্ট F -কে ঘিরে থাকে । এক্ষেত্রে ফিলামেন্ট F -ঋণাত্মক তড়িদ্দ্বার বা ক্যাথোড এবং চোঙ P ধনাত্মক তড়িদ্দ্বার বা অ্যানোডের মতো ক্রিয়া করে । ধনাত্মক তড়িদ্দ্বার P -কে ভালভের প্লেট বলা হয় ।

একটি নিম্ন বিভবের (low tension) ব্যাটারি B1 -এর সাহায্যে ফিলামেন্ট F -কে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উত্তপ্ত করে ভাস্বর করলে ফিলামেন্ট থেকে তাপীয় আয়ন (ইলেকট্রন) নির্গত হয়ে ক্যাথোডের কাছাকাছি অঞ্চলে জমে থাকে, ইলেক্ট্রনের এই সমাবেশকে স্পেশ চার্জ (space charge) বলে । অন্য একটি উচ্চ বিভবের (high tension) ব্যাটারি B2 -এর ধনাত্মক প্রান্ত প্লেট P -এর সঙ্গে এবং ঋণাত্মক প্রান্ত ফিলামেন্ট F -এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় । ফিলামেন্ট F -এর সাপেক্ষে প্লেট P -ধনাত্মক বিভবে থাকলে উত্তপ্ত ফিলামেন্ট থেকে নির্গত ইলেকট্রন আকর্ষিত হয়ে প্লেট P -এর দিকে গতিশীল হয় । ফলে ইলেক্ট্রনের প্রবাহ ভালভের ভিতরে F থেকে P -এর দিকে এবং ভালভের বাইরে P থেকে F -এর দিকে হয় । তখন বলা হয় যে, ভালভ চালু অবস্থায় আছে । প্রচলিত নিয়ম অনুসারে তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ বিপরীত দিকে হবে;  অর্থাৎ ভালভের ভিতরে তড়িৎপ্রবাহ P থেকে F -এর দিকে এবং বহির্বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ F থেকে P -এর দিকে হবে, একেই প্লেট প্রবাহ বলে । প্লেট P -এর সঙ্গে বহির্বর্তনীতে যুক্ত একটি মিলি অ্যাম্মিটার (mA) বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহের মান নির্দেশ করবে ।

ফিলামেন্ট এবং ধনাত্মক বিভবযুক্ত প্লেটের মধ্যে তড়িৎপ্রবাহ সর্বদা একমুখী; অর্থাৎ ভালভের ভিতর দিয়ে শুধুমাত্র ফিলামেন্ট F থেকে P -এর দিকে ইলেক্ট্রনের প্রবাহ ঘটে । ক্যাথোডের সাপেক্ষে প্লেটকে ঋণাত্মক বিভবে রাখলে ইলেকট্রনগুলি বিকর্ষিত হয়, ফলে বিপরীত দিকে ইলেক্ট্রনের কোনো প্রবাহ ঘটতে পারে না । যে কারণে একে ভালভ বলা হয় । ভালভে প্লেট বিভব ও প্লেট প্রবাহের মধ্যে সম্পর্ক ওহমের সূত্র মানে না । পরিবাহী প্রবাহ (A.C.) কে একমুখী প্রবাহে (D.C.) রূপান্তর করতে ডায়োডকে একমুখীকারক (rectifier) হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।  

*****

Comments

Related Items

পর্যায় সারণির বর্ণনা

বিভিন্ন মৌলগুলিকে বিভিন্ন পর্যায়ে কীভাবে সাজানো যায় তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় নীচে দেওয়া হল । প্রথম পর্যায়- এই পর্যায়ে মাত্র দুটি মৌল H এবং He জায়গা পেয়েছে । সাধারণ উষ্ণতায় দুটি মৌলই গ্যাসীয় । এই পর্যায়কে অতি হ্রস্ব পর্যায় বলে । দ্বিতীয় পর্যায়- এই পর্যায়ে মোট আটটি মৌল আছে ...

পর্যায়, শ্রেণি ও উপশ্রেণি

আধুনিক পর্যায়-সারণিতে মেন্ডেলিফ, ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলিকে পর পর কতকগুলি অনুভূমিক সারিতে রাখেন । এর ফলে একই ধর্মের মৌলগুলি এক একটি উলম্ব স্তম্ভের মধ্যে পড়ে যায় । আবার মৌলগুলিকে এইভাবে সাজাবার ফলে যে অনুভূমিক সারিগুলি পাওয়া যায় ...

মেন্ডেলিফের পর্যায়সূত্র ও আধুনিক পর্যায়সূত্র

1869 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ান বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ এবং পৃথকভাবে জার্মান বিজ্ঞানী লোথার মেয়ার মৌলগুলিকে তাদের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজিয়ে প্রায় একই সময়ে পর্যায়-সূত্র প্রকাশ করেন । বিভিন্ন মৌলের ভৌত এবং রাসায়নিক ধর্মগুলি ওদের পারমাণবিক ভর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ...

পর্যায় সারণির ত্রয়ী সূত্র ও অষ্টক সূত্র

জল, বায়ু, আকাশ, মাটি নিয়ে এই যে অসীম বিশ্বপ্রকৃতি - এর মাঝে কত না বৈচিত্র্য, কিন্তু এই বিভিন্ন বৈচিত্র্যের মাঝেও সেই অনাদিকাল থেকেই মানুষ খুঁজতে চেয়েছে ছন্দ খুঁজতে চেয়েছে মিল । পর্যায় সারণিও মানুষের বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টার একটি ফসল । রসায়ন বিজ্ঞানের ক্রমান্বয়ে ...

নিউক্লীয় সংযোজন (Nuclear fusion)

যে নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় কয়েকটি হালকা পরমাণুর নিউক্লিয়াস সংযোজিত হয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ শক্তির উদ্ভব ঘটে, তাকে নিউক্লীয় সংযোজন বলে । 4টি হাইড্রোজেন পরমাণুকে সংযোজিত করে 1টি হিলিয়াম পরমাণুর গঠন নিউক্লীয় ...