Submitted by arpita pramanik on Sun, 04/07/2013 - 19:19

দস্তা বা জিঙ্ক (Zinc) :

দস্তা বা জিঙ্ক -এর সংকেত— Zn,  পারমাণবিক সংখ্যা— 30,     পারমাণবিক ভর— 65.5,     যোজ্যতা— 2,      ঘনত্ব —7.14 গ্রাম / সিসি,      গলনাঙ্ক —419.5°C,     স্ফুটনাঙ্ক —907°C   ।

উৎস : দস্তা বা জিঙ্ক ধাতুকে প্রকৃতির মধ্যে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না । 

জিঙ্কের প্রধান আকরিকগুলি হল :- [i] জিঙ্কাইট (Zincite) ZnO,    [ii] ক্যালামাইন (Calamine) ZnCO3,     [iii] জিঙ্কব্লেন্ড (Zincblend) ZnS ।

জিঙ্কব্লেন্ড (ZnS) আকরিক থেকে ধাতব জিঙ্ক নিষ্কাশন করা হয় । জিঙ্কব্লেন্ড জিঙ্কের প্রধান আকরিক । ভারতের রাজস্থান, বিহার, পাঞ্জাব ও তামিলনাড়ুতে জিঙ্কব্লেন্ড পাওয়া যায় ।   

রাসায়নিক ধর্ম :

[১] বায়ুর সঙ্গে বিক্রিয়া (Reaction with air) :-

[i] শুষ্ক বায়ুর সঙ্গে দস্তা বা জিঙ্ক কোনো বিক্রিয়া করে না ।

[ii] আর্দ্র বায়ুতে দীর্ঘ সময় ধরে রেখে দিলে দস্তার উপর ক্ষারীয় জিঙ্ক কার্বনেটের ( ZnCO3, 3Zn(OH)2 ) সাদা আস্তরণ পড়ে । ফলে দস্তার স্বাভাবিক ধাতব উজ্জ্বলতা নষ্ট হয় ।

[iii] বায়ুতে বা অক্সিজেনের মধ্যে দহন করলে সবুজ আভাযুক্ত সাদা শিখার সঙ্গে জ্বলে এবং সাদা জিঙ্ক অক্সাইডে পরিণত হয় । উৎপন্ন জিঙ্ক অক্সাইড বাষ্প, শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পশমের আকারে জমা হয়, তাই একে দার্শনিকের উল বা জিঙ্ক হোয়াইট বলে ।

[২] জলের সঙ্গে বিক্রিয়া (Reaction with water) :-

[i] সাধারণ উষ্ণতায় বিশুদ্ধ জিঙ্কের উপর জলের কোনো বিক্রিয়া হয় না ।

{ii] লোহিত তপ্ত জিঙ্কের ওপর দিয়ে স্টিম চালনা করলে জিঙ্ক অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয় ।

যথা-  Zn + H2O = ZnO + H2

[৩] ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া (Reaction with alkalis) :-

কস্টিক সোডা বা কস্টিক পটাশের গাঢ় দ্রবণের সঙ্গে জিঙ্ক উত্তপ্ত করলে সোডিয়াম জিঙ্কেট বা পটাশিয়াম জিঙ্কেট এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় ।

   Zn + 2NaOH = Na2ZnO2 (সোডিয়াম জিঙ্কেট) +H2↑,    Zn + 2KOH = K2ZnO2 (পটাশিয়াম জিঙ্কেট) + H2

জিঙ্ক অ্যাসিড এবং ক্ষার উভয়ের সঙ্গে বিক্রিয়া করে

   Zn + H2SO4 (লঘু) = ZnSO4 + H2↑  ;    Zn + 2HCl (লঘু) = ZnCl2 + H2

জিঙ্কের ব্যবহার (Use of Zinc) :

[i] লৌহ দ্রব্যের উপর জিঙ্কের প্রলেপ দিয়ে (গ্যালভানাইজেশন) মরচে নিবারণ করা হয় ।

[ii] জিঙ্ক হোয়াইট নামক সাদা রং প্রস্তুতিতে জিঙ্কের ব্যবহার হয় ।

[iii] পরীক্ষাগারে H2 গ্যাস উৎপাদনে এবং বিজারকরূপে জিঙ্কের ব্যবহার হয় ।

[iv] বৈদ্যুতিক সেল এবং ড্রাই সেল প্রস্তুতিতে জিঙ্কের ব্যবহার হয় ।

[v] সিক্ত পদ্ধতিতে সিলভার এবং গোল্ড ধাতুর নিষ্কাশনে জিঙ্কের ব্যবহার হয় ।

[vi] কতকগুলি অতি প্রয়োজনীয় সংকর ধাতু প্রস্তুতিতে জিঙ্কের ব্যবহার হয়, যেমন- জার্মান সিলভার (50% Cu + 30% Zn + 20% Ni), বাসনপত্র, মুদ্রা, ফুলদানি প্রভৃতি প্রস্তুতিতে এবং পিতল (30% Zn + 70% Cu), বাসনপত্র, জলের কল, টেলিস্কোপ প্রস্তুতিতে জিঙ্কের ব্যবহার হয় । ইলেকট্রন (5% Zn + 95% Mg), বিমানের যন্ত্রাংশ প্রস্তুতিতে জিঙ্কের ব্যবহার হয় । ডাচ মেটাল (20% Zn + 80% Cu), যন্ত্রপাতি প্রস্তুতিতে জিঙ্কের ব্যবহার হয় । গান মেটাল (10% Zn + 85% Cu + 5% Sn), বন্দুক ও সামরিক যন্ত্রপাতি প্রস্তুতিতে জিঙ্কের ব্যবহার হয় । ডেল্টা মেটাল (40% Zn + 55% Cu + 5% Fe & Mn), জাহাজের প্রপেলার, বিয়ারিং, ভালব প্রভৃতি প্রস্তুতিতে জিঙ্কের ব্যবহার হয় ।

দস্তার পাত্রে কিম্বা দস্তার প্রলেপ দেওয়া পাত্রে খাদ্যদ্রব্য রাখা উচিত নয় । কারণ সেক্ষেত্রে দস্তার সঙ্গে খাদ্য দ্রব্যের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন দস্তা ঘটিত লবণ আমাদের শরীরে প্রবেশ করে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে ।

*****

Related Items

তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার, দুষণ ও সতর্কীকরণ

তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণরূপে একটি নিউক্লীয় ঘটনা । প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গনের ফলে যে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সৃষ্টি হয় তাকে চিকিত্সাবিজ্ঞান, কৃষিকার্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । রোগ নির্ণয় এবং রোগ ...

তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য

বিভিন্ন গবেষণার পর তেজস্ক্রিয়তা সম্বন্ধে নীচের বিষয়গুলি জানা যায় । তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণরূপে একটি নিউক্লীয় ঘটনা [nuclear phenomenon] । এর সঙ্গে নিউক্লিয়াস বহির্ভূত ইলেকট্রনের কোনো সম্পর্ক নেই । যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 83 -এর বেশি হয়, কেবলমাত্র তারাই ...

প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা ও তেজস্ক্রিয় রশ্মিসমূহের ধর্মাবলী

মৌলগুলি থেকে নিঃসৃত এই জাতীয় শক্তিশালী রশ্মিকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বলা হয় । বিভিন্ন মৌল দ্বারা তেজস্ক্রিয় রশ্মি নিঃসরণের এই ঘটনাকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা বলা হয় । যেসব পদার্থ থেকে এই রশ্মি বিকিরিত হয় সেই পদার্থগুলিকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ...

এক্স-রশ্মি ও সাধারণ আলোক-রশ্মির তুলনা

এক্স-রশ্মি এবং আলোক-রশ্মি উভয়েই তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ । শূন্য মাধ্যমে আলোক-রশ্মি এবং এক্স-রশ্মি উভয়ের বেগ (3 x 108 মিটার / সেকেন্ড) । উভয় রশ্মিই সরলরেখায় যায় । বিশেষ ব্যবস্থায় আলোক-রশ্মির মতো এক্স-রশ্মির প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ হয় । উভয় রশ্মিই ফটোগ্রাফিক ...

এক্স-রশ্মির ধর্ম ও এর ব্যবহার

এক্স-রশ্মি এক প্রকার তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ হওয়ায় তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্রের দ্বারা এই রশ্মির গতিপথের কোনো বিচ্যুতি ঘটে না । এক্স-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক কম। এই রশ্মি মানুষের চোখে অনুভূতি জন্মায় না । কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মিকে কঠিন এক্স-রশ্মি ...