তড়িৎ-বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ

Submitted by arpita pramanik on Tue, 02/19/2013 - 22:45

তড়িৎ-বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ (Electrolytes and Non-Electrolytes) :

তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ (Electrolytes) :

সংজ্ঞা :- যেসব পদার্থ জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়ে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে নিজেরা রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয়, সেই সব পদার্থকে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে ।

[i] অ্যাসিড :- সালফিউরিক, নাইট্রিক, হাইড্রোক্লোরিক প্রভৃতি ।

[ii] ক্ষার :- কস্টিক সোডা, কস্টিক পটাশ ইত্যাদি ।

[iii] লবণ :- সোডিয়াম ক্লোরাইড, জিঙ্ক সালফেট, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি । 

এই জাতীয় পদার্থগুলি গলিত অবস্থায় বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহন করার সঙ্গে সঙ্গে পদার্থগুলির রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয় । এইগুলি সব তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ

তড়িৎ-বিশ্লেষণ (Electrolysis) : যে পদ্ধতিতে উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় কিংবা বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে ওই পদার্থের রাসায়নিক বিয়োজন ঘটে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয়, সেই পদ্ধতিকে তড়িৎ বিশ্লেষণ বলে । তড়িৎ বিশ্লেষণে তড়িৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।

আয়ন (Ions) : জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের অণুগুলি বেশ কিছু সংখ্যক বিয়োজিত হয়ে ধনাত্মক (positive) এবং ঋণাত্মক (negative) তড়িৎগ্রস্থ কণায় পরিণত হয় । এই তড়িৎগ্রস্থ কণাগুলিকে আয়ন বলে ।

ক্যাটায়ন (Cations) : ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্থ আয়নগুলিকে ক্যাটায়ান বলে । যেমন— H+,  Ca2+,  Al3+, NH4+  ইত্যাদি ।

অ্যানায়ন (Anions) : ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্থ আয়নগুলিকে অ্যানায়ন বলে । যেমন—  Cl- ,  NO3- , SO42-,  PO43-  ইত্যাদি ।

ভোল্টামিটার (Voltameter) :- কোনো তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের ভিতর দিয়ে তড়িৎ চালনা করার সময় পদার্থটিকে জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় একটি পাত্রের মধ্য রেখে তড়িৎ-বিশ্লেষণ করা হয় । এই পাত্রটিকে ভোল্টামিটার বলে ।

তড়িদ্দ্বার (Electrodes) : ভোল্টামিটারে রাখা গলিত বা জলে দ্রবীভূত তড়িৎ-বিশ্লেষ্যের মধ্যে দুটি সুপরিবাহী ধাতব পাতকে আংশিক ডুবিয়ে রাখা হয় এবং এদের সাহায্যে তড়িৎ-বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালানো হয় । এই পাত দুটিকে তড়িদ্দ্বার বলে । প্ল্যাটিনাম, নিকেল, কপার, আয়রন, গ্যাস কার্বন, গ্রাফাইট প্রভৃতি তড়িদ্দ্বাররূপে ব্যবহৃত হয় ।

অ্যানোড : যে তড়িদ্দ্বারের সঙ্গে ব্যাটারির ধনাত্মক মেরু যুক্ত থাকে, সেই তড়িদ্দ্বারটিকে অ্যানোড বলে ।

ক্যাথোড : যে তড়িদ্দ্বারের সঙ্গে ব্যাটারির ঋণাত্মক মেরু যুক্ত থাকে, সেই তড়িদ্দ্বারটিকে ক্যাথোড বলে । ব্যাটারির সঙ্গে তড়িৎ পরিবহনে সক্ষম পদার্থটিকে যোগ করলে তড়িৎ প্রবাহ অ্যানোডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-বিশ্লেষ্যে প্রবেশ করে ক্যাথোডের মধ্য দিয়ে ব্যাটারিতে ফিরে যায় । তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চলার সঙ্গে সঙ্গে ওর রাসায়নিক বিয়োজন ঘটে; যেমন— প্ল্যাটিনাম তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে গলিত NaCl -এর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ করা হলে, ক্যাথোডে সোডিয়াম ও অ্যানোডে ক্লোরিন উৎপন্ন হয় ।

তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ (Non-Electrolytes) : যে সমস্ত পদার্থগুলি গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয় না এবং তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না, তাদের তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে । যেমন— চিনির দ্রবণ, গ্লিসারিন, পেট্রোল, কেরোসিন, ইথার, বেঞ্জিন, অ্যালকোহল তড়িৎ পরিবহন করে না । এরা সব তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ । তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নিত হয় না, তাই তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না ।

*****

Comments

Related Items

তড়িৎ-বিশ্লেষণের প্রয়োগ

তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুগুলি যেমন - সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুগুলিকে তাদের আকরিক থেকে নিষ্কাশিত করা হয় । আবার কতকগুলি ধাতু যেমন - কপার, জিঙ্ক, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির তড়িৎ-বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশোধন করা হয় । ...

কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ

কপার সালফেট জলে আয়নিত হয়ে কপার (+) এবং সালফেট (-) আয়ন উত্পন্ন করে । সুতরাং, জলীয় দ্রবণে চার প্রকার আয়ন থাকে, দুধরনের ক্যাটায়ান H (+) ও Cu (+) এবং দু ধরনের অ্যানায়ন OH (-) ও সালফেট (-) ।

জলের তড়িৎ-বিশ্লেষণ

বিশুদ্ধ জল তড়িতের কুপরিবাহী, কিন্তু সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার জলে মেশালে ওই জল তড়িতের সুপরিবাহী হয় । এর কারণ হল বিশুদ্ধ জলে খুব কম সংখ্যক অণু H+ এবং OH- আয়নে বিশ্লেষিত অবস্থায় থাকে । ওই জলে সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার যোগ করলে এদের আয়ন ...

তড়িৎ-পরিবাহী এবং তড়িৎ-অপরিবাহী

যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহিত করলে তা তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম হয়, তাদের তড়িৎ-পরিবাহী পদার্থ বলে । যেমন; সোনা, রুপো, তামা, প্রভৃতি ধাতু, গ্রাফাইট, সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণ ইত্যাদি । তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম এমন পদার্থগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় --

জারণ ও বিজারণ একসঙ্গে ঘটে

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জারণ ও বিজারণ প্রক্রিয়া একই সঙ্গে ঘটে । অর্থাৎ, জারণ ও বিজারণ ক্রিয়া পরস্পরের পরিপূরক । কোনো বিক্রিয়ায় জারণ-ক্রিয়া ঘটলেই বিজারণ ক্রিয়াও ঘটবে । এই রকম রাসায়নিক বিক্রিয়াকে রেডক্স বিক্রিয়া বলা হয় । ...