Submitted by arpita pramanik on Mon, 04/08/2013 - 18:47

তামা বা কপার (Copper) :

এর সংকেত - Cu,  পারমাণবিক সংখ্যা - 29,   পারমাণবিক ভর - 63.5,   যোজ্যতা - 1 এবং 2,    ঘনত্ব - 8.9 গ্রাম/সিসি,    গলনাঙ্ক - 1083°C,   স্ফুটনাঙ্ক - 2500°C ।

উৎস:- অতি প্রাচীন কাল থেকে তামা বা কপারের ব্যবহার চলে আসছে । প্রকৃতিতে মৌল অবস্থায় খুব সামান্য পরিমাণ কপার পাওয়া যায় । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কপারকে বিভিন্ন যৌগরূপে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় । কানাডার লেক সুপিরিয়রের কাছে এবং সাইবেরিয়ার পর্বতে মুক্ত অবস্থায় তামা বা কপার পাওয়া যায় । ভারতে সিকিম, ভুটান, রাজস্থান, বিহারের সিংভূম জেলায় ও পাঞ্জাবে কপারের আকরিক পাওয়া যায় ।

কপারের প্রধান আকরিকগুলি হল : [i] কপার গ্লানস (Copper glance) Cu2S,   [ii] কপার পাইরাইটিস বা চ্যালকোপাইরাইটিস (Copper Pyrites), Cu2S, Fe2S3   [iii] ম্যালাকাইট (Malakite) CuCO3, Cu(OH)2,  [iv] আজুরাইট (Azurite) 2CuCO3, Cu(OH)2

কপারের রাসায়নিক ধর্ম :

[১] বায়ুর সঙ্গে বিক্রিয়া (Reaction with air) :-

(ক) সাধারণ উষ্ণতায় শুষ্ক বায়ুর সঙ্গে তামার কোনো বিক্রিয়া করে না ।

(খ) আর্দ্র বায়ুতে তামা রেখে দিলে তার উপর ধীরে ধীরে অক্সাইড এবং সালফাইডের কালো রঙের আস্তরণ পড়ে । দীর্ঘদিন আর্দ্র বায়ুতে রাখলে ওই আস্তরণের বর্ণ ক্রমে ক্রমে সবুজ হয়, কারণ তখন ক্ষারীয় কপার সালফেট (CuSO4,  2Cu(OH)2) -এ পরিণত হয় ।

(গ) কপারকে বায়ুতে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করলে, বায়ুর অক্সিজেনের সঙ্গে কপারের বিক্রিয়ায় কালো রঙের কিউপ্রিক অক্সাইড (CuO) এবং লাল রঙের কিউপ্রাস অক্সাইড (Cu2O) উৎপন্ন হয় । যথা : 2Cu + O2 = 2CuO (কিউপ্রিক অক্সাইড),  4Cu + O2 = 2Cu2O (কিউপ্রাস অক্সাইড) ।

[২] জলের সঙ্গে বিক্রিয়া (Reaction with water):- কোনো অবস্থাতেই কপারের সঙ্গে জল বা স্টিমের বিক্রিয়া হয় না ।

[৩] ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া (Reaction with alkalis):- কপারের সঙ্গে ক্ষারের বিক্রিয়া হয় না ।

কপারের ব্যবহার :

[i] বৈদ্যুতিক তার, তড়িৎ কোশ, বৈদ্যুতিক মোটর, ডায়নামো প্রভৃতিতে কপার ব্যবহার করা হয় ।

[ii] তড়িৎ-লেপন, তড়িৎদ্বার, টাইপ প্রভৃতিতে প্রচুর কপারের ব্যবহার হয় ।

[iii] রন্ধনের পাত্র, ক্যালোরিমিটার, বয়লারের বিভিন্ন অংশ স্টিম পাইপ এবং মুদ্রা প্রভৃতিতে কপার ব্যবহৃত হয় ।

[iv] বিভিন্ন রকম প্রয়োজনীয় সংকর ধাতু প্রস্তুতিতে কপার ব্যবহার করা হয় । ব্রাস (Cu + Zn)— বাসন, টেলিস্কোপ, পাইপ, ব্যারোমিটার প্রস্তুতিতে ;   ব্রোঞ্জ (Cu + Sn)— মুদ্রা, মূর্তি, যন্ত্রের অংশ প্রস্তুতিতে ; জার্মান সিলভার (Cu + Zn + Ni)— বাসন, ফুলদানি, অলংকার প্রস্তুতিতে; বেল মেটাল (Cu + Sn)— বাসনপত্র, ঘন্টা প্রভৃতি প্রস্তুতিতে কপার ব্যবহৃত হয় ।

বৈদ্যুতিক তার হিসাবে তামা এবং রান্নার বাসনপত্র নির্মাণে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়— কারণ, 

বিদ্যুতের সুপরিবাহী বলে তামাকে বৈদ্যুতিক তার হিসাবে ব্যবহার করা হয় । অ্যালুমিনিয়াম তাপের সুপরিবাহী ও হালকা ধাতু । তাই রান্নার বাসনপত্র নির্মাণে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয় ।

*****

Related Items

রাসায়নিক বন্ধনী

দুই বা ততোধিক মৌলের রাসায়নিক সংযোগে যৌগ গঠিত হয় । রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মৌলের পরমাণুগুলিই অংশগ্রহণ করে । সকল যৌগের রাসায়নিক সংস্থিতি সুনির্দিষ্ট এবং এতে বিভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলি সরল অনুপাতে যুক্ত থাকে । অপর মৌলের সঙ্গে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠনের ...

আধুনিক দীর্ঘ পর্যায়-সারণি

IUPAC - এর সুপারিশ অনুযায়ী উপশ্রেণি A এবং উপশ্রেণি B -এর অবস্থান নিয়ে পূর্বে যে মতবাদ ছিল তা দূর করে দীর্ঘ পর্যায়-সারণির আধুনিক রূপটি প্রকাশ করা হয়েছে । আধুনিক দীর্ঘ পর্যায়-সারণিতে ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক সংখ্যা এবং ইলেকট্রন বিন্যাস অনুসারে মৌলগুলিকে মোট 7টি ...

মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণিতে কতকগুলি মৌলের অবস্থান

মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণি ত্রুটি মুক্ত নয় । তবুও এর অবদান অনেক । মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণিতে H2 -এর স্থান সুনির্দিষ্ট নয় । হাইড্রোজেন একযোজী এবং একদিকে যেমন IA -শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত Li, Na, K....ইত্যাদি ক্ষার ধাতুগুলির মতো ব্যবহার করে, আবার অন্যদিকে VIIB-শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ...

পর্যায় এবং শ্রেণিতে মৌলসমূহের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা এবং তাদের পরিবর্তনশীলতা

পর্যায় এবং শ্রেণিতে মৌলসমূহের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা এবং তাদের পরিবর্তনশীলতা

Periodic properties and their variation inPeriods and Groups

পর্যায়-সারণিতে একই শ্রেণির একই উপশ্রেণিভুক্ত মৌলদের ধর্মের মিল এবং অমিল দেখা যায় যেমন— হাইড্রোজেন ছাড়া উপশ্রেণি IA -এর সব মৌলগুলির উচ্চ পরা-তড়

পর্যায় সারণির বর্ণনা

বিভিন্ন মৌলগুলিকে বিভিন্ন পর্যায়ে কীভাবে সাজানো যায় তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় নীচে দেওয়া হল । প্রথম পর্যায়- এই পর্যায়ে মাত্র দুটি মৌল H এবং He জায়গা পেয়েছে । সাধারণ উষ্ণতায় দুটি মৌলই গ্যাসীয় । এই পর্যায়কে অতি হ্রস্ব পর্যায় বলে । দ্বিতীয় পর্যায়- এই পর্যায়ে মোট আটটি মৌল আছে ...