জারণ বিজারণের ইলেক্ট্রনীয় মতবাদ

Submitted by arpita pramanik on Sat, 02/16/2013 - 08:46

জারণ বিজারণের ইলেক্ট্রনীয় মতবাদ (Electronic theory of oxidation and reduction) :

ভুমিকা (Introduction) :- জারণ ও বিজারণ রসায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া । সাধারণত কোনো মৌলে বা যৌগে অক্সিজেনের সংযুক্তি বা কোনো যৌগ থেকে হাইড্রোজেনের বিযুক্তিকে জারণ এবং কোনো মৌলে বা যৌগে হাইড্রোজেনের সংযুক্তি বা কোনো যৌগ থেকে অক্সিজেনের বিযুক্তিকে বিজারণ বলা হয় ।

ইলেকট্রনীয় মতবাদ (Electronic theory) :- পরমাণু সমূহের রাসায়নিক বিক্রিয়াকালে বিক্রিয়ায় অংশ নেয় এদের কিছু ইলেকট্রন । জারণ ও বিজারণও যেহেতু এই ধরনের এক প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়া; সুতরাং, স্বাভাবিকভাবেই এই সিদ্ধান্তে আসা যায়, জারণ ও বিজারণ বিক্রিয়াতে ক্রিয়াশীল পদার্থের ইলেকট্রনগুলিই অংশ নেয় । এই ধারণার ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে জারণ-বিজারণ সম্পর্কিত ইলেকট্রনীয় মতবাদ ।

জারণ (Oxidation) :

সংজ্ঞা :- যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো অণু, পরমাণু বা আয়ন এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে তাকে জারণ বলে । জারণের অর্থ ইলেকট্রন ত্যাগ । যেমন— Na পরমাণু বাইরের কক্ষের একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Na+ আয়নে পরিণত হয় । এখানে Na পরমাণুটি একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করায় ওর জারণ হল (এক একক পরাচার্জবাহী সোডিয়াম আয়ন হয়েছে) । Na - le → Na+ (জারণ) ।

বিজারণ (reduction) :

সংজ্ঞা :- যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো অণু, পরমাণু বা আয়ন এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাকে বিজারণ বলে । বিজারণের অর্থ ইলেকট্রন গ্রহণ । যেমন— Cu++ আয়ন 2টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে  Cu -এ পরিণত হয়, এখানে Cu++ আয়নের বিজারণ হল ।  Cu++ + 2e → (ধাতব) Cu (বিজারণ) ।

জারণ সংখ্যা (Oxidation Number) :- কোনো যৌগের মধ্যে উপাদান মৌলগুলি জারণ বিজারণের যে বিশেষ স্তরে অবস্থান করে, তা যে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যায়, সেই সংখ্যাকে জারণ সংখ্যা বলে । যেমন— Cu2+,  Na1+,  S2-  ইত্যাদি আয়নগুলির জারণসংখ্যা হল যথাক্রমে  +2, +1,  -2 ইত্যাদি ।

জারক পদার্থ ও বিজারক পদার্থ (Oxidising and Reducing agents)

জারক পদার্থ (Oxidising agents) :- যে পদার্থ রাসায়নিক বিক্রিয়া কালে অন্য পদার্থকে জারিত করে নিজে বিজারিত হয় তাকে জারক পদার্থ বলে । ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুযায়ী জারক দ্রব্য ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিজে বিজারিত হয় এবং অপরকে জারিত করে । বিক্রিয়ার ফলে জারক দ্রব্যের জারণ সংখ্যা হ্রাস পায় । যেমন— CuO এবং H2 -এর বিক্রিয়াটিতে জারক দ্রব্য CuO, কারণ CuO হাইড্রোজেনকে জলে জারিত করেছে এবং নিজে বিজারিত হচ্ছে ধাতব কপারে । CuO + H2 → Cu ↓+ H2O 

বিজারক পদার্থ (Reducing agents) :-  রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় যে পদার্থ অন্য পদার্থকে বিজারিত করে নিজে জারিত হয় তাকে বিজারক পদার্থ বলে । ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুযায়ী, বিজারক পদার্থ ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিজে জারিত হয় এবং অপরকে বিজারিত করে, তার ফলে বিজারক দ্রব্যের জারণ সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । যেমন— CuO এবং H2 -এর বিক্রিয়ায় বিজারক দ্রব্য H2 ;  কারণ H2,  CuO -কে বিজারিত করে ধাতব কপারে এবং নিজে জারিত হয় জলে ।

*****

Related Items

বাড়িতে বিদ্যুৎ-লাইন ব্যবস্থা

কোনো কারণে বাড়িতে বিদ্যুৎ লাইনে নিরাপদ সীমার অতিরিক্ত তড়িৎপ্রবাহ চালু হলে আগুন লেগে বিপদ ঘটতে পারে । বাড়িতে তড়িৎ বর্তনীর লাইনে নিরাপত্তার জন্য কম গলনাঙ্ক বিশিষ্ট কোনোও সংকর ধাতুর তৈরি এবং বেশি রোধের যে সরু তার শ্রেণি সমবায়ে লাইন তারের সঙ্গে সংযুক্ত করা ...

তড়িৎ-ক্ষমতা এবং শক্তি

কার্য করবার হারকে ক্ষমতা বলে । তড়িৎ-ক্ষমতা বলতে তড়িৎপ্রবাহের কার্য করবার হার-কে বোঝায় । বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ক্ষমতা ওয়াট [watt] নামক এককে প্রকাশ করা হয় । যে বৈদ্যুতিক যন্ত্র এক সেকেন্ডে [second] এক জুল [joule] কার্য করতে পারে, তার ক্ষমতাকে 1 ওয়াট [watt] বলা হয় । ...

তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফল ও তার প্রয়োগ

1841 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী জেমস প্রেসকট জুল সর্বপ্রথম পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহের ফলে তাপের সৃষ্টি সম্পর্কে তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন, এই সূত্রগুলিকে জুলের সূত্র বলা হয় । কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে পরিবাহী উত্তপ্ত হয়ে ওঠে— একেই তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফল বলে ...

রোধের সমবায় এবং তুল্যাঙ্ক রোধ

ব্যবহারিক ক্ষেত্রে একাধিক রোধকে একত্রে যুক্ত করে মোট রোধের মান বাড়ানো বা কমানোর প্রয়োজন হয় । একে রোধের সমবায় বলা হয় । কোনো তড়িৎ-বর্তনীর দুই প্রান্তে একাধিক রোধ যুক্ত থাকলে বর্তনীতে যে প্রবাহ হয়, রোধগুলির পরিবর্তে ওই দুই প্রান্তের সঙ্গে একটি মাত্র রোধ যোগ ...

রোধাঙ্ক (Resistivity)

একই প্রস্থচ্ছে এবং একই দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট বিভিন্ন তারের রোধ তারের উপাদানের ওপর নির্ভর করে । যেমন, একই প্রস্থচ্ছেদ এবং একই দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তামার ও রুপোর তারের রোধ কম । কোনো পদার্থের একক দৈর্ঘ্য এবং একক প্রস্থচ্ছেদবিশিষ্ট তারের রোধকে রোধাঙ্ক বলে । আবার একক প্রস্থচ্ছেদ ...