চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া

Submitted by arpita pramanik on Sun, 01/27/2013 - 22:08

চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া (Action of electric current on magnet) :

কোনো পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে তার চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় । ওই তারের কাছে একটি  চুম্বক শলাকা থাকলে শলাকাটি বিক্ষিপ্ত হয় । একে চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া বলে । 1820 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ওরস্টেড সর্বপ্রথম চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের এই ফল লক্ষ করেন ।

ওরস্টেডের পরীক্ষা : একটি পরিবাহী তার XY একটি ফ্রেমে আটকানো আছে । তারটির নীচে একটি চুম্বক শলাকা NS রাখা আছে । শলাকাটি অনুভূমিক তলে নিজের অক্ষের চারিদিকে বাধাহীনভাবে ঘুরতে পারে । অতএব মুক্ত অবস্থায় শলাকাটি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর থাকবে । ফ্রেমটি ঘুরিয়ে XY তারকে শলাকার সমান্তরাল করা হল । ছবিতে ডট ডট রেখা দিয়ে ওই অবস্থান দেখানো হয়েছে ।

পর্যবেক্ষণ : তারটির মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে সঙ্গে সঙ্গে শলাকাটি বিক্ষিপ্ত হয় । যদি তারটি শলাকার নীচু দিয়ে যায় তবে শলাকার বিক্ষেপ উল্টো দিকে হবে । অথবা তড়িৎ-প্রবাহের অভিমুখ X থেকে Y -এর দিকে না করে উল্টে Y থেকে X -এর দিকে করলে শলাকার বিক্ষেপ উল্টো দিকে হবে । শলাকার বিভিন্ন অবস্থা পাশের চিত্রে (i) অবস্থান,  (ii) অবস্থান,  (iii) অবস্থান দেখানো হয়েছে যখন পরিবাহী চুম্বকের ওপরে রাখা হয় এবং  (iv) অবস্থান, (v) অবস্থান, (vi) অবস্থান দেখানো হয়েছে যখন পরিবাহী চুম্বকের নীচে রাখা হয় । আবার, তারকে যদি পূর্ব-পশ্চিমে অর্থাৎ, চুম্বক শলাকার লক্ষের লম্বভাবে রেখে প্রবাহ পাঠানো হয়, তাহলে শলাকার কোনো বিক্ষেপ হবে না

তারের অবস্থান, তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ ও শলাকার উত্তর মেরুর বিক্ষেপের অভিমুখ সম্পর্কে ওরস্টেডের পরীক্ষার ফল নীচের তালিকায় দেখানো হল ।

পরিবাহী তারের অবস্থান তড়িৎ-প্রবাহের অভিমুখ   শলাকার উত্তর মেরুর বিক্ষেপের
১. চুম্বক শলাকার ওপরে দক্ষিণ থেকে উত্তরে  A → B পশ্চিমদিকে
২. চুম্বক শলাকার ওপরে উত্তর থেকে দক্ষিণে  B → A পূর্বদিকে
৩. চুম্বক শলাকার নীচে  দক্ষিণ থেকে উত্তরে  A → B পূর্বদিকে
৪. চুম্বক শলাকার নীচে উত্তর থেকে দক্ষিণে  B → A পশ্চিমদিকে

৫. চুম্বক শলাকার ওপরে বা নীচে

পূর্ব থেকে পশ্চিমে বা পশ্চিম থেকে পূর্বে বিক্ষেপ নেই

 

চুম্বক শলাকার বিক্ষেপের অভিমুখ নির্ণয়ের নিয়ম (Rule for the direction of deflection of a magnetic needle) : তড়িৎপ্রবাহের ফলে চুম্বক শলাকার বিক্ষেপের অভিমুখ কোন দিকে হবে অ্যাম্পিয়ারের সন্তরণ নিয়ম দ্বারা তা প্রকাশ করা যায় ।

অ্যাম্পিয়ারের সন্তরণ নিয়ম (Ampere’s swimming rule) : একজন লোক তড়িৎবাহী তার বরাবর তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখে দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে এমনভাবে সাঁতার কেটে যাচ্ছে যেন তার মুখ সর্বদা চুম্বকের দিকে আছে । এই অবস্থায়, লোকটির বামহাত যেদিকে ছাড়ানো থাকে, সেই দিকেই চুম্বক শলাকার উত্তর মেরুটি বিক্ষিপ্ত হবে, অর্থাৎ দক্ষিণ মেরুটি ওই ব্যক্তির ডানহাতের দিকে বিক্ষিপ্ত হবে ।

*****

Comments

Related Items

তড়িৎ-বিশ্লেষণের প্রয়োগ

তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুগুলি যেমন - সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুগুলিকে তাদের আকরিক থেকে নিষ্কাশিত করা হয় । আবার কতকগুলি ধাতু যেমন - কপার, জিঙ্ক, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির তড়িৎ-বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশোধন করা হয় । ...

কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ

কপার সালফেট জলে আয়নিত হয়ে কপার (+) এবং সালফেট (-) আয়ন উত্পন্ন করে । সুতরাং, জলীয় দ্রবণে চার প্রকার আয়ন থাকে, দুধরনের ক্যাটায়ান H (+) ও Cu (+) এবং দু ধরনের অ্যানায়ন OH (-) ও সালফেট (-) ।

জলের তড়িৎ-বিশ্লেষণ

বিশুদ্ধ জল তড়িতের কুপরিবাহী, কিন্তু সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার জলে মেশালে ওই জল তড়িতের সুপরিবাহী হয় । এর কারণ হল বিশুদ্ধ জলে খুব কম সংখ্যক অণু H+ এবং OH- আয়নে বিশ্লেষিত অবস্থায় থাকে । ওই জলে সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার যোগ করলে এদের আয়ন ...

তড়িৎ-বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ

যেসব পদার্থ জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়ে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে নিজেরা রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উত্পন্ন হয়, সেই সব পদার্থকে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে ।

তড়িৎ-পরিবাহী এবং তড়িৎ-অপরিবাহী

যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহিত করলে তা তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম হয়, তাদের তড়িৎ-পরিবাহী পদার্থ বলে । যেমন; সোনা, রুপো, তামা, প্রভৃতি ধাতু, গ্রাফাইট, সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণ ইত্যাদি । তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম এমন পদার্থগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় --