এক্স-রশ্মির ধর্ম ও এর ব্যবহার

Submitted by arpita pramanik on Sat, 02/02/2013 - 09:08

এক্স-রশ্মির ধর্ম (Properties of X-rays) :

[i] এক্স-রশ্মি এক প্রকার তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ হওয়ায় তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্রের দ্বারা এই রশ্মির গতিপথের কোনো বিচ্যুতি ঘটে না ।  

[ii] এক্স-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক কম (10-8 মি - 10-11মি) । এই রশ্মি মানুষের চোখে অনুভূতি জন্মায় না । এক্স-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্য-আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের [tex] \frac {1}{1000}[/tex] অংশ । কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মিকে কঠিন এক্স-রশ্মি (Hard x-rays) এবং বেশি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মিকে কোমল এক্স-রশ্মি (Soft x-rays) বলে ।

[iii] এক্স-রশ্মির ভেদন ক্ষমতা আছে । এক্স-রশ্মি উত্পাদক নলের অ্যানোড ও ক্যাথোডের মধ্যে বিভব-প্রভেদ বাড়লে এই রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কমে এবং ভেদন ক্ষমতা বাড়ে । কঠিন এক্স-রশ্মির ভেদন ক্ষমতা কোমল এক্স-রশ্মির ভেদন ক্ষমতার চেয়ে বেশি ।

[iv] এই রশ্মি সরলরেখায় চলে । শূন্য মাধ্যমে এর গতিবেগ আলোর গতিবেগের (3 x 108 m/s) সমান ।

[v] ফটোগ্রাফিক প্লেটের উপর এক্স-রশ্মির প্রতিক্রিয়া হয় ।

[vi] কোনো গ্যাসের মধ্য দিয়ে এক্স-রশ্মি গেলে গ্যাসের অণুগুলি আয়নিত হয় ।

[vii] এক্স-রশ্মি জীবন্ত কোশ নষ্ট করে । মানুষের শরীরে বেশিক্ষণ ধরে এক্স-রশ্মি পড়া খুব ক্ষতিকর— এতে ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং রক্তের শ্বেত কণিকা নষ্ট হয়ে যায় ।

[viii] এক্স-রশ্মি ভারী মৌলিক পদার্থ অথবা ওদের যৌগ দ্বারা শোষিত হয় ।

[ix] সোডিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি ধাতুর উপর এক্স-রশ্মির পতনে ধাতু থেকে ইলেকট্রনের নিঃসরণ ঘটে । এই ঘটনাকে আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া (photo-electric effect) বলে ।

এক্স-রশ্মির ব্যবহার (Uses of X-rays)

[1] চিকিৎসা ক্ষেত্রে :-

(i) এক্স-রশ্মির সাহায্যে ফটোগ্রাফিক প্লেটে হাত, পা বা দেহের হাড়ের ছবি পাওয়া যায় । এজন্য শল্য চিকিৎসায় এক্স-রশ্মি অপরিহার্য ।

(ii) এক্স-রশ্মির জীবন্ত কোশকে ধ্বংস করার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ক্যান্সার, টিউমার প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় এই রশ্মি ব্যবহৃত হয় । একে এক্স-রে থেরাপি বলে ।  

[2] বিজ্ঞানের গবেষণা কাজে :

(i) পরমাণুর গঠন বিষয়ক নানা পরীক্ষায় এক্স-রশ্মি ব্যবহৃত হয় । 

(ii) এক্স-রশ্মির সাহায্যে কেলাসের  গঠন সম্বন্ধে মূল্যবান তথ্য জানা যায় ।

[3] শিল্প ক্ষেত্রে : কড়ি, বরগা প্রভৃতির ঢালাই করা ধাতুর ভিতরের অংশে কোনো ফাঁক বা দুর্বল স্থান আছে কিনা তা ওই বস্তুর এক্স-রশ্মির ফটোগ্রাফ থেকে জানা যায় ।

[4] গোয়েন্দা বিভাগে : পুলিশ ও শুল্ক বিভাগের কর্মীরা সোনা, হিরে ইত্যাদি সামগ্রীর চোরাচালান নিবারণের জন্য এক্স-রশ্মি ব্যবহার করেন ।

*****

Related Items

রেকটিফায়েড স্পিরিট

ইথাইল অ্যালকোহলের লঘু দ্রবণের আংশিক পাতন প্রক্রিয়া থেকে 95.6% গাঢ় ইথাইল অ্যালকোহল এবং 4.4% জলের মিশ্রণ পাওয়া যায় । এই মিশ্রণকে শোধিত অ্যালকোহল বা রেকটিফায়েড স্পিরিট বলে । রেকটিফায়েড স্পিরিট বর্ণহীন কিন্তু মিষ্টি গন্ধযুক্ত পদার্থ । জলে যে-কোনো মাত্রায় ...

ডিটারজেন্ট (Detergent)

ডিটারজেন্ট হল লবণ জাতীয় জৈব ও অজৈব পদার্থের মিশ্রণ । ডিটারজেন্টের গঠন অনেকটা সাবানের মত । এর অণুর একটি অংশ জলঅনুরাগী এবং অপরটি জলবিরাগী । এগুলি কয়লা ও পেট্রোলিয়ামের হাইড্রোকার্বন থেকে তৈরি হয় । হাইড্রোকার্বনের অংশটি জলবিরাগী এবং জলঅনুরাগী ...

কস্টিক সোডা বা সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড

কস্টিক সোডা তীব্র ক্ষারধর্মী, অজৈব যৌগ, কেলাসাকার, জলাকর্ষী পদার্থ । কস্টিক সোডার জলীয় দ্রবণ পিচ্ছিল হয় । কস্টিক সোডার গলনাঙ্ক 318°C। কস্টিক সোডা চামড়ায় ক্ষতের সৃষ্টি করে । কস্টিক সোডা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে কার্বনেটে পরিণত হয় । ...

ন্যাপথালিন (Naphthalene)

ন্যাপথালিনের প্রধান উত্স হল আলকাতরা । ন্যাপথালিনের গলনাঙ্ক 80°C এবং স্ফুটনাঙ্ক 218°C। ন্যাপথালিন একটি বিশিষ্ট গন্ধযুক্ত চকচকে সাদা রঙের কেলাসিত কঠিন পদার্থ । এটি জলে অদ্রাব্য কিন্তু বেঞ্জিন, ইথার প্রভৃতি জৈব দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় । এটি একটি উদ্বায়ী পদার্থ । ...

কলিচুন (Slaked Lime)

কলিচুন সাদা, গন্ধহীন, অনিয়তাকার একটি অজৈব কঠিন পদার্থ । কলিচুন অনুদ্বায়ী পদার্থ এবং জলে সামান্য দ্রাব্য । উষ্ণতা বৃধিতে এর দ্রাব্যতা কমে যায় । তাই গরম জলের চেয়ে ঠান্ডা জলে কলিচুনের দ্রাব্যতা বেশি হয় । জলে কলিচুন মেশালে ওপরের অংশে যে স্বচ্ছ দ্রবণ পাওয়া যায়, তাকেই ...