আইসোটোপ বা সমস্থানিক (Isotope)

Submitted by arpita pramanik on Mon, 01/07/2013 - 21:24

আইসোটোপ বা সমস্থানিক (Isotope) :

আইসোটোপের সংজ্ঞা (Definition of Isotopes) : একটি মৌলের বিভিন্ন পরমাণু যাদের পারমাণবিক সংখ্যা অর্থাৎ, প্রোটন সংখ্যা একই কিন্তু নিউক্লিয়াসে বিভিন্ন সংখ্যক নিউট্রন থাকার জন্য পারমাণবিক ভর অর্থাৎ ভর-সংখ্যা বিভিন্ন হয়, তাদের আইসোটোপ বা সমস্থানিক বলে ।

সমস্থানিক পরমাণুগুলির মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য :

সাদৃশ্য :

[i] একই মৌলের সমস্থানিক পরমাণুগুলি হল একই মৌলের পরমাণু ।

[ii] একই মৌলের সমস্থানিক পরমাণুগুলির নিউক্লিয়াসগুলিতে প্রোটন সংখ্যা একই থাকে । অর্থাৎ তাদের পারমাণবিক সংখ্যা একই ।

[iii] একই মৌলের সমস্থানিক পরমাণুগুলির বিভিন্ন কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা ও ইলেকট্রনবিন্যাস একই থাকে ।

[iv] সাধারণভাবে একই মৌলের বিভিন্ন সমস্থানিকের রাসায়নিক ধর্ম একই রকমের হয় ।

[v] একই মৌলের সমস্থানিকগুলির যোজ্যতা একই হয় ।

[vi] একই মৌলের বিভিন্ন সমস্থানিকগুলিকে পর্যায় সারণির একই স্থানে রাখা হয় ।

বৈসাদৃশ্য :

[i] একই মৌলের বিভিন্ন সমস্থানিকগুলির পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন ।

[ii] একই মৌলের সমস্থানিকগুলির ভরসংখ্যা আলাদা হয় ।

[iii] একই মৌলের বিভিন্ন সমস্থানিকের ভর বিভিন্ন হওয়ার জন্য তাদের ঘনত্ব, স্ফুটনাঙ্ক, গলনাঙ্ক প্রভৃতি ভৌত ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন হয় ।

কয়েকটি সমস্থানিকের পরিচয় :

হাইড্রোজেনের সমস্থানিক (1H1, 1H2 বা D, 1H3 বা T) : হাইড্রোজেনের তিনটি সমস্থানিক আছে । যথা— সাধারণ হাইড্রোজেন বা প্রোটিয়াম (Protium) [1H1], ভারী হাইড্রোজেন বা ডয়টেরিয়াম (Deuterium) [1H2 বা D] এবং ট্রাইটিয়াম (Tritium) [1H3 বা T] ।

এদের ভরসংখ্যা যথাক্রমে 1, 2 এবং 3 । সাধারণ হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসে মাত্র 1টি প্রোটন থাকে, ডয়টেরিয়ামের নিউক্লিয়াসে 1টি প্রোটন এবং 1টি নিউট্রন আছে, কাজেই ভর সংখ্যা = 2,  ট্রাইটিয়ামে 1টি প্রোটন এবং  2টি নিউট্রন থাকায় ভর সংখ্যা = 3 হয় ।

অক্সিজেনের তিনটি সমস্থানিক হল8O16 , 8O17  এবং  8O17

কার্বনের তিনটি সমস্থানিক হল6C12 , 6C13 এবং 6C14

ক্লোরিনের দুটি সমস্থানিক হল17Cl35 এবং 17C37

আইসোটোপের ব্যবহার :

[i] আয়োডিনের আইসোটোপকে গলার ক্যানসার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় ।

[ii] কৃষি, চিকিৎসা এবং পৃথিবীর বয়স, মৃত প্রাণীদেহের হাড় ও জীবাশ্ম ইত্যাদির প্রাচীনতা সংক্রান্ত নানা তথ্য জানার জন্য C-14 আইসোটোপ (carbon dating পদ্ধতি) ব্যবহার করা হয় ।

[iii] জৈব যৌগের প্রকৃতি নির্ণয়ে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বনের আইসোটোপ ব্যবহার করা হয় ।

আইসোবার (Isobar) : ভরসংখ্যা একই কিন্তু বিভিন্ন পারমাণবিক সংখ্যাবিশিষ্ট পরমাণুগুলিকে আইসোবার বলে । যেমন— 19K40 , 20Ca40 ইত্যাদি । 

আইসোটোন (Isotone) : যেসব পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা বিভিন্ন কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা একই তাদের আইসোটোন বলে । যেমন— 15P31, 16S32 এদের প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন কিন্তু উভয়ের নিউট্রন সংখ্যা 16 ।

*****

Related Items

ভিনিগার (Vinegar)

ভিনিগার হল কার্বক্সিলিক অ্যাসিড জাতীয় যৌগ - অ্যাসেটিক অ্যাসিডের লঘু জলীয় দ্রবণ । এতে প্রায় 4% - 8% অ্যাসেটিক অ্যাসিড ও সামান্য অ্যালকোহল থাকে । ভিনিগার জলে দ্রাব্য এবং এর জলীয় দ্রবণ অম্লধর্মী । এটি তীব্র গন্ধযুক্ত, বর্ণহীন, অনুদ্বায়ী, জৈব তরল পদার্থ । ...

রেকটিফায়েড স্পিরিট

ইথাইল অ্যালকোহলের লঘু দ্রবণের আংশিক পাতন প্রক্রিয়া থেকে 95.6% গাঢ় ইথাইল অ্যালকোহল এবং 4.4% জলের মিশ্রণ পাওয়া যায় । এই মিশ্রণকে শোধিত অ্যালকোহল বা রেকটিফায়েড স্পিরিট বলে । রেকটিফায়েড স্পিরিট বর্ণহীন কিন্তু মিষ্টি গন্ধযুক্ত পদার্থ । জলে যে-কোনো মাত্রায় ...

ডিটারজেন্ট (Detergent)

ডিটারজেন্ট হল লবণ জাতীয় জৈব ও অজৈব পদার্থের মিশ্রণ । ডিটারজেন্টের গঠন অনেকটা সাবানের মত । এর অণুর একটি অংশ জলঅনুরাগী এবং অপরটি জলবিরাগী । এগুলি কয়লা ও পেট্রোলিয়ামের হাইড্রোকার্বন থেকে তৈরি হয় । হাইড্রোকার্বনের অংশটি জলবিরাগী এবং জলঅনুরাগী ...

কস্টিক সোডা বা সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড

কস্টিক সোডা তীব্র ক্ষারধর্মী, অজৈব যৌগ, কেলাসাকার, জলাকর্ষী পদার্থ । কস্টিক সোডার জলীয় দ্রবণ পিচ্ছিল হয় । কস্টিক সোডার গলনাঙ্ক 318°C। কস্টিক সোডা চামড়ায় ক্ষতের সৃষ্টি করে । কস্টিক সোডা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে কার্বনেটে পরিণত হয় । ...

ন্যাপথালিন (Naphthalene)

ন্যাপথালিনের প্রধান উত্স হল আলকাতরা । ন্যাপথালিনের গলনাঙ্ক 80°C এবং স্ফুটনাঙ্ক 218°C। ন্যাপথালিন একটি বিশিষ্ট গন্ধযুক্ত চকচকে সাদা রঙের কেলাসিত কঠিন পদার্থ । এটি জলে অদ্রাব্য কিন্তু বেঞ্জিন, ইথার প্রভৃতি জৈব দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় । এটি একটি উদ্বায়ী পদার্থ । ...