অণুর ধারণা ও প্রকারভেদ

Submitted by arpita pramanik on Fri, 01/11/2013 - 21:23

ডালটনের পরমাণুবাদ (Dalton's atomic theory) :

বিজ্ঞানী ডালটনের পরমাণুবাদের মূল কথা হল— প্রত্যেক মৌলিক পদার্থ বহু সংখ্যক অতি ক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণা দিয়ে গঠিত । এই ক্ষুদ্রতম কণাগুলির নাম হল পরমাণু । রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলি পূর্ণ সংখ্যার সরল অনুপাতে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে । যেমন 1 : 1,  1 : 2,  1 : 3  ইত্যাদি । ডালটন তাঁর পরমাণুবাদে অণুর কল্পনা করেন নি ।

অণুর ধারণা (Concept of molecule) : ডালটনের পরমাণুবাদে মৌলিক পদার্থ এবং যৌগিক পদার্থ উভয়েই ক্ষুদ্রতম কণা হিসেবে পরমাণুকে ধরা হয়েছিল । এর ফলে নানা জটিলতা ও সমস্যার সৃষ্টি হয় । এই সমস্যার সমাধান করতে অ্যাভোগাড্রো অণুর ধারণা প্রবর্তন করেন । তাঁর মত অনুযায়ী, পদার্থ দু'রকম ক্ষুদ্রতম কণা দিয়ে গঠিত, যথা [i] পরমাণু এবং [ii] অণু

[i] পরমাণু (atom) : পরমাণু হল পদার্থের ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য কণা । পরমাণু স্বাধীনভাবে থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে এবং পরমাণুই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে ।

[ii] অণু (molecule) : মৌলিক বা যৌগিক সব পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা হল অণু । অণু স্বাধীনভাবে থাকতে পারে এবং পদার্থের সব ধর্মই অণুর মধ্যে বর্তমান থাকে ।

অণুর প্রকারভেদ (Types of molecule) : বিজ্ঞানী ডালটনের পরমাণুর কল্পনাকে বজায় রেখে অ্যাভোগাড্রো অণুর কল্পনার প্রবর্তন করেন । তাঁর মতে, পরমাণুগুলি সংযুক্ত হয়ে অণু গঠন করে । অণু দুরকম— (১) মৌলিক অণু এবং (২) যৌগিক অণু

[1] মৌলিক অণু (Elementary molecule) : একই মৌলের পরমাণু দ্বারা গঠিত অণুকে মৌলিক অণু বলে ।

পারমাণবিকতা (Atomicity) : কোনো মৌলের একটি অণু যত সংখ্যক পরমাণু দ্বারা গঠিত, সেই সংখ্যাকে ওই মৌলের পারমাণবিকতা বলে ।

মৌলিক অণুর গঠন বিভিন্ন রকম হতে পারে —

(ক) এক-পরমাণুক (monatomic) অণু : যেমন— Na, K, Ca, C ইত্যাদি ।  

(খ) দ্বি-পরমাণুক (di-atomic) অণু : যেমন— H2,  O2,  N2 ইত্যাদি । এদের পারমাণবিকতা = 2

(গ) ত্রি-পরমাণুক (triatomic) অণু : যেমন— ওজোন (O3) । এর পারমাণবিকতা = 3

(ঘ) চতুঃপরমাণুক অণু : যেমন— S4,  P4 ইত্যাদি । এদের পারমাণবিকতা = 4

(ঙ) বহুপরমাণুক (Polyatomic) অণু : যেমন— S8  । এর পারমাণবিকতা = 8

(চ) নিস্ক্রিয় (inert) অণু : যেমন— He,  Ne, A ইত্যাদি । এদের অণু ও পরমাণু সমার্থক ।

[2] যৌগিক অণু (Compound molecule) : একাধিক মৌলিক পদার্থের পরমাণুর দ্বারা গঠিত অণুকে যৌগিক অণু বলে । যেমন— অ্যামোনিয়া (NH3),  জল (H2O),  নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) -এর অণু ইত্যাদি ।

*****

Related Items

রেকটিফায়েড স্পিরিট

ইথাইল অ্যালকোহলের লঘু দ্রবণের আংশিক পাতন প্রক্রিয়া থেকে 95.6% গাঢ় ইথাইল অ্যালকোহল এবং 4.4% জলের মিশ্রণ পাওয়া যায় । এই মিশ্রণকে শোধিত অ্যালকোহল বা রেকটিফায়েড স্পিরিট বলে । রেকটিফায়েড স্পিরিট বর্ণহীন কিন্তু মিষ্টি গন্ধযুক্ত পদার্থ । জলে যে-কোনো মাত্রায় ...

ডিটারজেন্ট (Detergent)

ডিটারজেন্ট হল লবণ জাতীয় জৈব ও অজৈব পদার্থের মিশ্রণ । ডিটারজেন্টের গঠন অনেকটা সাবানের মত । এর অণুর একটি অংশ জলঅনুরাগী এবং অপরটি জলবিরাগী । এগুলি কয়লা ও পেট্রোলিয়ামের হাইড্রোকার্বন থেকে তৈরি হয় । হাইড্রোকার্বনের অংশটি জলবিরাগী এবং জলঅনুরাগী ...

কস্টিক সোডা বা সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড

কস্টিক সোডা তীব্র ক্ষারধর্মী, অজৈব যৌগ, কেলাসাকার, জলাকর্ষী পদার্থ । কস্টিক সোডার জলীয় দ্রবণ পিচ্ছিল হয় । কস্টিক সোডার গলনাঙ্ক 318°C। কস্টিক সোডা চামড়ায় ক্ষতের সৃষ্টি করে । কস্টিক সোডা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে কার্বনেটে পরিণত হয় । ...

ন্যাপথালিন (Naphthalene)

ন্যাপথালিনের প্রধান উত্স হল আলকাতরা । ন্যাপথালিনের গলনাঙ্ক 80°C এবং স্ফুটনাঙ্ক 218°C। ন্যাপথালিন একটি বিশিষ্ট গন্ধযুক্ত চকচকে সাদা রঙের কেলাসিত কঠিন পদার্থ । এটি জলে অদ্রাব্য কিন্তু বেঞ্জিন, ইথার প্রভৃতি জৈব দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় । এটি একটি উদ্বায়ী পদার্থ । ...

কলিচুন (Slaked Lime)

কলিচুন সাদা, গন্ধহীন, অনিয়তাকার একটি অজৈব কঠিন পদার্থ । কলিচুন অনুদ্বায়ী পদার্থ এবং জলে সামান্য দ্রাব্য । উষ্ণতা বৃধিতে এর দ্রাব্যতা কমে যায় । তাই গরম জলের চেয়ে ঠান্ডা জলে কলিচুনের দ্রাব্যতা বেশি হয় । জলে কলিচুন মেশালে ওপরের অংশে যে স্বচ্ছ দ্রবণ পাওয়া যায়, তাকেই ...