দ্রবণ (Solution)

Submitted by arpita pramanik on Fri, 09/04/2020 - 08:45

দ্রবণ (Solution)

একটি কাঁচের গ্লাসে মধ্যে খানিকটা জল নিয়ে ওর মধ্যে কিছু পরিমাণ লবণ যোগ করে ঝাঁকালে লবণ জলে অদৃশ্য হয়ে যায় । কিন্তু লবণ জলে অদৃশ্য হয়ে গেলেও মিশ্রণের লবণাক্ত স্বাদ থেকে লবণের অস্তিত্ব বোঝা যায় । তাছাড়া মিশ্রণের স্বাদ নিলে দেখা যায় এর যে কোন অংশের স্বাদ সমান লবণাক্ত । অর্থাৎ মিশ্রণের যেকোনো অংশে লবণ ও জলের অনুপাত একই । আবার মিশ্রণ থেকে জল বাষ্পীভূত করে দূর করলে পুনরায় লবণ ফিরে পাওয়া যায় । সুতরাং বোঝা যায় লবণ জলের সঙ্গে মিশে একটি সমসত্ব মিশ্রণ তৈরি করে যার প্রতিটি অংশের উপাদান, গঠন, ভৌত এবং রাসায়নিক ধর্ম একই থাকে । এই ধরনের সমসত্ব মিশ্রণ কে দ্রবণ বলে । সমসত্ব দ্রবণের প্রতিটি অংশের ঘনত্ব সমান । ওই দ্রবণের অন্যতম প্রধান উপাদান হল জল তাই দ্রবণটিকে লবণের জলীয় দ্রবণ বলে । এখন এই দ্রবণে আরও কিছু পরিমাণ লবণ দ্রবীভূত করে দ্রবণের লবণের পরিমাণ বাড়ানো যায় এবং জলের অনুপাত কমানো যায় । আবার এই দ্রবণে বাড়তি কিছু জল যোগ করে দ্রবণে জলের অনুপাত বাড়িয়ে লবণের অনুপাত কমানো যায় । কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রবণ নিয়ে তাতে লবণের পরিমাণ বাড়াতে থাকলে এমন এক সময় আসবে যখন দেখা যায় লবণ জলের সঙ্গে আর না মিশে কাঁচের গ্লাসের নিচে থিতিয়ে পড়ে সুতরাং দেখা যায় জলে দ্রবীভূত করার একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে ।

দ্রবণের দুটি অংশে থাকে — দ্রাব (Solute) এবং দ্রাবক (Solvent)

যে পদার্থ দ্রবীভূত হয় তাকে দ্রাব বলে এবং যার মধ্যে দ্রাব দ্রবীভূত হয় তাকে বলা হয় দ্রাবক ।  দ্রাব এবং দ্রাবক এর সমসত্ব মিশ্রণ হল দ্রবণ ।

অর্থাৎ দ্রবণ = দ্রাব + দ্রাবক

দ্রবণ (Solution):

দুই বা ততোধিক পদার্থের সমসত্ব মিশ্রণ এর যে কোন অংশের উপাদান, গঠন, ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম যদি একই থাকে এবং উপাদানগুলির আপেক্ষিক অনুপাত যদি একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে পরিবর্তন করা যায় তাহলে ওই মিশ্রণকে দ্রবণ বলে ।

দ্রাব (Solute):

দ্রবণে যে পদার্থটি কম পরিমাণে থেকে অপর কোন তরল, কঠিন অথবা গ্যাসীয় পদার্থে মিশে একটি সমসত্ব মিশ্রণ উৎপন্ন করে তাকে দ্রাব (Solute)  বলে  চিনি, লবণ, নিশাদল ইত্যাদি পদার্থ জলে দ্রবীভূত হয়ে একটি সমসত্ব মিশ্রণ উৎপন্ন করে । এই মিশ্রণ কে ওইসব পদার্থের জলীয় দ্রবণ বলে এখানে চিনি, লবণ, নিশাদল ইত্যাদি হল দ্রাব ।

 

দ্রাবক (Solvent):

দ্রবণের মধ্যে যে পদার্থটির অনুপাত বেশি থাকে এবং পদার্থটির ভৌত অবস্থা দ্রবণটি ভৌত অবস্থার মতো হয় সেই পদার্থটিকে দ্রাবক বলে ।

জল একটি উত্তম ও অজৈব দ্রাবক । একে সার্বজনীন দ্রাবক বলা হয় — কারণ ?

অধিকাংশ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ জলে দ্রবীভূত হয় ।

জল ছাড়া আরও অনেক দ্রাবক আছে যেমন অ্যালকোহল, বেনজিন, পেট্রোল, ইথার, ক্লোরোফরম,  কার্বন ডাই সালফাইড অ্যাসিটোন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড ইত্যাদি এদের জৈব দ্রাবক বলে । মোম, রবার কার্বন টেট্রাক্লোরাইড -এ দ্রবীভূত হয় । তেল চর্বি জলে অদ্রাব্য কিন্তু ক্লোরোফর্মে দ্রবীভূত হয় । সালফার, আয়োডিন কার্বন ডাই অক্সাইডে দ্রাব্য কিন্তু জলে অদ্রাব্য ।

*****

Comments

Related Items

পরিমাপ সংক্রান্ত গাণিতিক উদাহরণ

1. D1 ও D2 ঘনত্বের দুটি পদার্থকে সমভরে মেশানো হলে মিশ্রণের ঘনত্ব কত হবে ? 2. দুটি তরলের ঘনত্ব যথাক্রমে 1.2 g/cm3 ও 0.8 g/cm3 । তরল দুটিকে সমভরে মেশানো হলে মিশ্রণের ঘনত্ব কত হবে ?

ঘড়ির সাহায্যে সময় এবং সময়ের ব্যবধান পরিমাপ

ঘড়ির সাহায্যে সময় এবং সময়ের ব্যবধান পরিমাপ করা হয় । প্রাচীনকালে সূর্য ঘড়ি, বালি ঘড়ি, জল ঘড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা হত । বর্তমানে সময় পরিমাপের জন্য দেয়াল ঘড়ি (wall clock), পকেট ঘড়ি, হাত ঘড়ি, ডিজিটাল ঘড়ি, টেবিল ঘড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা ...

সাধারণ তুলা যন্ত্র

সাধারণ তুলাযন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুর ভর পরিমাপ করা হয় । মুদির দোকানে পণ্য-সামগ্রী মাপার জন্য যে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলিই সাধারণ তুলাযন্ত্রের উদাহরণ ।

আয়তন মাপক চোঙ

এটি একটি সমপ্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট একদিক বদ্ধ লম্বা কাঁচের চোঙ । এই চোঙের বাইরের গায়ে cm3 বা ml (মিলিলিটার) এককে আয়তন নির্দেশক দাগ কাটা থাকে । প্রতি cm3 কে 5 বা 10 টি সমান ভাগে ভাগ করা থাকে ।

গ্রাফ পেপারের সাহায্যে অসম আকৃতির পাত বা ফলকের ক্ষেত্রফল নির্ণয়

অসম আকৃতির পাত বা ফলকের ক্ষেত্রফল কোনো গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করে পরিমাপ করা যায় না । এই সমস্ত ক্ষেত্রে গ্রাফ পেপারের সাহায্য নেওয়া হয় । এই সমস্ত ক্ষেত্রে গ্রাফ পেপারের সাহায্য নেওয়া হয় । মিলিমিটার গ্রাফ পেপারের প্রতিটি ঘরের (বর্গক্ষেত্রের ) ক্ষেত্রফল 1 বর্গমিলিমিটার ...