কার্য ও কার্যের পরিমাপ

Submitted by arpita pramanik on Thu, 10/08/2020 - 21:06

কার্য ও কার্যের পরিমাপ (Work and Measurement of Work)

কার্যের সংজ্ঞা (Definition of Work)

কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর স্মরণ হয় তাহলে প্রযুক্ত বল কার্য করেছে বলা হয় বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের প্রয়োগ বিন্দুর স্মরণ এর গুণফল দ্বারা কার্যের পরিমাপ করা হয় ।

অর্থাৎ, কৃতকার্য (W) = প্রযুক্ত বল (F) × বলের প্রয়োগ বিন্দু স্মরণ (S)

W = F × S

 

কার্যের পরিমাপ (Measurement of Work)

বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের প্রয়োগ বিন্দু স্মরণ এর গুণফল দ্বারা কার্যের পরিমাপ করা হয় ।

Work Done

কোন বস্তুর  উপর A বিন্দুতে একটি বল F ক্রিয়া করে বস্তুটি  A থেকে B বিন্দুতে সরে গেল । এর ফলে যদি বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ, A থেকে B মধে দূরত্ব = S হয়, তাহলে

কৃত কার্য (W) = F × S হবে ।

 

 

Work Done Inclined

 

অনেক সময় দেখা যায় বস্তুর সরণের অভিমুখ এবং প্রযুক্ত বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণ এর অভিমুখ একই সরলরেখায় হয়না এক্ষেত্রে বস্তুটির সরণের অভিমুখ এবং প্রযুক্ত বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণ এর অভিমুখ যদি পরস্পরের সঙ্গে θ কোন করে অবস্থান করে তাহলে সেক্ষেত্রে

কৃত কার্য  W = F cos θ × S হবে ।

কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করা হলেও অনেক সময় কোনো কার্য করা হয় না । সাধারণত  দুটি ক্ষেত্রে বস্তুর উপর বল প্রযুক্ত হলেও কোনো কার্য হয় না -

1. বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণ না হলে প্রযুক্ত বল দ্বারা  কোন কার্য করা হয় না । অর্থাৎ সরণ (S) = 0  হলে  কৃতকার্য (W) = 0 হবে ।

কৃতকার্য (W) = প্রযুক্ত বল (F) × বলের প্রয়োগ বিন্দু স্মরণ (S)

কৃতকার্য (W) = প্রযুক্ত বল (F) × 0

কৃতকার্য (W) = 0

2. কার্যহীন বল : অনেক সময় বল প্রয়োগের ফলে বস্তুটির সরণ হলেও ওই বল কোন কার্য করে না । এই অবস্থায় ওই বলকে কার্যহীন বল বলে। এক্ষেত্রে প্রযুক্ত বলের অভিমুখ এবং সরণের অভিমুখ পরস্পরের সঙ্গে লম্বভাবে থাকে বলে ওই বল দ্বারা কৃতকার্যের পরিমাণ শূন্য হয় । অর্থাৎ বস্তুটির সরণের অভিমুখ এবং প্রযুক্ত বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণ এর অভিমুখ যদি পরস্পরের সঙ্গে 90º কোন করে অবস্থান করে ।

তাহলে,

কৃতকার্য (W) = প্রযুক্ত বল (F) × বলের প্রয়োগ বিন্দু স্মরণ (S)

কৃতকার্য (W) = F cos θ × S

যেহেতু cos θ =cos 90º =0

কৃতকার্য (W) = 0 × S

কৃতকার্য (W) = 0

 

কার্যের একক (Units of Work)

কার্যের একক বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং তার সরণের এককের উপর নির্ভর করে ।

কোন বস্তুর উপর একক বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর স্মরণ বলের অভিমুখে এক একক হয় তাহলে যে কার্য করা হয় তাকে একক কার্য বলে ।

 

কার্যের পরম একক (Absolute Unit of Work)

C.G.S বা মেট্রিক পদ্ধতিতে কার্যের পরম একক হল আর্গ (Erg) । কোন বস্তুর উপর এক ডাইন বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দু স্মরণ বলের অভিমুখে 1 সেন্টিমিটার হয় তাহলে যে কার্য করা হয় তাকে এক আর্গ বলা হয় ।

অর্থাৎ 1 আর্গ = 1 ডাইন  × 1 সেন্টিমিটার = 1 ডাইন - সেন্টিমিটার

 

SI বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে কার্যের পরম একক জুল (Joule) বা নিউটন - মিটার । কোন বস্তুর উপর এক নিউটন বা 105 ডাইন বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দু স্মরণ বলের অভিমুখে এক মিটার হয় তাহলে যে কার্য করা হয় তাকে এক জুল (Joule) বলে ।

1 জুল = 1 নিউটন  × 1 মিটার = 105 ডাইন × 100 সেন্টিমিটার = 107 ডাইন- সেন্টিমিটার = 107 আর্গ ।

 

কার্যের ব্যবহারিক একক (Practical Unit of Work)

আর্গ খুব ছোট একক হওয়ায় ব্যবহারিক ক্ষেত্রে SI পদ্ধতিতে প্রচলিত একক কে কার্যের ব্যবহারিক একক হিসেবে ধরা হয় ।

কার্যের ব্যবহারিক একক হল জুল (Joule)। 1 জুল = 107 আর্গ  ।

অনেক সময় কার্যের ব্যবহারিক একক হিসেবে কিলোজুল (Kilojoule, kJ) এবং মেগাজুল (Megajoule, MJ) ব্যবহার করা হয় ।

1kJ = 1000J = 103 J

1MJ = 1000000J =106 J

 

কার্যের অভিকর্ষীয় একক (Gravitational Unit of Work)

C.G.S বা মেট্রিক পদ্ধতিতে কার্যের অভিকর্ষীয় একক হল  গ্রাম- সেন্টিমিটার । 1 গ্রাম ভরের কোন বস্তুকে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে 1 সেমি উপরে তুলতে যে কার্য করা হয় তাকে এক গ্রাম সেন্টিমিটার বলে ।

1 গ্রাম সেন্টিমিটার =  g আর্গ = 981 আর্গ

SI বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে কার্যের অভিকর্ষীয় একক হল কিলোগ্রাম-মিটার । 1 কিলোগ্রাম ভরের কোন বস্তুকে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে এক মিটার উপরে তুলতে যে কার্য করা হয় তাকে এক কিলোগ্রাম-মিটার বলে ।

1 কিলোগ্রাম-মিটার = 9.8 নিউটন - মিটার = 9.8 জুল

*****

Comments

Related Items

অ্যাসিড, ক্ষারক ও লবণ

সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4), নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3), হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCL), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH), পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (KOH), ম্যাগনেসিয়াম সালফেট (MgSO4), সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)

দ্রবণ (Solution)

যে পদার্থ দ্রবীভূত হয় তাকে দ্রাব বলে এবং যার মধ্যে দ্রাব দ্রবীভূত হয় তাকে বলা হয় দ্রাবক । দ্রাব এবং দ্রাবক এর সমসত্ব মিশ্রণ হল দ্রবণ । দ্রবণের দুটি অংশে থাকে --- দ্রাব (Solute) এবং দ্রাবক (Solvent) । অর্থাৎ দ্রবণ = দ্রাব + দ্রাবক

শব্দ বিস্তারের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয়

শব্দের উৎস থেকে উৎপন্ন শব্দ বায়ু মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আমাদের কানে এসে পৌঁছলে মস্তিষ্কে এক রকম অনুভূতি সৃষ্টি করে । তখন আমরা শব্দ শুনতে পাই । বায়ু মাধ্যম না থাকলে শব্দ আমাদের কানে পৌঁছতে পারত না । ফলে আমরা শব্দ শুনতে পেতাম না । কঠিন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে শব্দের বিস্তার ...

পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন

পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় এই তিন অবস্থায় থাকতে পারে । তাপ প্রয়োগ করলে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন হয় । তাপ প্রয়োগে কঠিন পদার্থ প্রথমে তরল এবং পরে গ্যাসীয় অবস্থায় পরিবর্তিত হয় আবার তাপ নিষ্কাশনে গ্যাসীয় পদার্থ প্রথমে তরল এবং পরে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত হয় ।

পদার্থ ও শক্তি (Matter and Energy)

প্রকৃতিতে দুটি ভিন্ন বিষয় অস্তিত্ব আমরা বুঝতে পারি একটি জড় বা পদার্থ (matter) এবং অন্যটি হলো শক্তি (energy)। পদার্থের নির্দিষ্ট পরিমাণকে বস্তু বলে । যেমন প্লাস্টিক দিয়ে জলের বালতি, মগ তৈরি করা হয় সুতরাং জলের বালতি, মগ হলো বস্তু কিন্তু এগুলির উপাদান প্লাস্টিক হলো