মেন্ডেলিফের পর্যায়সূত্র ও আধুনিক পর্যায়সূত্র

Submitted by arpita pramanik on Wed, 02/13/2013 - 09:30

মেন্ডেলিফের পর্যায়সূত্র (Mendeleef's periodic law, 1869)

1869 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ান বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ (Mendeleef) এবং পৃথকভাবে জার্মান বিজ্ঞানী লোথার মেয়ার (Lothar Meyer) মৌলগুলিকে তাদের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজিয়ে প্রায় একই সময়ে পর্যায়-সূত্র প্রকাশ করেন ।

পর্যায় সূত্র (Periodic law) : বিভিন্ন মৌলের ভৌত এবং রাসায়নিক ধর্মগুলি ওদের পারমাণবিক ভর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয় । একেই মেন্ডেলিফের পর্যায়-সূত্র বলে ।

বিভিন্ন মৌলগুলিকে ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ভর অনুযায়ী পর পর সাজালে, মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম এক মৌল থেকে অন্য মৌলে নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হতে থাকে । কিন্তু একটা নির্দিষ্ট ব্যবধানের পর ধর্মগুলির আবার পুনরাবৃত্তি হতে দেখা যায় । একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পার হয়ে যেসব মৌল একই শ্রেণিতে পড়ে, তাদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের অনেক মিল দেখা যায় ।

পর্যায় সারণি (Periodic table) এবং পর্যায়গত বিভাগ:- বিভিন্ন মৌলের পারমাণবিক ভর (পারমাণবিক সংখ্যা) বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্তি ঘটে— এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে মৌলগুলির যে শ্রেণি বিভাগ করা হয়েছে,তাকে পর্যায়গত বিভাগ এবং তালিকাকে পর্যায়-সারণি বলে ।

পরমাণু-ক্রমাঙ্ক বা পারমাণবিক সংখ্যা ও পর্যায়-সারণি (Atomic number and Periodic table)

আধুনিক পর্যায়সূত্র (Modified Mendeleef's periodic law) : মেন্ডেলিফের মতে প্রতিটি মৌলই নির্দিষ্ট পারমাণবিক ভর সম্পন্ন এবং পারমাণবিক ভরই মৌলের আসল ধর্ম । এই মতের উপর ভিত্তি করে মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণিতে মৌলগুলিকে ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজানো হয়েছে । কিন্তু মৌলের আইসোটোপ বা সমস্থানিক আবিষ্কারের ফলে দেখা গেল যে, একই মৌলের বিভিন্ন পারমাণবিক ভরবিশিষ্ট পরমাণু থাকতে পারে । প্রশ্ন হল— পর্যায়-সারণিতে এদের স্থান কোথায় হবে ?  সুতরাং পারমাণবিক ভরই মৌলের মৌলিকত্ব নির্ধারণ করে মেন্ডেলিফের এই ধারণা ঠিক নয় । 1913-14 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী মোজলে এক্স-রশ্মির বিশ্লেষণ দ্বারা প্রমাণ করেন যে, পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত মোট ধনাত্মক তড়িতাধান-সংখ্যা বা প্রোটন সংখ্যা অর্থাৎ, পারমাণবিক সংখ্যার উপরই মৌলের ধর্ম নির্ভর করে । অতএব মৌলের সঠিক প্রকৃতি নির্ভর করে মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যার ওপর, পারমাণবিক ভরের উপর নয়

আধুনিক পর্যায়-সূত্র : বিভিন্ন মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মগুলি ওদের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক সংখ্যার সঙ্গে পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয় । 

*****

Related Items

অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের অনুসিদ্ধান্ত

অ্যাভোগাড্রোর সূত্র থেকে নিম্নলিখিত অনুসিদ্ধান্তগুলি পাওয়া যায়— নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলি ছাড়া অন্যান্য মৌলিক গ্যাসগুলি (যেমন— হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি) দ্বি-পরমাণুক । কোনো গ্যাসের আণবিক ভর [M] গ্যাসটির বাষ্প ঘনত্বের [D] দ্বিগুণ অর্থাৎ, M = 2D ।

আণবিক ভর ও গ্রাম-পারমাণবিক ভর

আণবিক ভর ও গ্রাম-পারমাণবিক ভর :

আণবিক ভর (Molecular mass) :

কোনো মৌল বা যৌগের একটি অণু একটি কার্বন -12 (C12) পরমাণুর ভরের 1/12 অংশের তুলনায় যতগুণ ভারী, সেই তুলনামূলক সংখ্যাটিকে ওই মৌল বা যৌগের আণবিক ভর বলে

অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প

একই চাপ ও উষ্ণতায় সম-আয়তন সকল গ্যাসের মধ্যে সমান সংখ্যক অণু থাকে । বার্জিলিয়াসের প্রকল্প সংশোধন করে অ্যাভোগাড্রো এই প্রকল্পটি প্রকাশ করেন । এটি অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প নামে খ্যাত । অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের সাহায্যে গ্যাস-আয়তন সূত্র এবং পরমাণুবাদের মধ্যে সমন্বয় ...

অণুর ধারণা ও প্রকারভেদ

বিজ্ঞানী ডালটনের পরমাণুবাদের মূল কথা হল— প্রত্যেক মৌলিক পদার্থ বহু সংখ্যক অতি ক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণা দিয়ে গঠিত । এই ক্ষুদ্রতম কণাগুলির নাম হল পরমাণু । রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলি পূর্ণ সংখ্যার সরল অনুপাতে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে । ...

গাণিতিক প্রশ্নোত্তর : গ্যাসের ধর্ম

গ্যাসের ধর্ম সম্পর্কিত গাণিতিক উদাহরণ । বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষায় আগত প্রশ্নপত্র এবং বিভিন্ন কম্পিটিটিভ এক্সাম এ আগত গাণিতিক প্রশ্নের সমাধান আলোচনা করা হলো । ...