Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 09/28/2020 - 22:35

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা : ঊনিশ শতকে বাংলা থেকে প্রকাশিত যে সমস্ত পত্রপত্রিকায় সমকালীন সমাজের প্রতিফলন ঘটেছিল সেগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হল 'হিন্দু প্যাট্রিয়ট' পত্রিকা । সমকালীন বাংলার সমাজের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র এই পত্রিকায় ফুটে উঠে । ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ জানুয়ারি থেকে কলকাতায় হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় 'হিন্দু প্যাট্রিয়ট' নামে ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হতে শুরু করে ।  প্রথমদিকে তিনি গিরিশচন্দ্র ঘোষের সাহায্যে এই পত্রিকায় লেখা থেকে শুরু করে প্রুফ দেখা এমনকি ছাপার কাজও করতেন । সম্পাদক হিসেবে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশনের নিদর্শন রাখেন । এই পত্রিকার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশের স্বার্থ জনগণের কাছে প্রচার করা এবং প্রচলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক ত্রুটিবিচ্যুতিগুলির প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা । সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন দিকগুলি তুলে ধরা ছাড়াও জাতীয়তাবাদী আদর্শ প্রচার করা ছিল এই সংবাদপত্রের মূল উদ্দেশ্য । ৭১ বছর চালু থাকার পর ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে এই পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয় ।

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় অত্যন্ত ক্ষুরধার ভাষায় লর্ড ডালহৌসির দেশশাসন নীতি ও হ্যালিডের প্রদেশশাসন নীতিকে তীব্র আক্রমণ করেন । এই পত্রিকায় তৎকালীন বাংলার প্রজারা ব্রিটিশ সরকার, পুলিশ, জমিদার ও মহাজনদের দ্বারা সর্বদা কীভাবে শোষিত ও অত্যাচারিত হত, সাঁওতাল পরগনার আদিবাসীরা কীরূপ অত্যাচারের শিকার হয়, সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় সরকারি সেনা কীরূপ নৃশংসভাবে অগণিত সাঁওতালদের হত্যা করে তার বিবরণ 'হিন্দু প্যাট্রিয়ট' পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হত । বিদেশি নীলকর সাহেবরা কীভাবে বাংলার সাধারণ চাষিদের নীলচাষে বাধ্য করত, তারা চাষীদের ওপর কীভাবে নির্মম অত্যাচার চালাত, নীলচাষ করে কৃষকরা কীভাবে দুর্দশার শিকার হত প্রভৃতি ঘটনা এই পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হত । এই পত্রিকা সাঁওতাল বিদ্রোহ দমনে এবং সাধারণ চাষীদের ওপর নীলকর সাহেবদের অন্যায় অত্যাচারের তীব্র সমালোচনা করে ।

ধীরে ধীরে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় এই পত্রিকাটির ব্রিটিশ-বিরোধী ভূমিকায় ইংরেজরা ভীত হয়ে পড়ে । হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় সমকালীন সমাজজীবনের ছবি ধরা পড়ে । হিন্দু সমাজের জাতিভেদ প্রথা, বর্ণপ্রথা-সহ নানা ধরনের কুপ্রথার বিরুদ্ধে এই পত্রিকা সরব হয় । তবে এই পত্রিকা সমাজের গরিষ্ঠ অংশ অর্থাৎ কৃষকশ্রেণি এবং তাদের মধ্যে বিশেষত নীলচাষিদের দুর্দশার কাহিনি প্রকাশে অধিক গুরুত্ব দেয় । শিশিরকুমার ঘোষ যশোরের নীলচাষীদের দুর্দশার বাস্তবচিত্র কিছু চিঠি মারফত হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় প্রকাশ করেন । পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নীলবিদ্রোহে কৃষকদের গৌরবজনক ভূমিকা প্রসঙ্গে লেখেন যে—বাংলাদেশ তার কৃষককুল সম্পর্কে গর্ববোধ করতে পারে ।

****

Comments

Related Items

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কী কী কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির গণতন্ত্রের পতন ঘটে ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কী কী কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির গণতন্ত্রের পতন ঘটে ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর ।

হিটলার কীভাবে পররাজ্য গ্রাস শুরু করেছিলেন ? হিটলারের আক্রমণ প্রতিহত না করে পশ্চিমী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি কোন নীতি গ্রহণ করেছিল এবং কেন ? এর ফল কী হয়েছিল ?

প্রশ্ন:- হিটলার কীভাবে পররাজ্য গ্রাস শুরু করেছিলেন ? হিটলারের আক্রমণ প্রতিহত না করে পশ্চিমী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি কোন নীতি গ্রহণ করেছিল এবং কেন ? এর ফল কী হয়েছিল ?

(ক) পোল্যান্ড-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি, (খ) মিউনিখ চুক্তি, (গ) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি— এই চুক্তিগুলি হিটলার কেন স্বাক্ষর করেছিলেন ?

প্রশ্ন:- (ক) পোল্যান্ড-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি, (খ) মিউনিখ চুক্তি,  (গ) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি— এই  চুক্তিগুলি হিটলার কেন স্বাক্ষর করেছিলেন ?

নাৎসি দলের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

প্রশ্ন:- নাৎসি দলের পররাষ্ট্র নীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

জার্মানির নাৎসি দলের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য —

(ক) ইউরোপ তথা সারা বিশ্বে জার্মানিকে প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ।

(খ) ভার্সাই সন্ধির অপমান জনক চুক্তিগুলি অমান্য করা ।

নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

প্রশ্ন :- নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

হিটলার বা তাঁর নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল:-