Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 19:19

সাইমন কমিশন (Simon Commission) :

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার যে সংস্কার আইন প্রবর্তন করেছিলেন তা উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয় । তারপর একের পর এক আন্দোলনে ভারতীয় রাজনীতি আবর্তিত হয় । অসহযোগ আন্দোলনের তীব্রতা এবং স্বরাজ্য দলের কর্মসূচি ব্রিটিশ সরকারকে যথেষ্ট ভাবিয়ে তুলেছিল । এই অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের দাবিদাওয়া ও অসন্তোষের মূল কারণগুলি অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিশন গঠন করেন । ইংল্যান্ডের উদারনৈতিক নেতা ও প্রখ্যাত সংবিধান বিশেষজ্ঞ স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে এই কমিশন গঠিত হয়েছিল বলে এটি সাইমন কমিশন নামে পরিচিত । এই কমিশনের সাতজন সদস্যই শ্বেতাঙ্গ এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন । সাইমন কমিশনের বিশিষ্ট সদস্যরা হলেন লর্ড স্ট্র্যাথকোনা, ভাইকাউন্ট বার্নহ্যাম, কর্নেল স্টিফেন ওয়েলিস, লেনফক্স, মেজর এটলি ও এডওয়ার্ড ক্যারোগান । ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ই ফেব্রুয়ারি কমিশনের সদস্যগণ দেশব্যাপী সমীক্ষা চালাবার জন্য ভারতে আসেন । কমিশনে কোনো ভারতীয় প্রতিনিধি না থাকায় ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ হন । এরূপ কমিশন গঠন জাতীয় মান মর্যাদার পরিপন্থী ভেবে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ সহ ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই কমিশন বর্জন করেন । কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রে উৎপাদন হ্রাস, খাদ্যদ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে দেশে কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা অসহনীয় হয়ে ওঠায় দেশের কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণি এই কমিশন নিয়োগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান । কমিশনের সদস্যগণ ভারতে আসার দুবছর পরে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ২৭শে মে কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ।

কমিশন বিরোধী প্রতিক্রিয়া (Anti-Simon Demonstrations) :

(১) সাইমন কমিশনে কোনো ভারতীয় সদস্য না থাকায় এই কমিশনের গঠন ছিল ত্রুটিপূর্ণ । কমিশনের সাত জনই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ । ভারতের শাসনতন্ত্র সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত সাইমন কমিশনের গঠন ও কাজের ধরন ছিল ভারতীয়দের কাছে জাতীয় অপমান স্বরূপ । তাই  ভারতীয়রা সাইমন কমিশন প্রত্যাখ্যান করে ।

(২) ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ই ফেব্রুয়ারি কমিশনের সদস্যগণ বোম্বাই -এ অবতরণ করলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ প্রদর্শন ও হরতাল উদযাপন করা হয় ।

(৩) পাঞ্জাবে লালা লাজপত রায়, উত্তরপ্রদেশে জওহরলাল নেহরু, গোবিন্দবল্লভ পন্থ সাইমন কমিশন বিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে নিগৃহীত হন । ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ৩০ অক্টোবর সাইমন কমিশন বিরোধী এক মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে লালা লাজপত রায় পুলিশের লাঠির আঘাতে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন । এই ঘটনার কয়েকদিন পর ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর লালা লাজপত রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে ।

সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনের ফল :

(১) সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন সারা ভারতে উত্তাল আকার ধারণ করলেও ব্রিটিশ সরকার এই সব প্রতিবাদে কোনো কর্ণপাত করেনি । এই কমিশন যথারীতি দেশব্যাপী সমীক্ষা চালায় ও এই অস্বস্তিকর পরিবেশে কমিশন তাঁদের অনুসন্ধানকার্য শেষ করে স্বদেশে ফিরে যান ।

(২) দুবছর পরে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ২৭ শে মে কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় । রিপোর্টে সুপারিশ করা হয় অবিলম্বে সরকারের উচিত ভারতের সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা । এছাড়াও কিছু কিছু শাসনতান্ত্রিক সংস্কার প্রবর্তনেরও সুপারিশ করা হয় ।

(৩) সাইমন কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন প্রবর্তিত হয় ।

(৪) সাইমন কমিশন বিরোধী গণআন্দোলন ক্রমে আইন অমান্য আন্দোলনে পরিণত হয় ।

*****

Related Items

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ (The Calcutta Science College) :-

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বাংলায় স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে । এই সময় স্বদেশি বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে মা

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স (Indian Association for the Cultivation of science) :-

কায়েমী স্বার্থরক্ষাকারী ও প্রভূত্ববাদী ঔপনিবেশিক বিজ্ঞানচর্চার প্রেক্ষাপটে ঊনিশ শতকে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ভারতীয়দের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞ

বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ

বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ (Development of Science and Technical Education in Bengal):-

ব্রিটিশ সরকার ভারতে পাশ্চাত্য ধাঁচের বিভিন্ন অফিস-আদালত প্রতিষ্ঠা করলে সেখানে কাজের প্রয়োজনে আধুনিক পাশ্চাত্য ও ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মচারীর প্রয়োজন

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও ইউ রায় অ্যান্ড সন্স

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও ইউ রায় অ্যান্ড সন্স (Initiatives Taken by Upendrakishor Roy Choudhury and the U.

ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ

ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ (Press as a Commercial Venture) :

অষ্টাদশ শতকের শেষভাগ থেকে উনবিংশ শতকের প্রথমভাগ পর্যন্ত সময়ে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ছাপাখানা স্থাপিত হয় । ছাপাখানার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ছাপাখানা কেন্দ্রিক মুদ্রণশিল্প একটি