লাহোর অধিবেশন - ১৯৪০ (Lahore Resolution)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/24/2012 - 14:23

লাহোর অধিবেশন (Lahore Resolution,1940)

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লিগের অধিবেশনে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে অবিভক্ত ভারতবর্ষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলিকে নিয়ে ভারতীয় মুসলমানদের জন্য মুসলিম নেতৃবৃন্দ একটি পৃথক সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্রগঠনের দাবি করে প্রস্তাব গ্রহণ করেন । এই প্রস্তাবটি ‘লাহোর প্রস্তাব’ বা ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ নামে পরিচিত । মহম্মদ আলি জিন্নাহ সভাপতির ভাষণে স্পষ্ট ভাষায় ভারত বিভাগের কথা ঘোষণা করেন । লাহোর অধিবেশনে গৃহিত উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলির মধ্যে—

(১) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে উল্লিখিত ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব বাতিল করে এই লাহোর অধিবেশনে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং তার পরিবর্তে মুসলমান প্রধান অঞ্চলগুলির সমন্বয়ে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবি উত্থাপন করা হয় ।

(২) দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য স্বার্থ সংরক্ষণের উপযুক্ত প্রতিশ্রুতি সরকারকে দিতে হবে, এই মর্মে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ।

এভাবে মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশনে লাহোর বা পাকিস্তান প্রস্তাবটি সর্বাধিক গুরুত্ব পায় ।

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বযুদ্ধ অবসানের সম্ভাবনা দেখা দিলে কংগ্রেস ও ব্রিটিশ সরকার এক সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন । কিন্তু উভয় পক্ষই উপলব্ধি করেন যে, যে কোনো প্রকার সমস্যার সমাধানে মুসলিম লিগের সম্মতি প্রয়োজন । এক্ষেত্রে চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী প্রস্তাব দেন যে প্রথমে মুসলিম লিগ ভারতের স্বাধীনতার দাবি স্বীকার করে কংগ্রেসের সঙ্গে একযোগে একটি অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিক । এরপর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগণ ইচ্ছা করলে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে পৃথক রাষ্ট্র গঠন করতে পারবে । সেক্ষেত্রেও প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র নীতি, যোগাযোগ, ব্যবসা বাণিজ্য প্রভৃতি বিষয় উভয় রাষ্ট্রের সম্মতিক্রমে স্থির করা হবে । গান্ধিজিও রাজা গোপালাচারীর প্রস্তাবে সম্মতি দেন । এবার এই প্রস্তাবগুলি নিয়ে গান্ধিজি ও মহম্মদ আলি জিন্না মধ্যে পক্ষকাল ব্যাপী আলোচনা হয় । কিন্তু মহম্মদ আলি জিন্নাহ প্রথমে দেশ বিভাগ এবং তারপর অন্যান্য বিষয়ের আলোচনার দাবিতে অনড় থাকলে গান্ধি-জিন্না বৈঠক ব্যর্থ হয় । ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ঘোষিত ওয়াভেল পরিকল্পনায় একটি সরকার গঠনের বলা হয় । এই সরকার গঠন সংক্রান্ত আলোচনার জন্য ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে জুন লর্ড আর্কিবল্ড ওয়াভেল সিমলাতে এক সর্বদলীয় সম্মেলন আহ্বান করেন । সম্মেলনে মহম্মদ আলি জিন্নাহ একই দাবির পুনরাবৃত্তি করেন অর্থাৎ প্রথমে দেশ বিভাগ এবং তারপর অন্যান্য বিষয়ের আলোচনার দাবিতে অনড় থাকেন এবং আরও বলেন যে ওয়াভেল প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদে যোগদানকারী সব মুসলিম সদস্যকে মুসলিম লিগের সদস্য হতে হবে । কংগ্রেস এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হয় ।

*****

 

Related Items

বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা কর ।

প্রশ্ন : বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা কর ।

মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।

প্রশ্ন : মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।

ঊনিশ শতকের বাংলায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজগুলির কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : ঊনিশ শতকের বাংলায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজগুলির কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল ?

প্রশ্ন : হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল ?

সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো : দেশবিভাগ (১৯৪৭) জনিত উদবাস্তু সমস্যা ।

প্রশ্ন : সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো : দেশবিভাগ (১৯৪৭) জনিত উদবাস্তু সমস্যা ।