মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা (The Mountbatten Plan)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/24/2012 - 14:32

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা (The Mountbatten Plan)

দেশব্যাপী চরম উত্তেজনার মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা প্রত্যার্পণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন । এ বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করার জন্য লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে মার্চ লর্ড ওয়াভেলের স্থলাভিষিক্ত হয়ে লর্ড মাউন্টব্যাটেন দাঙ্গাবিধ্বস্ত ভারতে বড়লাট হয়ে আসেন । তিনি কংগ্রেস ও মুসলিম নেতাদের বোঝালেন যে, দেশবিভাগ অনভিপ্রেত হলেও তৎকালীন রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সব পক্ষেরই উচিত তা মেনে নেওয়া । এর পরই তিনি বাস্তবসম্মত এবং সকলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান বের করেন । তিনি একই সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং ভারত বিভাগের প্রস্তাব রাখেন । মর্মান্তিক ও দুঃখজনক হলেও ভারতের বিস্ফোরক ও বাস্তব পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে জওহারলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল প্রমুখ নেতা মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবে সায় দেন । মহাত্মা গান্ধিও দেশ বিভাগের ব্যাপারে তাঁর নীরব সম্মতির কথা জানান । এরপর মাউন্টব্যাটেন তাঁর ভারত বিভাগের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন ।

এই পরিকল্পনা অনুসারে স্থির হল যে,

(১) সমগ্র ভারতকে পাকিস্তান ও ভারতবর্ষ নামক দুটি স্বাধীন ডোমিনিয়নে ভাগ করা হবে ।

(২) ক্যাবিনেট মিশনের সুপারিশ অনুযায়ী দেশের হিন্দুপ্রধান অঞ্চলগুলি নিয়ে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হবে,

(৩) মুসলমান অধ্যুষিত প্রদেশ— সিন্ধু, ব্রিটিশ বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব এবং পূর্ব বাংলাকে নিয়ে পাকিস্তানের জন্ম হবে ।

(৪) বাংলা ও পাঞ্জাব প্রদেশ দুটি বিভক্ত হবে । প্রদেশ দুটি বিভাগের সময় কোন কোন অঞ্চল কোন ডোমিনিয়ানের সঙ্গে থাকবে তা ঠিক করবে সিরিল র‍্যাডক্লিফের নেতৃত্বে গঠিত 'বর্ডার কমিশন' ।

(৫) উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও শ্রীহট্টে গণভোট দ্বারা স্থির হবে সে সব অঞ্চলের জনগণ 'ভারত' বা 'পাকিস্তান' কোন ডোমিনিয়ানের সঙ্গে থাকবেন ।

(৬) দেশীয় রাজ্যগুলি সার্বভৌম ক্ষমতা ভোগ করবে, তবে প্রয়োজনে যার যার পছন্দ মতো ভারত অথবা পাকিস্তান যে কোনো ডোমিনিয়ানে যোগ দিতে পারবে ।

কাশ্মির সহ অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যই ভারতভূক্তির পক্ষে সায় দেয় । উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও শ্রীহট্টে গণভোটের রায় পাকিস্তানের অনুকূলে যায় । মাউন্টব্যাটেন তাঁর প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় পাঠান । ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩রা জুলাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পেশ করেন ।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার ত্রুটি :

(১) মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনায় আবহমানকাল ধরে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য বন্ধনে আবদ্ধ এই উপমহাদেশকে কৃত্রিম রাজনৈতিক সীমান্তরেখায় বাঁধা হয় ।

(২) এই পরিকল্পনায় ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগকে উৎসাহ দেওয়া হয়, যার ফলশ্রুতিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হয় ।

(৩) মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনায় সাম্প্রদায়িক সমস্যা অমীমাংসিত ছিল ।

(৪) এই পরিকল্পনায় ক্ষমতা হস্তান্তরের পর জন-বিনিময় কর্মসূচি উল্লেখিত ছিল না ।

(৫) মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনায় দেশবিভাগের পরে আসন্ন উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের কোনো নির্দিষ্ট রূপরেখার উল্লেখ রাখা হয় নি ।

*****

Related Items

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে নানা পরিবর্তন ঘটে—

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা কীরূপ ছিল ? ইতালিতে ও জার্মানিতে গণতন্ত্রের পতন হয় কেন ?

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা কীরূপ ছিল ?  ইতালি ও জার্মানিতে গণতন্ত্রের পতন হয় কেন ?

মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনে আর্যবান্ধব সমাজ ও অভিনব ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:-  মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনে আর্যবান্ধব সমাজ ও অভিনব ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর ।

ক্ষুদিরাম বসু ও লালা হরদয়ালকে মনে রাখা হয় কেন ?

প্রশ্ন :-  ক্ষুদিরাম বসু ও লালা হরদয়ালকে মনে রাখা হয় কেন ?

ক্ষুধিরাম বসুকে মনে রাখার কারণ :