ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 04/20/2012 - 19:52

ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার (Expansion of British Empire in India) 

বিভিন্ন পর্যায় (১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ):- ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল বরাবর কয়েকটি ঘাঁটি স্থাপন করে প্রথমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও এদেশ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের কাজ শুরু করে । পরে মোগল সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে সচেষ্ট হয় । ফরাসি, ওলন্দাজ, দিনেমার প্রভৃতি বাণিজ্যসংস্থাকে একে একে বিতাড়িত করে ব্রিটিশরা সর্বশক্তিমান হয়ে ওঠে । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে (Battle of Plassey, —১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জুন মুর্শিদাবাদের তেইশ মাইল দুরে পলাশির প্রান্তরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও সিরাজউদদৌলার যুদ্ধ হয় ) এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে ২২শে অক্টোবর বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নতুন রাজনৈতিক ও সামরিক বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে । বক্সারের যুদ্ধে অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ্-দৌলা পরাজিত হলে লর্ড ক্লাইভ তাঁর সঙ্গে এলাহাবাদের সন্ধি করেন । এই সন্ধির দ্বারা লর্ড ক্লাইভ অযোধ্যার নবাবের কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা এবং কারা ও এলাহাবাদ প্রদেশ দুটি লাভ করে ও বিনা শুল্কে অযোধ্যায় বাণিজ্য করার অধিকার পায় । এরপর ১৭৬৫ সালে ক্লাইভ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে দ্বিতীয় সন্ধি চুক্তি করেন । এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী লর্ড ক্লাইভ কারা ও এলাহাবাদ প্রদেশদুটি মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমকে উপহার দেয় ও বিনিময়ে কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের ভার অর্পণ করে । এই সময় কোম্পানি ইচ্ছা করলেই বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, অযোধ্যা ও দিল্লীর সিংহাসন জয় করতে পারত, কারণ তখন অর্থাৎ ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রশাসনিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক —সমস্ত দিক দিয়েই বাংলা ইংরেজদের করতলগত হয়েছে ।  বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত রাজ্য অযোধ্যা ইংরেজদের অনুগত ‘মিত্র-রাজ্যে' পরিণত হয়েছে এবং ওই একই যুদ্ধে পরাজিত দিল্লীর মোগল সম্রাট কোম্পানির বৃত্তিভোগীতে পরিণত হয়েছেন । কিন্তু ক্লাইভের বিচক্ষণতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই সময়ে ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের পথে না গিয়ে দিল্লীর পরাজিত মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিকে সংহত ও সুদৃঢ় করে তোলে । আর মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের অনুমোদন সাপেক্ষে এদেশে তাদের অধিকার আইনগত বৈধতা পায় । তাই পলাশির যুদ্ধের ফলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের যে ভিত্তি স্থাপিত হয়, বক্সারের যুদ্ধের ফলে তা সম্প্রসারিত ও সুদৃঢ় হয়েছিল । ["Buxar deserves far more than Plassey to be considered as the real origin of the British power in India" — James Stephen].  

দক্ষিণ ভারত : বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ্-দৌলা এবং দিল্লীর মোগল বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমকে হাতের মুঠোর মধ্যে পেয়েও ক্লাইভ তাঁদের শাস্তি দেননি, কারণ তাদের আসল লক্ষ্য ছিল দাক্ষিণাত্যের মারাঠারা ।

****

Related Items

ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার

অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা করলেও প্রথমদিকে তারা এদেশে ইংরেজি ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি । ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজদের আইন-আদালত গড়ে উঠতে শুরু করে । ইংরেজ বণিকরা নানা জায়গায

প্রাচ্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার নীতি নির্ধারণের বিষয়টি তাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টো তাঁর এক প্রতিবেদনে প্রাচ্যশিক্ষা ব্যবস্থার শোচনীয় অবস্থা তুলে ধরে প্রাচ্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ...

উনিশ শতকের বাংলা — শিক্ষা সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

উনিশ শতকের বাংলা — শিক্ষা সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা:-

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাপর্বে বাংলা তথা ভারতের শিক্ষার্থীরা পাঠশালা, টোল, মক্তব ও মাদ্রাসা থেকে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি -র মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করত । এসব প্রতিষ্ঠানে মূলত ধর্মীয় কাহিনি, সংস্কৃত, আরবি

গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা

উনবিংশ শতকের বাংলায় গ্রামীণ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কুমারখালীর পাঠশালার পন্ডিত হরিনাথ মজুমদারের সম্পাদিত 'গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা' নামক পত্রিকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - ইতিহাসের ধারণা ও আধুনিক ইতিহাসচর্চা

ইতিহাসের ধারণা ও আধুনিক ইতিহাসচর্চা অধ্যায় থেকে যে সমস্ত প্রশ্ন বিগত মাধ্যমিক পরীক্ষায় এসেছে এবং আগামী পরীক্ষায় আসতে পারে ।