ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে মারাঠা শক্তির পতনের গুরুত্ব কী ছিল ? কীভাবে মারাঠারা ইংরেজদের পদানত হয় সংক্ষেপে তার বর্ণনা দাও ।

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 01/06/2022 - 14:31

প্রশ্ন:-  ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে মারাঠা শক্তির পতনের গুরুত্ব কী ছিল ? কীভাবে মারাঠারা ইংরেজদের পদানত হয় সংক্ষেপে তার বর্ণনা দাও ।

মারাঠা শক্তির পতনের গুরুত্ব : প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের মাধ্যমে ইংরেজরা মারাঠা শক্তির পতন ঘটায় । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে মারাঠা শক্তির পতনের ফলে পূর্ব ভারতে কলকাতা থেকে পশ্চিম ভারতের মুম্বাই পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইস্ট ইন্ডিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।

ইংরেজদের কাছে মারাঠা শক্তির পতন

(১) প্রথম ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ — পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধে ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে আহম্মদ শাহ আবদালির কাছে মারাঠাদের বিপর্যয় ঘটলেও পেশোয়া মাধব রাও -এর আমলে মারাঠারা আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে । পেশোয়া মাধব রাও -এর অকাল মৃত্যুর পর তাঁর নাবালক ভ্রাতা নারায়ণ রাও পেশোয়া হন, কিন্তু তাঁর পিতৃব্য রঘুনাথ রাও ষড়যন্ত্র করে নারায়ণ রাওকে হত্যা করে পেশোয়া পদ দখল করেন । এরপর নানা ফড়নাবীশ প্রমুখ মারাঠা নেতারা রঘুনাথ রাও -কে গদিচ্যুত করলে রঘুনাথ রাও ইংরেজদের সাহায্যপ্রার্থী হন । এইভাবে প্রথম ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সূত্রপাত হলে পূণার কাছে ইংরেজ বাহিনী পরাস্ত হয় । এরপর ইংরেজরা রঘুনাথ রাও -এর পক্ষ ত্যাগ করে ।

(২) দ্বিতীয় ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ   ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে, হোলকার পেশোয়াকে পুণা থেকে তাড়িয়ে দিলে, তিনি ইংরেজদের শরণাপন্ন হন এবং রাজ্য পুনরুদ্ধারের আশায় পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও ইংরেজদের ‘অধীনতামূলক মিত্রতা’প্রস্তাবে রাজি হন । এই সময় দুই মারাঠা নায়ক সিন্ধিয়া ও ভোঁসলে ইংরেজদের প্রতিপত্তিতে উদ্বিগ্ন হয়ে কোম্পানির রাজ্য আক্রমণ করলে ১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, কিন্তু এই যুদ্ধে তাঁরা পরাস্ত হন । এরপর সিন্ধিয়া ইংরেজদের সঙ্গে ‘অধীনতামূলক মিত্রতায়’ আবদ্ধ হন ।

(৩) তৃতীয় ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ ও মারাঠা শক্তির পতন— গভর্নর-জেনারেল লর্ড ময়রার শাসনকালে ইংরেজরা পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও -কে এক নতুন অপমানজনক সন্ধি স্বাক্ষর করার জন্য বাধ্য করলে তিনি বিদ্রোহী হন । সেই সুযোগে হোলকার ও ভোঁসলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন, ফলে তৃতীয় ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সূত্রপাত হয় । পেশোয়া কিড়কির যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন এবং পরবর্তীকালে হোলকার ও ভোঁসলে পৃথক পৃথক যুদ্ধে পরাস্ত হন ।

এই যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে 

(১) মারাঠা যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়,

(২) পেশোয়ার রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয় এবং

(৩) হোলকার ও ভোঁসলে ইংরেজদের অধীন-মিত্র হিসাবে সন্ধি করতে বাধ্য হন।

*****

Comments

Related Items

পরিবেশের ইতিহাস (History of Environment)

পরিবেশের ইতিহাস (History of Environment) : যুদ্ধ, নগরায়ণ, শিল্পায়ন প্রভৃতির ফলে বর্তমানকালে বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ক্রমে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে । এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিককালে মানুষ নিজেদের সুষ্ঠভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে পর

শহরের ইতিহাস (History of the City)

শহরের ইতিহাস (History of the City) : প্রাচীনকাল থেকে গ্রামগুলি ধারাবাহিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে শহরে পরিণত হয়েছে । তাই প্রতিটি শহরের বিবর্তনের একটি নির্দিষ্ট ইতিহাস থাকে । বিভিন্ন শহরের এই বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে আজকাল বিভিন্ন গবেষক গবেষনার

স্থানীয় ইতিহাস (Local History)

স্থানীয় ইতিহাস (Local History) : বিগত শতক পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ইতিহাস রচনায় জাতীয় স্তরের ইতিহাসের আলোচনাই শুধু গুরুত্ব পেয়ে এসেছে । স্থানীয় ইতিহাসের চর্চার তেমন সেভাবে প্রসার ঘটেনি । আধুনিককালে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় ইতিহাসের চর্চা শু

স্থাপত্যের ইতিহাস (History of Architecture)

স্থাপত্যের ইতিহাস (History of Architecture) : প্রাচীন কালের গুহায় বসবাসকারী মানুষ যখন থেকে ঘরবাড়ি তৈরি করতে শিখেছে, সেদিন থেকেই স্থাপত্য শিল্পের সূত্রপাত ঘটেছে । আধুনিক ইতিহাস চর্চায় স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে । স্থাপত্

বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিদ্যার ইতিহাস

বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিদ্যার ইতিহাস : আদিম যুগে মানুষ যখন থেকে চাকার আবিষ্কার করতে শিখেছে এবং পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালাতে শিখেছে তখন থেকেই বিবর্তনের পথ বেয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যা ধাপে ধাপে উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে । সভ্যতার বিকাশে, জা