ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

Submitted by administrator on Sat, 02/06/2021 - 10:28

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Quit India Movement and the Working Class):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই আন্দোলন ধীরে ধীরে দেশ জুড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সমগ্র বিশ্ব দুটি শক্তি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়, — একটি ইটালি, জার্মানি ও জাপানকে নিয়ে গড়ে ওঠে অক্ষশক্তি [Axis Power], অপরটি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও আমেরিকাকে নিয়ে গঠিত হয় মিত্রশক্তি [Allied Power] । সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানি কর্তৃক আক্রান্ত হলে কমিউনিস্ট পার্টি মিত্রশক্তিকে সমর্থনের নীতি নেয় । এই নীতি মেনেই ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি মিত্রশক্তিভুক্ত ব্রিটিশ -এর বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে । কমিউনিস্ট পার্টি নীতিগতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলেও শ্রমিক শ্রেণি কিন্তু ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে । ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণের পরেই ব্রিটিশ সরকার গান্ধিজি -সহ জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করলে তার প্রতিবাদে ভারতের শ্রমিকশ্রেণি বিক্ষোভ আন্দোলনে শামিল হয় । দিল্লি, কানপুর, লখনউ, বোম্বাই, নাগপুর, আমেদাবাদ, জামশেদপুর প্রভৃতি স্থানে শ্রমিকরা সপ্তাহব্যাপী ধর্মঘট ও হরতাল পালন করে । বিহারের জামশেদপুরে (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) টাটা লৌহ ও ইস্পাত কারখানায় ১৩ দিন ব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয় । জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ শুরু করবে না, এই দাবি জানিয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘট করে । গুজরাটের আমেদাবাদে কাপড়ের কলগুলিতে বস্ত্রশিল্প শ্রমিকরা প্রায় সাড়ে তিন মাস টানা ধর্মঘট করে । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সময়কালে কলকাতার ট্রাম কোম্পানির শ্রমিক ইউনিয়ন বেশ কয়েকবার ধর্মঘটে অংশ গ্রহণ করে ।

১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ভারত ছাড়ো আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও তারপর থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে থাকে এবং আন্দোলন চরমে পৌঁছোয় । অতিরিক্ত সময়ে কাজ না করার দাবিতে বোম্বাই ডক ইয়ার্ডের প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে শামিল হয় । ভাতা বাড়ানোর দাবিতে উত্তর-পশ্চিম রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কর্মীরা ৪ দিন ব্যাপী ধর্মঘট করে । কলকাতা, বোম্বাই বন্দরের শ্রমিকরা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে ইন্দোনেশিয়াগামী জাহাজে মালবোঝাই করতে অস্বীকার করে, কারণ ওই জাহাজে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম দমনে নিযুক্ত সেনাদের রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো হচ্ছিল । বোম্বাইয়ের শ্রমিকরা নৌবিদ্রোহের সমর্থনে ধর্মঘটে যোগদান করে । বোম্বাইয়ের রাজপথে পুলিশ ও সেনাদলের সঙ্গে শ্রমিকদের খণ্ডযুদ্ধে প্রায় ২৫০ জন শ্রমিক নিহত হয় । সারা ভারত ডাক ও তার বিভাগের কর্মীরা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই -এ ধর্মঘটের ডাক দেয় । কমিউনিস্ট পার্টির সহযোগিতা ছাড়াও এভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিকশ্রেণি গৌরবজনক ভূমিকা পালন করেছে ।

****

Comments

Related Items

সংক্ষেপে মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) চরিত্র বিশ্লেষণ কর ।

প্রশ্ন : সংক্ষেপে মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) চরিত্র বিশ্লেষণ কর ।

শিক্ষাবিস্তারে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক কী ? উচ্চশিক্ষার বিকাশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আলোচনা কর ।

প্রশ্ন : শিক্ষাবিস্তারে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক কী ? উচ্চশিক্ষার বিকাশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আলোচনা কর ।

নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলী কী ? সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে পার্থক্যগুলি উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন : নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলী কী ? সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে পার্থক্যগুলি উল্লেখ কর ।

নিরাপত্তা পরিষদের কাজ :

বান্দুং সন্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয় ? এই সন্মেলনের গুরুত্ব নির্ণয় কর । বান্দুং সম্মেলনের নেতৃত্বদানকারী দেশের নাম লেখ ।

প্রশ্ন : বান্দুং সন্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয় ? এই সন্মেলনের গুরুত্ব নির্ণয় কর । বান্দুং সম্মেলনের নেতৃত্বদানকারী দেশের নাম লেখ ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাফল্যের কারণগুলি কী ?

প্রশ্ন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাফল্যের কারণগুলি কী ?