বাংলার বাইরে বিপ্লবী আন্দোলন

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 08/04/2013 - 22:00

বাংলার বাইরে বিপ্লবী আন্দোলন (Revolutionary movements in Outside of Bengal):

বাংলা দেশের বাইরে বিহার, যুক্তপ্রদেশ, রাজস্থান, বোম্বাই এবং মাদ্রাজে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী কার্যকলাপ পরিচালিত হয়েছিল । বাংলার বাইরে সন্ত্রাসবাদীদের যে সকল সংস্থা গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশে গঠিত 'হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন' সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য । চন্দ্রশেখর আজাদ ছিলেন হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন -এর প্রতিষ্টাতা । সশস্ত্র বিপ্লবের দ্বারা ভারতে একটি স্বাধীন প্রজাতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এই 'হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন' -এর লক্ষ । ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ভগৎ সিং এই সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ করেন । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভগৎ সিং নিজেও 'নওজওয়ান ভারত সভা' নামে একটি জঙ্গি যুবসংগঠন গড়ে তুলেছিলেন । এই সংস্থার অন্যতম সদস্য রামপ্রসাদ বিসমিলের নেতৃত্বে বিপ্লবী দল কাকোরির কাছে ট্রেনে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ই আগস্ট রেল ডাকাতিকে কেন্দ্র করে 'কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা' শুরু হয় । অভিযুক্তদের মধ্যে প্রধান ছিলেন রামপ্রসাদ বিসমিল, রোশন সিং, রাজেন লাহিড়ি, শচীন সান্যাল, মন্মথ গুপ্ত, প্রণবেশ ভট্টাচার্য, আসফাকউল্লা প্রমুখ । বিচারে এঁদের অধিকাংশের যাবজ্জীবন, দ্বীপান্তর অথবা সশ্রম কারাদন্ড হয় । রামপ্রসাদ বিসমিল ও অপর তিন সহযোগীর ফাঁসি হয় । এই মামলায় ভগৎ সিং অভিযুক্ত হন নি, যদিও তিনি ছিলেন অন্যতম পরামর্শদাতা ।

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভগৎ সিং হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন -এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন । রুশ বিপ্লবের সমাজতান্ত্রিক আদর্শে তিনি এই দলের নতুন নামকরণ করেন 'হিন্দুস্থান সোসালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন' । পাঞ্জাব, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে এই দলের সক্রিয় ভূমিকা ছিল । সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনে ব্রিটিশ পুলিশের লাঠির আঘাতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর লালা লাজপত রায়ের মৃত্যু হয় । এর প্রতিশোধ নিতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর নির্ভীক ভগৎ সিং লাহোরের পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট মিঃ স্যান্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করেন । ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ৮ই এপ্রিল ভগৎ সিং ও দলের অপর একজন সদস্য বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লির আইন পরিষদে বোমা নিক্ষেপ করেন । ওই সময় আইন পরিষদে বিপ্লবী তৎপরতার বিরুদ্ধে দমন মূলক ব্যবস্থা হিসেবে ট্রেড ডিসপিউট বিলের আলোচনা চলছিল । এই ঘটনার সূত্র ধরে পুলিশ লাহোরে ও সাহারানপুরে দুটি বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পায় । এ দুটির সঙ্গে যুক্ত বিপ্লবীদের গ্রেফতার করে তাঁদের বিরুদ্ধে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক 'লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা' শুরু হয় । মামলা চলাকালে জেলে বন্দি বিপ্লবীদের ওপর পুলিশি নির্যাতন, কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক আচরণ এবং অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টের প্রতিবাদে বিপ্লবীগণ অনশন শুরু করেন । অন্যান্য বন্দিরা পরে অনশন ভঙ্গ করেন । কিন্তু যতীন দাস ৬৩ দিন অনশন চালিয়ে লাহোর জেলে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন । লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার বিচারের রায়ে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে মার্চ ভগৎ সিং, সুখদেব থাপার, শিবরাম রাজগুরু, বটুকেশ্বর দত্ত সহ কয়েকজন বিপ্লবীর ফাঁসি হয় । অন্যান্য অনেকের দীর্ঘমেয়াদি কারাদন্ড হয় । ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে ভগৎ সিং জোর গলায় বলেছিলেন 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ' অর্থাৎ 'বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক' ।

*****

 

Related Items

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ (Students' Role in Armed Revolutionary Struggles) :-

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরাধীন জাতির মুক্তি সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে । ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসেও জাতীয

রশিদ আলি দিবস (Rasid Ali Day)

রশিদ আলি দিবস (Rasid Ali Day) :-

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি লালকেল্লার সামরিক আদালতে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন রশিদ আলিকে কোর্ট মার্শাল করে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলে এই অবিচারের প্রতিবাদে ও তাঁর মুক্তির দাবিতে

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Students' Participation in the Quit India Movement) :-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ড

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Students' Participation in the Civil Disobedience Movement):-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দিলে সেই আন্দোলনে ভারতের ছাত্রসম

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Students' Participation in the Non Co-operation Movement):-

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অপশাসন প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে গান্ধিজির নেতৃত্বে জা