বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 02/14/2021 - 09:31

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Participation of Students in the anti-Partition Movement of Bengal):-

বাংলার মানুষদের ব্রিটিশ বিরোধিতাকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা ঘোষণা করে বলা হয়, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর থেকে  আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হবে । এর প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী যে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে ওঠে তাতে বাংলা তথা ভারতের ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে ।

হাজার হাজার ছাত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারি স্কুলকলেজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগদান করে । এসময়ে কোনো ছাত্র সংগঠন গড়ে না ওঠায় জাতীয় নেতাদের আহ্বানেই ছাত্ররা আন্দোলনে যোগদান করে । বিভিন্ন ছাত্র ও যুবনেতা ছাত্রদের সংগঠিত করে আন্দোলনে শামিল করেন । জাতীয় শিক্ষানীতির প্রস্তাবক সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কর্তৃক ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত 'ডন সোসাইটি', ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৪র্থ নভেম্বর শচীন্দ্রপ্রাসাদ বসুর প্রতিষ্ঠিত 'অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি' প্রভৃতি ছাত্রদের আন্দোলনে শামিল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । কলকাতার রিপন কলেজে (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) এক ছাত্র সমাবেশে ১৭ই জুলাই ছাত্রসমাজ বয়কটের শপথ নেয় । কলকাতার বিভিন্ন কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে ৩১শে জুলাই 'কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি' গড়ে তোলে ।

কলকাতার ইডেন হোস্টেলের ছাত্ররা হোস্টেল প্রাঙ্গণে ব্রিটিশ পণ্যসামগ্রী ও কার্জনের কুশপুত্তলিকা দাহ করে । ৭ই আগস্ট কলকাতার টাউন হলে আয়োজিত বিশাল এক ছাত্রসভায় ছাত্রনেতা হরিনাথ দত্ত বক্তৃতা দেন । ছাত্ররা বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বয়কট করার ডাক দিয়ে ব্রিটিশদের শিক্ষাব্যবস্থা বর্জনের শপথ নেয় । বাংলার বিভিন্ন জেলার ছাত্রসমাজ তাদের এই আহবানে সাড়া দিয়ে পরীক্ষা দিতে অসম্মত হয় । কলকাতার অ্যালবার্ট হলে (বর্তমানে যার নাম ইন্ডিয়ান কফি হাউস) এক সভায় ছাত্রদের সাহায্যের জন্য তহবিল গঠিত হয় । বলা হয় ইউরোপীয়দের পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিয়ে যে সমস্ত ছাত্র স্বদেশি শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে যোগ দেবে তাদেরকে এই তহবিল থেকে সাহায্য করা হবে ।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্ররা ঝাঁপিয়ে পড়লেও ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ছাত্র আন্দোলনের গতিতে ভাটা পড়ে । ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে না ওঠা, দেশীয় প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে সরকারি চাকরি না মেলা প্রভৃতির কারণে ছাত্ররা আবার ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থায় ফিরতে থাকে ।

*****

Comments

Related Items

মজঃফরপুর মামলা (Muzzafarpur Case)

আলিপুর আদালত প্রাঙ্গনে বন্দেমাতরম ধ্বনি উচ্চারণ করার অপরাধে কলকাতার প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড সুশীল সেন নামক ১৬ বছরের এক কিশোরকে প্রকাশ্য স্থানে বেত মারার আদেশ দেন । এই শাস্তির বদলা নিতে ও এই সময় বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে ...

যুগান্তর দল (Jugantar Dal)

অনুশীলন সমিতির আন্দোলনের পদ্ধতিগত দিক থেকে দুটি ধারা ছিল— নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ এবং সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সন্ত্রাস ছড়ানো । বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ছিলেন সশস্ত্র আন্দোলন ও গুপ্ত হত্যার পক্ষপাতী । ক্রমে অনুশীলন সমিতির মূল ধারার সঙ্গে বারীন্দ্রকুমার ...

অনুশীলন সমিতি (Anushilan Samiti)

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পরবর্তী ঘটনাবলি বাংলা তথা ভারতে বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল । স্বদেশি আন্দোলনের সময় বাংলায় বিপ্লবের প্রস্তুতি পুরোদমে চলতে থাকে । আন্দোলনকারী ছাত্র ও যুবকবৃন্দ পুলিশী নির্যাতন এড়াতে অনেক সময় আত্মগোপন করতেন ...

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন (National Education Movement)

দেশের বিভিন্ন অংশে ছাত্রসমাজ সভাসমিতির মাধ্যমে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলে । স্বদেশি আদর্শ প্রচার এবং বিদেশি পণ্যের দোকানে পিকেটিং করার ক্ষেত্রে ছাত্ররা মুখ্য ভূমিকা নিয়ে ছিল । সরকার তাই ছাত্রদের বিরুদ্ধে কার্লাইল সার্কুলার জারি করেন ...

স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন (Boycott and Swadeshi Movement)

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে লর্ড কার্জন সিমলায় বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে বাংলায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় । বাংলার বিভিন্ন স্তরের মানুষ এবং পত্রপত্রিকাগুলি ব্রিটিশের সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেন । কার্জন তাঁর সিমলা ঘোষণায় ...