পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাজা রামমোহন রায় ও রাজা রাধাকান্ত দেব -এর ভূমিকা

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 12/03/2020 - 09:17

ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্যশিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন । রাজা রামমোহন রায় মনে করতেন আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই নতুন ভারত গড়ে উঠবে । তিনি নিজের খরচে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় 'ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি' নামে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে পাস হওয়া সনদ আইনের দ্বারা ভারতীয় জনশিক্ষার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতি বছর এক লক্ষ টাকা খরচ করার সিদ্ধান্ত নেয় । রাজা রামমোহন রায় ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর লর্ড আমহার্স্টকে লিখিত এক পত্রে অনুরোধ করেন যে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে ভারতীয়দেের শিক্ষার জন্য বরাদ্দ ১ লক্ষ টাকা যেন ইংরেজিি, গণিত, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, অস্থিবিদ্যা, পাশ্চাত্য দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য খরচ করা হয় । স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ -কে তিনি 'জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন' যার বর্তমান নাম 'স্কটিশ চার্চ কলেজ' প্রতিষ্ঠিায় সাহায্য করেন । নানা কুসংস্কার থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে পাশ্চাত্য সমাজবিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে রাজা রামমোহন রায় ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে 'বেদান্ত কলেজ' প্রতিষ্ঠা করেন ।

রাধাকান্ত দেবও ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্যশিক্ষার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন । রাধাকান্ত দেব চেয়েছিলেন প্রাচ্যবাদী শিক্ষাকাঠামোর মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ হোক । তিনি নিজের পরিবারের মহিলাদের শিক্ষাদানের জন্য ইংরেজ শিক্ষিকা নিযুক্ত করেন । নারীশিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নিতে রাধাকান্ত দেব ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে ডব্লিউ এইচ পিয়ার্স -কে এক পত্রের দ্বারা অনুরোধ জানান এবং ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'স্ত্রীশিক্ষা বিষয়ক' নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন । তিনি হিন্দু কলেজের ছাত্রদের ইংরেজি সাহিত্য ও পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা জন্য উৎসাহিত করেন । ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় 'হিন্দুুু কলেজ' বর্তমানে 'প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠিার ক্ষেত্রে ডেভিড হেয়ার, বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়, স্যার হাইড ইস্ট প্রমুখের সঙ্গে মিলিতভাবে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ও এই কলেজের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । পরবর্তীকালে তিনি এই কলেজের অধিকর্তা ও কর্মাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন । তিনি স্কুল বুক সোসাইটি ও বিভিন্ন স্কুল সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত থেকে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে উদ্যোগী হন ।

*******

Comments

Related Items

বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (Indian universities Act, 1904)

লর্ড কার্জন প্রতিক্রিয়াশীল শাসক হলেও শিক্ষার ব্যাপারে তিনি খুবই উৎসাহী ছিলেন । লর্ড কার্জন স্যার টমাস র‍্যালের সভাপতিত্বে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে 'র‍্যালে কমিশন' গঠন করেছিলেন । এটি 'ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন' নামেও পরিচিত । স্যার টমাস র‍্যালে ছিলেন বড়লাটের কার্যনির্বাহক সমিতির আইন সদস্য । এই কমিশন ...

হান্টার কমিশন (Hunter Education Commission)

১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপণের সময় উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে হান্টার কমিশন গঠিত হয় । এই কমিশনের কাজ ছিল দেশে ইংরেজি শিক্ষার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা । শিক্ষার প্রসারে হান্টার কমিশনের ভূমিকা এক অভিনব অধ্যায়ের সূচনা করেছিল । হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি ছিল ....

উডের ডেসপ্যাচ (Wood's Despatch of 1854)

শিক্ষা সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান করার জন্য ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির পরিচালক সমিতির সভাপতি স্যার চার্লস উড 'শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাব' (Wood's Education Despatch) নামে একটি শিক্ষা নীতি রচনা করে ভারতে পাঠান । ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে চার্লস উডের সুপারিশ ...

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. ভারতে 'হাফটোন' প্রিন্টিং পদ্ধতি প্রবর্তন করেন—     [মাধ্যমিক-২০১৭]

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হল—       [মাধ্যমিক -২০১৭]