পাগলপন্থী বিদ্রোহ (প্রথম পর্ব ১৮২৫ - ২৭ খ্রিস্টাব্দে)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 12/28/2020 - 17:55

পাগলপন্থী বিদ্রোহ (Pagal Panthi Revolt) : ঊনিশ শতকে বাংলায় যেসব কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলির মধ্যে 'পাগলপন্থী' বিদ্রোহ বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল । ঔপনিবেশিক শাসনকালে অবিভক্ত বাংলায় ময়মনসিং জেলার শেরপুর পরগনার পাহাড়ি এলাকায় গারো ও হাজং উপজাতির মানুষরা বসবাস করত । করম শাহ নামে জনৈক ফকির ও সুফি সাধক এই উপজাতির গোষ্ঠীর মধ্যে 'পাগলপন্থী' বা 'বাউল ধর্ম' নামে এক নতুন ধর্মমত প্রচার করেন । এই ধর্মের মূলকথা ছিল—সাম্য, সৌভ্রাতৃত্ব ও সত্যনিষ্ঠ ।

ময়মনসিংহ এলাকায় বসবাসকারী গারো ও হাজং উপজাতির লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানকার জমিদারদের হাতে অত্যাচারিত হয় । জমিদাররা এদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে কর আদায় করত । ১৮২৪-২৬ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ইঙ্গ-ব্রহ্ম (Anglo-Burmese) যুদ্ধে যে বিপুল পরিমাণ অর্থব্যয় হয়েছিল তা পূরণ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ময়মনসিংহ জেলার কৃষকদের ওপর খাজনার পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেয় । ব্রিটিশদের সহযোগী জমিদারেরাও কৃষকদের ওপর তীব্র শোষণ চালাতে শুরু করে । ব্রিটিশ শাসন ময়মনসিংহ জেলার চিরাচরিত গ্রামীন কাঠামো ভেঙ্গে দেয় । এইসব অপশাসনের বিরুদ্ধে করম শাহ -এর নেতৃত্বে এরা প্রথম জমিদারদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হয় । করম শাহ এই বিদ্রোহ শুরু করলেও তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র টিপু শাহর নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ শক্তিশালী হয়ে ওঠে । টিপু শাহর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা শেরপুরের জমিদারের কাছারি আক্রমণ করে ও থানায় আগুন লাগিয়ে দেয়, শহরে লুঠপাট চালায় এবং ময়মনসিংহের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘেরাও করে ।

বিদ্রোহীরা ঘোষণা করে যে —

(১) তারা আর জমিদারদের আধিপত্য স্বীকার করবে না ।

(২) সামরিক রাস্তা তৈরির কাজ করবে না বা এই ধরনের কোনো কাজে কোনোরকম সাহায্য করবে না ।

(৩) ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক আর রাখবে না বলে জানিয়ে দেয় ।  

শেষপর্যন্ত এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও তা জমিদার ও ব্রিটিশ-বিরোধী বিদ্রোহের স্বীকৃতি পায় । অধ্যাপক বিনয়ভূষণ চৌধুরির মতে, পাগলপন্থীদের আন্দোলন জমিদার ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল ।

****

Comments

Related Items

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

প্রশ্ন:-  আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান—

’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

প্রশ্ন:-  ’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল 'করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে' ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

১৯৪২ সালের ৮ই আগষ্ট ‘ভারত-ছাড়ো প্রস্তাব’ গৃহীত হলে পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগষ্ট, ১৯৪২ এর ভোর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়, যেমন—

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাস্ট্যাস্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

প্রশ্ন:-  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান বিশেষভাবে স্মরনীয় ।