দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল (Results of the Second World War)

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 07/19/2013 - 15:14

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল (Results of the World War-II) :

(১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর ধ্বংস যজ্ঞ ঘটনা । এর ফল হয়েছিল মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী । যুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ই আগস্ট জাপানের হিরোসিমায় ও ৭ই আগস্ট নাগাসাকিতে আমেরিকা পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে । আমেরিকার নিক্ষিপ্ত পরমাণু বোমায় জাপানের দুটি শহর হিরোসিমা ও নাগাসাকি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় । মানুষের ইতিহাসে এতবড় ধ্বংসলীলা আর সংঘটিত হয় নি । এই যুদ্ধের ফলে আমেরিকা ও রাশিয়া পৃথিবীর মধ্যে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অধিকারী হয় । ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশের স্থান হয় দ্বিতীয় সারিতে । ইতালিতে ফ্যাসিবাদী সরকারের জায়গায় প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় । জার্মানি দ্বিখন্ডিত হয়ে পূর্ব জার্মানি এবং পশ্চিম জার্মানি দুইটি দেশে বিভক্ত হয় ।

(২) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্যবাদী আদর্শ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে । সর্বপ্রথম রাশিয়ার সাম্যবাদী আদর্শ জয়যুক্ত হয় । পরে চিন, পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি ইত্যাদি দেশ সাম্যবাদী আদর্শ গ্রহণ করে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় । সমাজতান্ত্রিক প্রবক্তা রূপে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট দল আত্মপ্রকাশ করে । একে কেন্দ্র করে আবার পৃথিবীর রাষ্ট্রসমূহ দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে যায় । একদিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি এবং তাঁদের মিত্র দেশগুলি, আর অন্যদিকে রাশিয়া, পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ । এর মধ্যে আবার কয়েকটি দেশ নিরপেক্ষ থেকে যায় । ভারত তার অন্যতম । এভাবে দুটি শিবিরে বিভক্ত দেশগুলির মধ্যে এক ধরণের স্নায়ুর লড়াই শুরু হয়, যার নাম ঠান্ডা যুদ্ধ

(৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে পরাধীন দেশগুলিতে স্বাধীনতার লড়াই শুরু হয়ে যায় । সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি বুঝতে পারে যে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসান ঘটতে আর দেরি নেই । দেশে দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে তারা নিজ নিজ উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা দানে তৎপর হয় । ফলে অনেক দেশ স্বাধীনতা লাভ করে ।

(৪) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা হয় । আজ পর্যন্ত এই বিশ্ব সংস্থা পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখতে ও মানুষের সার্বিক উন্নয়নে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে ।

******

Related Items

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ (The Calcutta Science College) :-

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বাংলায় স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে । এই সময় স্বদেশি বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে মা

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স (Indian Association for the Cultivation of science) :-

কায়েমী স্বার্থরক্ষাকারী ও প্রভূত্ববাদী ঔপনিবেশিক বিজ্ঞানচর্চার প্রেক্ষাপটে ঊনিশ শতকে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ভারতীয়দের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞ

বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ

বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ (Development of Science and Technical Education in Bengal):-

ব্রিটিশ সরকার ভারতে পাশ্চাত্য ধাঁচের বিভিন্ন অফিস-আদালত প্রতিষ্ঠা করলে সেখানে কাজের প্রয়োজনে আধুনিক পাশ্চাত্য ও ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মচারীর প্রয়োজন

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও ইউ রায় অ্যান্ড সন্স

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও ইউ রায় অ্যান্ড সন্স (Initiatives Taken by Upendrakishor Roy Choudhury and the U.

ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ

ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ (Press as a Commercial Venture) :

অষ্টাদশ শতকের শেষভাগ থেকে উনবিংশ শতকের প্রথমভাগ পর্যন্ত সময়ে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ছাপাখানা স্থাপিত হয় । ছাপাখানার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ছাপাখানা কেন্দ্রিক মুদ্রণশিল্প একটি