গান্ধী আরউইন চুক্তি (The Gandhi-Irwin Pact)

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 07/13/2013 - 17:48

গান্ধী আরউইন চুক্তি (The Gandhi-Irwin Pact) :

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে মে সাইমন কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাইমন কমিশনের রিপোর্ট বিচার বিবেচনার জন্য ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ই নভেম্বর ভারতের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের এক বৈঠক আহ্বান করেন । জাতীয় কংগ্রেসের কোনো প্রতিনিধি এই বৈঠকে যোগদান করে নি । ভারতের বৃহত্তম জনসংখ্যার প্রতিনিধি কংগ্রেসের অনুপস্থিতিতে এই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় নি । ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড আশা প্রকাশ করেন যে, কংগ্রেস পরবর্তী বৈঠক সমূহে যোগ দেবে । এই প্রচেষ্টায় সরকার বিনা শর্তে গান্ধিজিকে মুক্তি দেয় । এরপর গান্ধিজি ভাইসরয় লর্ড আরউইনের সঙ্গে এক দীর্ঘ বৈঠকে মিলিত হন । ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে, ৫ই মার্চ গান্ধী-আরউইন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এই চুক্তির শর্তানুসারে ঠিক হয়, গান্ধিজি আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবেন এবং দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন । গান্ধী-আরউইন চুক্তি মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—

(১) সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া, 

(২) দমনমূলক আইন ও অর্ডিনান্স প্রত্যাহার করে নেওয়া, 

(৩) আইন অমান্য আন্দোলনে যাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া,

(৪) সরকারের লবণের একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ করা । লবণ তৈরির অনুকূল পরিবেশ থাকলে এখন থেকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য লবণ তৈরি করতে পারবে প্রভৃতি ।

আরউইন গান্ধিজির দেওয়া শর্তাবলি পুরোপুরি মেনে নেন নি । আরউইন রাজবন্দিদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে, বাজেয়াপ্ত বিষয় সম্পত্তি আন্দোলনকারীদের ফিরিয়ে দিতে এবং সমুদ্রতীর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসবাসকারী ব্যক্তিদের বিনা শুল্কে লবণ উৎপাদনের অনুমতি দিতে স্বীকৃতি দিলেন । ভগৎ সিং, রাজগুরু, সুখদেব ও বটুকেশ্বরের মৃত্যুদন্ড নিয়ে গান্ধিজি কোনো আলোচনা না করায় জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতা গান্ধিজিকে সমালোচনা ও নানা দোষারোপ করেন । জনগণের সামগ্রিক স্বার্থের পরিপন্থী গান্ধি-আরউইন চুক্তি কংগ্রেসের মধ্যে দারুণ ভাবে সমালোচিত হয় । সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু । আইন অমান্য আন্দোলন বন্ধ হবার ফলে কংগ্রেসের পক্ষে মুখ রক্ষার উপায় হিসাবে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের সিদ্ধান্ত সহ গান্ধি-আরউইন চুক্তি কংগ্রেসে অনুমোদিত হয় ।

*****

Related Items

ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন (Cabinet Mission)

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি বরাবরই ভারতকে স্বাধীনতা দানের পক্ষপাতী ছিলেন । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌ-বিদ্রোহের অগ্রগতি লক্ষ্য করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ভারতের রাজনৈতিক সংকট মোচনের জন্য ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্যোগ নেন ...

লাহোর অধিবেশন - ১৯৪০ (Lahore Resolution)

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে মার্চ লাহোরে মুসলিম লিগের অধিবেশন বসে । এই অধিবেশনে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে অবিভক্ত ভারতবর্ষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলিকে নিয়ে ভারতীয় মুসলমানদের জন্য মুসলিম নেতৃবৃন্দ একটি পৃথক সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্রগঠনের দাবি করে প্রস্তাব গ্রহণ করেন ...

ভারতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পটভূমি - প্রথম পর্যায়

ভারতবর্ষে ইংরেজ রাজত্ব শুরু হওয়ার পর থেকেই বৃহত্তর মুসলিম সম্প্রদায় ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মোটামুটি মিত্রভাবাপন্ন ছিলেন । ইংরেজ সরকারও ভারতে তাদের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য এই মৈত্রীকে জোরদার করে তুলতে তত্পর ছিল । ভারতবাসীর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ভারতে ...

ছাত্র আন্দোলন (Student Movement)

ভারতের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে ছাত্রদল সব সময়ই পুরোভাগে ছিলেন । বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ভারতবর্ষ এক সংকটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ক্রমবর্ধমান খাদ্যাভাব, দুর্ভিক্ষ, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাব, মজুতদারি, কালোবাজারি, শিল্পে মন্দা, ...

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে গণ আন্দোলন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নানা গণসংগঠন অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে বিভিন্নমুখী আন্দোলন গড়ে তোলে । এই সব আন্দোলনগুলির মধ্যে ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দের তেভাগা আন্দোলন অন্যতম । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত Floud Commission -এর সুপারিশ অনুযায়ী ...