ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন (Cabinet Mission)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/24/2012 - 14:27

ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন (Cabinet Mission) : ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি বরাবরই ভারতকে স্বাধীনতা দানের পক্ষপাতী ছিলেন । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌ-বিদ্রোহের অগ্রগতি লক্ষ্য করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ভারতের রাজনৈতিক সংকট মোচনের জন্য ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্যোগ নেন । তিনি ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে মার্চ তিন সদস্য বিশিষ্ট ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার একটি প্রতিনিধি দলকে ভারতে পাঠান । এটি ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন নামে পরিচিত । এই দলে ছিলেন স্যার পেথিক লরেন্স, স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এবং এ. ডি. আলেকজান্ডার । ক্যাবিনেট মিশনের রিপোর্টে যে সব সুপারিশের কথা বলা হয় —

(১) ব্রিটিশ শাসিত ভারত ও আঞ্চলিক রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হবে এবং ক্ষমতা বন্টন নীতি গৃহিত হবে ।

(২) ভারতের হিন্দু অধ্যুষিত প্রদেশগুলি 'ক', মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশগুলি 'খ' এবং বাংলা ও আসাম প্রদেশকে 'গ' শ্রেণিভুক্ত করা হবে ।

(৩) এই প্রদেশগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ভারতের সংবিধান রচনার জন্য একটি গণপরিষদ গঠিত হবে ।

(৪) সাম্প্রদায়িক নীতির ভিত্তিতে গণপরিষদ গঠন ও প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন হবে ।

(৫) কোনো প্রদেশ ইচ্ছা করলে নতুন সংবিধান রচনা করতে পারবে ।

(৬) এ ছাড়া নতুন সংবিধান রচনা না হওয়া পর্যন্ত ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দল সমূহের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে ।

ক্যাবিনেট মিশন তাঁদের পরিকল্পনায় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করে এক ঐক্যবদ্ধ ভারত গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন । এছাড়া ক্যাবিনেট মিশন ভারতীয় রাজন্যবর্গকে তাঁদের ভাগ্য নির্ধারণেরও সুযোগ দিয়েছিলেন । মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব অনুসারে একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা লক্ষ্য করে মুসলিমগণ সন্তুষ্ট হয়েছিলেন । কিন্তু অন্য সব বিষয়ে সম্মতি থাকলেও সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে প্রদেশগুলির শ্রেণিবিভাগ ও চিহ্নিত করণ কংগ্রেসের মনঃপুত হয় নি । কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসকে অন্তর্বর্তী সরকার ও সংবিধান সভাকে যথাসম্ভব স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলে কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব গ্রহণ করে ।

এরপরই লর্ড ওয়াভেল কংগ্রেস সভাপতি জওহরলাল নেহরুকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে আহ্বান জানান । এতে মহম্মদ আলি জিন্নাহ ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে পাকিস্তান দাবি আদায়ের জন্য ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস-এর ডাক দেন । দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ওই দিনটি শান্তিপূর্ণ ভাবে অতিবাহিত হলেও কলকাতা, নোয়াখালি এবং ত্রিপুরায় ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেধে যায় । অসংখ্য জীবনহানি, সম্পত্তি নাশ, লুঠতরাজের মধ্যে দিয়ে দিনটি অতিবাহিত হয় । বাংলার দাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব প্রভৃতি স্থানেও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের আগুন জ্বলে ওঠে । আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয় । সবচেয়ে লক্ষনীয় বিষয় ছিল, কেন্দ্রে ওয়াভেল সরকার কিংবা রাজ্যে লিগ সরকার কেউই এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিবারণে কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে নি বা নেওয়ার চেষ্টা করে নি ।

*****

Related Items

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (U.N.O) প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনা কর । জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থাগুলির নাম কর ।

প্রশ্ন : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (U.N.O) প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনা কর । জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থাগুলির নাম কর ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংক্ষেপে লেখ ।

প্রশ্ন : ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংক্ষেপে লেখ ।

প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা

সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।

ভারতের বিচারব্যবস্থার শীর্ষে আছে সুপ্রিমকোর্ট । এই সুপ্রিমকোর্ট একাধারে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত এবং আপিল আদালত হিসেবে কাজ করে ।

রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা কর ।

প্রশ্ন :  রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা কর ।

(১) রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেন রাজ্যপাল । রাজ্য প্রশাসনের সমস্ত ক্ষমতা তাঁর ওপর ন্যস্ত থাকে ।

ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তাৎপর্য ও জাতীয় কংগ্রেসের সাফল্য সম্পর্কে লেখ ।

প্রশ্ন : ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তাৎপর্য ও জাতীয় কংগ্রেসের সাফল্য সম্পর্কে লেখ ।