Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 01/31/2021 - 17:47

একা আন্দোলন (The Eka Movement):-

মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলে উত্তরপ্রদেশে এই আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব দেখা যায় । ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে যুক্তপ্রদেশের (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ) হরদই, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি অঞ্চলে একটি কৃষক বিদ্রোহ ঘটে । এই বিদ্রোহ 'একতা' বা 'একা' আন্দোলন নামে খ্যাত । আন্দোলনকারী কৃষকরা একতাবদ্ধ থাকার শপথ নেওয়ায় এই আন্দোলনের নাম হয় 'একা' বা 'একতা' আন্দোলন । মাদারি পাশি নামে অনুন্নত সম্প্রদায়ের এক চরমপন্থী নেতা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । এই আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি ছিল — (i) কৃষকদের ওপর নথিবদ্ধ করের ওপর অতিরিক্ত আরও ৫০ শতাংশ কর আরোপ, (ii) কর আদায়ে ঠিকাদারদের চরম অত্যাচার, (iii) প্রভুর জমি ও খামারে কৃষককে বিনা বেতনে বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করা প্রভৃতি ।

কংগ্রেস ও খিলাফত নেতারা এই আন্দোলনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন । এক সমাবেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আন্দোলনকারী কৃষকেরা শপথ গ্রহণ করে যে, (i) তারা যথাসময়ে কর প্রদান করবে, কিন্তু নথিবদ্ধ করের ওপর ধার্য অতিরিক্ত কর দেবে না, (ii) জমি থেকে উৎখাত করলেও তারা জমি ছেড়ে যাবে না, (iii) বেগার শ্রম দেবে না, (iv) অপরাধীদের কোনো ভাবে সাহায্য করবে না, (v) তারা পঞ্চায়েতের যাবতীয় সিদ্ধান্ত সবসময় মেনে নেবে ।

কংগ্রেস ও খিলাফত নেতাদের শান্তিপূর্ণ অহিংস আন্দোলন কৃষকেরা সমর্থন করেনি । আন্দোলনকারী কৃষকেরা কুমায়ুন অঞ্চলের সংরক্ষিত অরণ্য জ্বালিয়ে দেয় । প্রথমদিকে কংগ্রেস ও জাতীয়তাবাদী নেতারা একা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানালেও এই আন্দোলনে হিংসার প্রবেশ ঘটলে কংগ্রেস ও জাতীয়তাবাদী নেতারা এই আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় । একা আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে কংগ্রেস ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ সরে গেলে আন্দোলন কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে । তারপর ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের মধ্যে ব্রিটিশ সরকার চরম দমননীতি প্রয়োগ করে এই আন্দোলন ধ্বংস করে দেয় । মাদারি পাশি কারারুদ্ধ হন । এই ভাবে একা আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে ।

****

Comments

Related Items

সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় হিন্দুসমাজে নারীরা বিভিন্ন ধরণের সামাজিক নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার শিকর হতেন । এই সব নির্যাতনের মধ্যে অন্যতম ছিল সতীদাহপ্রথা বা সহমরণ । এই প্রথা অনুযায়ী ঊনিশ শতকের সূচনালগ্নেও বাংলা তথা ভারতীয় হিন্দুসমাজে মৃত স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় তার বিধবা...

উনিশ শতকের বাংলায় ব্রাহ্মসমাজ সমূহের উদ্যোগ

উনিশ শতকের প্রথমদিকে বাংলার সমাজজীবনে বিভিন্ন ধরণের কুপ্রথা প্রচলিত ছিল । সতীদাহপ্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, দেবদাসীপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, কৌলিন্য প্রথা, গঙ্গাজলে সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি নানান অমানবিক কুপ্রথা ও মানুষের মনে অন্ধবিশ্বাস বাংলার সমাজজীবনকে জর্জরিত

উনিশ শতকের বাংলা — সমাজ সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

উনিশ শতকের শুরুর দিকে বাংলায় ব্রিটিশ শাসন সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় । সেই সময় বাংলার সমাজজীবনে চরম দুর্দিন চলছিল । হিন্দুসমাজে তখন ব্রাহ্মণদের প্রতিপত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল এবং তারাই সমাজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন । হিন্দুসমাজে প্রকট জাতিভেদ প্রথা চালু ছিল । হিন্দুসমাজ ছিল

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষার বিকাশ

১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উড শিক্ষানীতির ওপর একটি পরিকল্পনা পেশ করেন যা 'উডের ডেসপ্যাচ' নামে পরিচিত । এই শিক্ষা পরিকল্পনায় যে সমস্ত সুপারিশগুলি করা হয় সেগুলির মধ্যে অন্যতম

মধুসূদন গুপ্ত

ভারতে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা প্রসারের সঙ্গে মধুসূদন গুপ্তের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত । তিনি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ডেভিড হেয়ারের 'পটলডাঙ্গা স্কুলে' প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা নিয়ে পড়াশুনা ...