উনিশ শতকের বাংলা —সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যে সমাজের প্রতিফলন

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 09/28/2020 - 07:31

উনিশ শতকের বাংলা —সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যে সমাজের প্রতিফলন :-

ব্রিটিশ শাসন ভারতের শিক্ষা, সমাজ ও ধর্মজীবনকে প্রভাবিত করেছিল । শিক্ষিত ভারতীয়দের সংস্কার প্রচেষ্টা এক নতুন ভারত গঠনের দিশা দেখায় । উনিশ শতকে বাংলার বিভিন্ন সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যে বাংলার সমাজ, সংস্কৃতির চিত্র ফুটে উঠে । পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির স্পর্শে এই সময় বাংলায় নবচেতনার প্রকাশ ঘটে ও বাঙালির শিক্ষা, সমাজ ও ধর্মজীবনে এক নতুন গতিশীলতা ও সৃজনশীলতার জন্ম নেয়, যা জাতীয়তাবাদের ভিত্তি নির্মাণে সহায়ক হয়েছিল ।

১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে জানুয়ারি মাসে খ্রিস্টান মিশনারীরা হিকির 'বেঙ্গল গেজেট' নামে ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলায় সংবাদপত্রের সূচনা ঘটান । ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন কর্তৃক বাংলা মাসিক 'দিগদর্শন' প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলা সাময়িকপত্রের সূচনা ঘটে । দিগদর্শন প্রকাশের পর বাংলা ভাষায় প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা 'সমাচার দর্পণ' প্রকাশিত হয় । বাংলা ভাষার বাঙালি পরিচালিত গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় প্রথম সংবাদপত্র 'বাঙ্গাল গেজেটি'' প্রকাশিত হয় । এরপর তারাচাঁদ দত্ত ও ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় 'সম্বাদ কৌমুদী' । ১৮২২ সালের ৫ই মার্চ ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত পত্রিকা 'সমাচার চন্দ্রিকা' প্রকাশিত হয় । এটি রক্ষণশীল হিন্দু সম্প্রদায়ের মুখপত্রে পরিণত হয় । ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে কবি ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় 'সংবাদ প্রভাকর' নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা । এটি আট বছর পর ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে দৈনিক পত্রিকা হিসাবে প্রকাশিত হতে থাকে এবং এটিই প্রথম বাংলা দৈনিক পত্রিকা । দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ -এর সম্পাদনায় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই নভেম্বর প্রকাশিত হয় 'সোমপ্রকাশ' সাপ্তাহিক পত্রিকা । সোমপ্রকাশ -এর পর ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য সাময়িকপত্র ছিল 'রহস্যসন্দর্ভ', 'অবোধবন্ধু', 'গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা', 'বামাবোধিনী' । ভারতে প্রথম বাণিজ্য-বিষয়ক বাংলা ভাষায় প্রকাশিত দৈনিক সংবাদপত্র ছিল জয়কালী বসু সম্পাদিত 'মহাজন দর্পণ' । এ ছাড়াও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয় কালিপ্রসাদ ঘোষ সম্পাদিত সাপ্তাহিক সংবাদপত্র 'হিন্দু ইন্টেলিজেন্সিয়ার' । তারাচাঁদ সম্পাদিত ইংরেজি পাক্ষিক 'কুইল' । কলকাতা থেকে ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় হিন্দি ভাষায় শ্যামসুন্দর সেন সম্পাদিত প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র 'সমাচার সুধাবর্শন' । এই সমস্ত সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রগুলিতে সমকালীন সমাজজীবনের চিত্র ছাড়াও নবীন সাহিত্যিকদের সাহিত্য-চর্চার পরিচয় মেলে ।

******

Comments

Related Items

মধুসূদন গুপ্ত

ভারতে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা প্রসারের সঙ্গে মধুসূদন গুপ্তের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত । তিনি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ডেভিড হেয়ারের 'পটলডাঙ্গা স্কুলে' প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা নিয়ে পড়াশুনা ...

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ:-

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্নে ভারতে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসা-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল । পরবর্তীকালে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক দেশীয় চিকিৎসা-শাস্ত্রে শিক্ষাদানের পরিবর্তে আধু

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ডেভিড হেয়ার ও জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন -এর ভূমিকা

উনিশ শতকে যে সব মানুষ বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ডেভিড হেয়ার । ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এসে ঘড়ির ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন । ঔ

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাজা রামমোহন রায় ও রাজা রাধাকান্ত দেব -এর ভূমিকা

ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্যশিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন । রাজা রামমোহন রায় মনে করতেন আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই নতুন ভারত গড়ে উঠবে । তিনি নিজের খরচে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় 'ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি' নামে

নারীশিক্ষা ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত নানা রকম সামাজিক বিধিনিষেধের ফলে বাংলায় নারীশিক্ষার বিশেষ প্রসার ঘটেনি । এরপর থেকে উনিশ শতকে ভারতে নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে কিছু সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ শুরু হয় । সমষ্টিগত উদ্যোগে নব্যবঙ্গীয় গোষ্ঠী, খ্রিস্টান মিশনারি এবং ব্রাহ্মসমা