ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণনীতি

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 21:50

ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণনীতি :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হলে জার্মানি ভার্সাই সন্ধি চুক্তির অপমান জনক ও জোর জবরদস্তি মূলক শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হয় । মিত্রপক্ষের আসল উদ্দেশ্য ছিল ভার্সাই সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পরাজিত জার্মানিকে সবদিক থেকে কোণঠাসা করে রাখা । জার্মানি নাৎসী নেতা হিটলার প্রথম থেকেই এইসব অন্যায় দাবির বিরোধিতা করেছিলেন । হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানি প্রতিশোধ স্পৃহায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে । জাপান ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চিনের মাঞ্চুরিয়া দখল করে । ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে চিনের নানকিং, পিকিং সহ বহু শহরের দখল নেই । ইটালি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে আবিসিনিয়া দখল করে । এইসব দেখে জার্মানিও সাম্রাজ্য বিস্তারে লেগে পড়ে । রাশিয়াও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলি দখলে এনে তার মধ্য দিয়েই ভূমধ্যসাগরে প্রবেশের পথ খুঁজছিল । এই অবস্থায় জার্মানি ও ইটালিকে বাধা দেওয়ার পরিবর্তে দুই শক্তিশালী দেশ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তাদের প্রতি তোষণ নীতি গ্রহণ করে । ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তোষণ নীতি গ্রহণ করায় নাৎসি জার্মানি হিটলারের নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়ে ওঠে । হিটলার আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন । তিনি রাইন ভূখন্ড, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া প্রভৃতি দেশগুলিকে একের পর এক আক্রমণ করে দখল করে নেন । অবশেষে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তাদের তোষণ নীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । এই কারণেই ঐতিহাসিকরা হিটলারের প্রতি ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষের তোষণ নীতিকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহ রচনার জন্য দায়ী করেছেন ।

হিটলারের আক্রমণ প্রতিহত না করে নাৎসি জার্মানির প্রতি ব্রিটেন ও ফ্রান্স তোষণ নীতি গ্রহণ করেছিল কারণ—

(১) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স সামরিক শক্তিতে প্রস্তুত ছিল না,

(২) নাৎসি জার্মানি ছিল ব্রিটিশ বাণিজ্য পণ্যের অন্যতম ক্রেতা তাই ব্রিটেনের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষার জন্য জার্মানির প্রতি ব্রিটেন ও ফ্রান্স তোষণ নীতি গ্রহণ করেছিল,

(৩) একদিকে ইটালি ও জার্মানির ফ্যাসিবাদ ও অন্যদিকে রাশিয়ার সাম্যবাদ -এর কোনটিই ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স চাইছিল না ।

(৪) অর্থনৈতিক সংকট, অভ্যন্তরীণ গোলযোগ এবং সর্বোপরি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইটালি এবং জার্মান কর্তৃক আক্রমনের ভয় দুটি দেশকে নিশ্চেষ্ট থাকতে বাধ্য করে ।

*****

Related Items

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা (Critique of Colonial Ideas Regarding Education):-

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাপর্বে বাংলা তথা ভারতের শিক্ষার্থীরা পাঠশালা, টোল, মক্তব ও মাদ্রাসা থেকে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি -র মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করত । এসব প্রতি

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (The Bengal Technical Institute) :-

ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে বাংলায় স্বদেশি উদ্যোগে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education)

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education):-

ব্রিটিশ আমলে লর্ড কার্জনের সময় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করার পর স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প রূপে দেশীয় প্রগতিশীল স্বদেশী ধাঁচে বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রস

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ (Development of Technical Education in Bengal) :-

ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে বাংলায় পাশ্চাত্য ধাঁচের কারিগিরি শিক্ষার অস্তিত্ব ছিল না । ঊনিশ শতক থেকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ও বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute)

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute):-

ঔপনিবেশিক ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে যেসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল 'বসুবিজ্ঞান মন্দির' বা বোস ইনস্টিটিউট । ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর জগদীশচন্দ্র বসু ইংল্যান্ডের র