আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 02/14/2021 - 19:18

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Students' Participation in the Civil Disobedience Movement):-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দিলে সেই আন্দোলনে ভারতের ছাত্রসমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে । সারা বাংলার ছাত্রসভার অধিবেশনে ছাত্রসমাজকে সর্বতোভাবে এই আন্দোলনে অংশ নিতে এবং এর জন্য সব ধরনের আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয় । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ই মার্চ গান্ধিজির ডাণ্ডি অভিযান শুরুর দিনেই কলকাতার হাজরা পার্কে ৫০ জন ছাত্র সমবেত হয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর ছাত্ররা 'বন্দে মাতরম', 'গান্ধিজিকি জয়' ধ্বনি দেয় । কলকাতার অ্যালবার্ট হলে (বর্তমানে ইন্ডিয়ান কফি হাউস) যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক সম্মেলনে সারা বাংলা থেকে ৭০০ -এর বেশি প্রতিনিধি যোগ দেয় । কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ, বেথুন কলেজ, স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্ররা পিকেটিং করতে গেলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে । হাওড়া ময়দানে এক বিশাল ছাত্র সমাবেশে পুলিশ আক্রমণ চালিয়ে ছাত্রদের গ্রেফতার করে । কলকাতা ছাড়াও পূর্ব বাংলার চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুরে ছাত্রসমাজ আইন অমান্য আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশ গ্রহণ করে । মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় আইন অমান্য আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ সবথেকে বেশি ছিল । এই মহাকুমা দুটিতে সমস্ত উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রায় টানা ছয় মাস স্কুলকলেজ বর্জন করে । ছাত্রদের পাশাপাশি বাংলার ছাত্রীরাও আইন অমান্য আন্দোলনে গৌরবজনক ভূমিকা পালন করে । এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন, "স্বাধীনতা আন্দোলনের জোয়ার মেয়েদের নতুন মর্যাদা দান করে । তারা আর অন্তঃপুরে অবগুন্ঠিত নয় । বীরাঙ্গনার বেশে সমান মর্যাদায় পুরুষের পাশে এসে দাঁড়ায় ।"

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ৫ই মার্চ 'গান্ধি-আরউইন' চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে সাময়িকভাবে আইন অমান্য আন্দোলন স্থগিত থাকে । এই চুক্তির শর্তানুসারে ঠিক হয় গান্ধিজি আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবেন এবং দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন । ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনে দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় । দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকের ব্যর্থতার পর আইন অমান্য আন্দোলনে দ্বিতীয় পর্বের সূচনা ঘটে । প্রথম ও দ্বিতীয় এই দুই পর্বেই বাংলা, গুজরাট, বোম্বাই, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, উত্তরপ্রদেশ, উড়িষ্যা, বিহার প্রভৃতি প্রদেশে ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইন অমান্য আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে । মধ্যপ্রদেশের বেশিরভাগ জায়গায় ছাত্রসমাজ স্কুলকলেজ বয়কট করে । আসামের শিক্ষাবিভাগের অধিকর্তা ক্যানিংহাম এক সার্কুলারে ছাত্রদের রাজনৈতিক কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তার প্রতিবাদে প্রায় ৩ হাজার ছাত্র স্কুলকলেজ ত্যাগ করেন । উত্তরপ্রদেশেও ছাত্রসমাজ মিটিং, মিছিল ও পিকেটিং -এ অংশগ্রহণ করে । বিহারের চম্পারণ, মুঙ্গেরে ছাত্ররা বিলাতি কাপড় ও মদের দোকানে পিকেটিং -এ শামিল হয় । আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বেও ব্রিটিশের দমনপীড়ন অগ্রাহ্য করে ছাত্রসমাজ আইন অমান্যের মাধ্যমে কারাবরণ করে ।

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে গান্ধিজি আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলে ছাত্র আন্দোলন সাময়িকভাবে থেমে যায় । এই সময় আইন অমান্য আন্দোলনে ভাটা পড়লেও ছাত্র আন্দোলনের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকে । পরে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তা আবার অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে ।

*****

Comments

Related Items

বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (Indian universities Act, 1904)

লর্ড কার্জন প্রতিক্রিয়াশীল শাসক হলেও শিক্ষার ব্যাপারে তিনি খুবই উৎসাহী ছিলেন । লর্ড কার্জন স্যার টমাস র‍্যালের সভাপতিত্বে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে 'র‍্যালে কমিশন' গঠন করেছিলেন । এটি 'ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন' নামেও পরিচিত । স্যার টমাস র‍্যালে ছিলেন বড়লাটের কার্যনির্বাহক সমিতির আইন সদস্য । এই কমিশন ...

হান্টার কমিশন (Hunter Education Commission)

১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপণের সময় উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে হান্টার কমিশন গঠিত হয় । এই কমিশনের কাজ ছিল দেশে ইংরেজি শিক্ষার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা । শিক্ষার প্রসারে হান্টার কমিশনের ভূমিকা এক অভিনব অধ্যায়ের সূচনা করেছিল । হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি ছিল ....

উডের ডেসপ্যাচ (Wood's Despatch of 1854)

শিক্ষা সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান করার জন্য ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির পরিচালক সমিতির সভাপতি স্যার চার্লস উড 'শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাব' (Wood's Education Despatch) নামে একটি শিক্ষা নীতি রচনা করে ভারতে পাঠান । ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে চার্লস উডের সুপারিশ ...

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. ভারতে 'হাফটোন' প্রিন্টিং পদ্ধতি প্রবর্তন করেন—     [মাধ্যমিক-২০১৭]

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হল—       [মাধ্যমিক -২০১৭]