অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি (Anti-Circular Society)

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 02/14/2021 - 11:44

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি (Anti-Circular Society):-

বাঙালিদের ব্রিটিশ বিরোধিতাকে দুর্বল করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ও বলা হয়, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর থেকে  আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হবে । এর প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী যে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে ওঠে তাতে বাংলা তথা ভারতের ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে । ব্যাপকভাবে ছাত্রদের অংশগ্রহণের ফলে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে । এই পরিস্থিতিতে ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা অঙ্কুরে বিনাশ করার জন্য তৎকালীন বাংলার ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাসচিব আর ডব্লিউ কার্লাইল ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ই অক্টোবর এক দমন মূলক সার্কুলার জারি করেন যা 'কার্লাইল সার্কুলার' নামে পরিচিত । এই সার্কুলারে বলা হয়, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানকারী ছাত্রদের সরকারি স্কুলকলেজ থেকে বিতাড়িত করা হবে । ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর যেদিন বঙ্গভঙ্গ সরকারিভাবে কার্যকর হয় সেই দিন ব্রিটিশ সরকার লিয়ন সার্কুলার ও ২১শে অক্টোবর পেডলার সার্কুলার জারি করে । লিয়ন সার্কুলারের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গে বন্দে মাতরম নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় এবং বলা হয় আদেশ অমান্যকারী শিক্ষাকেন্দ্রগুলির ছাত্রদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করা হবে না । পেডলার সার্কুলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা সরকারি কলেজের ছাত্ররা খালি গায়ে ক্লাসে আসে । ব্রিটিশ সরকারের জারি করা এই সমস্ত সার্কুলারগুলির বিরুদ্ধে কলকাতায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৪র্থ নভেম্বর ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে 'অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি' গঠিত হয় । ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করে স্বদেশি পণ্য বিক্রয় ও স্বদেশি আন্দোলনে উৎসাহ দেওয়া ছিল এই সোসাইটির উদ্দেশ্য ।

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ই নভেম্বর জাতীয় শিক্ষা প্রবর্তনের লক্ষ্যে সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত 'ডন সোসাইটি' -এর আহ্বানে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রমুখ এই সভায় ভাষণ দেন । কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের হোস্টেলের মাঠে এক সভায় সুবোধ চন্দ্র মল্লিক জাতীয় শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে ১ লক্ষ টাকা দান করেন । গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোরী রায়চৌধুরী ও বেশকিছু ধনবান ব্যক্তি শিক্ষা প্রসারে অর্থ দান করেন । এতে ছাত্রসমাজ স্বদেশি আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে । বাংলায় প্রায় ৩০০টি প্রাথমিক ও ২৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয় । বিদ্যালয়গুলির অধিকাংশই পূর্ববঙ্গে অবস্থিত ছিল । স্বদেশি স্কুলগুলির পরিচালনার জন্য এই সমস্ত আর্থিক অনুদানে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে 'ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশন' গঠিত হয় । স্বদেশি স্কুলগুলিকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠিত হয় । গ্রামেগঞ্জে হাজার হাজার হিন্দু ছাত্রদের পাশাপাশি বহু মুসলমান ছাত্রও স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব নেয় ।

*****

Comments

Related Items

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সাধারণভাবে সমর্থন করেননি ।

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন ?

প্রশ্ন : ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন ?

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা কর ।

প্রশ্ন : স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা কর ।

নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখ ।

প্রশ্ন : নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখ ।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর ।

প্রশ্ন : সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর ।