অধীনতামূলক মিত্রতা (Subsidiary Alliance)

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 04/20/2012 - 21:51

অধীনতামূলক মিত্রতা (Subsidiary Alliance)

গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি [Lord Wellesley] অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন । তিনি একজন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী শাসক ছিলেন । ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের জন্য লর্ড ওয়েলেসলি যে সকল নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি । অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির মূল কথা হল যে— কোন দেশীয় রাজ্যের রাজা ইংরেজদের সঙ্গে মিত্রতা চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবেন । দেশীয় রাজাদের অভ্যন্তরীণ অধিকার ক্ষুন্ন না করে তাঁদের নিজেদের অধীনে রাখাই হল অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির মূল কথা ।  কোনো দেশীয় রাজা এই নীতি গ্রহণ করলে তাঁকে কতকগুলি শর্ত পালন করতে হত, যেমন—

১) অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ দেশীয় রাজাগুলিকে কোম্পানির বশ্যতা স্বীকার করতে হত ।

২) সংশ্লিষ্ট দেশীয় রাজ্যগুলিতে একদল ইংরেজ সৈন্য এবং একজন ইংরেজ রেসিডেন্ট রাখতে হত ।

৩) সৈন্য বাহিনীর ব্যয়নির্বাহের জন্য মিত্রতাবদ্ধ রাজ্যকে নগদ টাকা বা রাজ্যের একাংশ ছেড়ে দিতে হত ।

৪) কোম্পানির বিনা অনুমতিতে অপর কোনো শক্তির সঙ্গে মিত্রতা বা যুদ্ধবিগ্রহ করা যেত না । অর্থাৎ মিত্র রাজ্যগুলির বৈদেশিক নীতি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্ধারণ করত ।

৫) চুক্তিবদ্ধ রাজ্যে ইংরেজ ছাড়া অন্যান্য সমস্ত ইউরোপীয়কে তাড়িয়ে দিতে হত ।

৬) এই সব বশ্যতার বিনিময়ে কোম্পানি সেই রাজ্যকে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ, বৈদেশিক আক্রমণ এবং অন্যান্য বিপদ থেকে রক্ষা করত ।

১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর সর্বপ্রথম হায়দ্রাবাদের নিজাম ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করেন । এরপর অযোধ্যা, তাঞ্জোর, সুরাট, পুণা প্রভৃতি রাজ্যগুলি এই নীতিতে আবদ্ধ হয়ে ইংরেজদের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় । ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও বেসিনের সন্ধির মাধ্যমে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন । টিপু সুলতানের পতনের পর মহীশূরের পূর্বতন হিন্দু রাজবংশও কোম্পানির বশ্যতা স্বীকার করে নেয় । পরবর্তী সময়ে সিন্ধিয়া, ভোঁসলে ও হোলকার অধীনতামূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ।

এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, অধীনতামূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে দেশীয় রাজারা চিরদিনের মতো নিজেদের স্বাধীনতা বিসর্জন দেন । লর্ড ওয়েলেসলির রাজত্বকালে ইংরেজ কোম্পানি সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে দাক্ষিণাত্যের মহীশূর রাজ্য জয় করে । এছাড়া এই সময়কালে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির মাধ্যমে একে একে হায়দ্রাবাদের নিজাম রাজ্য, অযোধ্যা, সুরাট, পুণা, সিন্ধিয়া, ভোঁসলে, হোলকার রাজ্য এবং কূটনীতি ও ছলনার মাধ্যমে তাঞ্জোর, সুরাট ও কর্ণাটক রাজ্য কোম্পানির হস্তগত হয় ।

*****

Related Items

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা (Critique of Colonial Ideas Regarding Education):-

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাপর্বে বাংলা তথা ভারতের শিক্ষার্থীরা পাঠশালা, টোল, মক্তব ও মাদ্রাসা থেকে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি -র মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করত । এসব প্রতি

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (The Bengal Technical Institute) :-

ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে বাংলায় স্বদেশি উদ্যোগে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education)

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education):-

ব্রিটিশ আমলে লর্ড কার্জনের সময় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করার পর স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প রূপে দেশীয় প্রগতিশীল স্বদেশী ধাঁচে বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রস

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ (Development of Technical Education in Bengal) :-

ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে বাংলায় পাশ্চাত্য ধাঁচের কারিগিরি শিক্ষার অস্তিত্ব ছিল না । ঊনিশ শতক থেকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ও বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute)

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute):-

ঔপনিবেশিক ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে যেসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল 'বসুবিজ্ঞান মন্দির' বা বোস ইনস্টিটিউট । ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর জগদীশচন্দ্র বসু ইংল্যান্ডের র