Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 07/24/2021 - 17:22

হিমবাহ (Glaciers) : হিমারেখার উপরে তুষারক্ষেত্র । সেখানে যে তুষারপাত হয় তা প্রথম অবস্থায় আলগা আলগা হয়ে পড়ে থাকে । ফরাসি ভাষায় একে নেভে [Neve] বলে । এই তুষারকণা ক্রমশ পরস্পরের সঙ্গে মিশে বরফের স্থরে [Ice Sheet] এ পরিণত হয় । ক্রমশ আরও জামাট বেঁধে ও আয়তনে বড় হয়ে বরফের স্তুপের আকার ধারণ করে । তারপর উপরের চাপ ও বরফের নিজস্ব উষ্ণতায় নীচের কিছু বরফ গলে গেলে সেই বিশালায়তন বরফের স্তুপ অভিকর্ষজ টানে ভূমির ঢাল বেয়ে অত্যন্ত ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামতে শুরু করে । এই চলমান বরফের স্তুপকে হিমবাহ বলা হয় । হিমবাহ বরফের নদী নামে পরিচিত । নদীর মত হিমবাহ দুরন্ত গতিশীল নয় । দিনে হিমবাহের গতি কয়েক সেন্টিমিটার মাত্র । হিমবাহ বিজ্ঞানী ফ্লিন্ট -এর মতে " হিমবাহ হল কেলাসিত তুষার ও তুষারগলা জল জমাট বেঁধে উৎপন্ন বরফ ও ফার্নের বিশালাকার গতিশীল স্তুপ যার বেশিরভাগ অংশই স্থলভাগে অবস্থান করে এবং বর্তমান বা অতীত দিনের গতিশীলতার সাক্ষ্য বহন করে ।" হিমবাহ হল পৃথিবীর বৃহত্তম সুপেয় জলের ভাণ্ডার । United States Geological Survey -এর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে পৃথিবীর সমগ্র জলের আয়তন হল ১৩৮.৬ কোটি কিউবিক কিলোমিটার । এই জলের ৯৭% লবণাক্ত এবং বাকি মাত্র ৩% বা ৩.৫% কোটি কিউবিক কিলোমিটার জল হল সুপেয় । এই মোট সুপেয় জলের মধ্যে ৬৮.৭% বা ২.৪১ কোটি কিউবিক কিলোমিটার জল হিমবাহ ও ক্ষুদ্রায়তন মহাদেশীয় হিমবাহরূপে অবস্থান করছে ।

হিমবাহকে বরফের নদী বলা হলেও হিমবাহ নদীর মতো দ্রুত গতিসম্পন্ন নয় । হিমবাহের দৈনিক গড় গতিবেগ মাত্র ১ মিটার । গ্রিনল্যান্ডের জ্যাকোবশান বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম হিমবাহ । এর গতিবেগ গড়ে প্রায় প্রতিদিন ৪৬ মিটার । গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে গঙ্গানদী এবং যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে যমুনা নদীর উৎপত্তি হয়েছে ।

******

Comments

Related Items

বায়ুপ্রবাহ ও বায়ু প্রবাহ সৃষ্টির কারণ (Winds and cause of winds)

বায়ুপ্রবাহ (Winds) : বায়ু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রবাহিত হয় । উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে বায়ুর নিয়মিত চলাচলকে বায়ুপ্রবাহ বলে । নিম্নচাপের গভীরতা যত বৃদ্ধি পায়, বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ তত বাড়তে থাকে । বায়ু যেমন ভূমির সমান্তরালে

পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান পরিবর্তন

পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান পরিবর্তন (Shifting of pressure belts) : পৃথিবীর স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়গুলি সূর্যরশ্মির পতন কোণের মান ও ইনসোলেশনের বন্টনের ভিত্তিতে তাদের সীমানা বা অবস্থান পরিবর্তন করে । উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের স্থায়ী বা

পৃথিবীর চাপ বলয় সমূহ (Pressure Belts of the world)

পৃথিবীর চাপ বলয় সমূহ (Pressure Belts of the world) : পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন কারণে তার চারপাশের তুলনায় বায়ুর চাপ কোথাও কম হয় আবার কোথাও বেশি হয় । যদি কোথাও বায়ুর চাপ কম হয়, তাকে নিম্নচাপ বলে এবং কোথাও বায়ুর চাপ বেশি হলে তাকে উচ্চচাপ বলে । এই

বায়ুচাপের তারতম্যের নিয়ন্ত্রকসমূহ

বায়ুচাপের তারতম্যের নিয়ন্ত্রকসমূহ (Factors affecting atmospheric Pressure) : ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র বায়ুর চাপ সমান হয় না । বায়ুর চাপ কতকগুলি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল । বায়ুচাপের তারতম্যের কারণগুলি হল—

বায়ুর চাপ পরিমাপ

বায়ুর চাপ পরিমাপ (Measurement of Atmospheric Pressure) : পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অন্যান্য পদার্থের মতো বায়ুকেও নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে বলে পৃথিবীর যাবতীয় পদার্থের মতো বায়ুরও ওজন আছে ফলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে বায়ু ভূপৃষ্ঠের সক