বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি (Method of Waste Management)

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 11/05/2021 - 11:46

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি (Method of waste management) : বর্জ্যপদার্থ সংগ্রহ, বর্জ্যের পরিবহন, আবর্জনার বিলিব্যবস্থা, নর্দমার জল ও অন্যান্য বর্জ্যের নিকাশ প্রভৃতি হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্যতম দিক । বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান পদ্ধতিগুলি হল— (১) বর্জ্য পৃথকীকরণ, (২) ভরাট করণ, (৩) কম্পোস্টিং বা মিশ্রসারে পরিণতকরণ, (৪) নিষ্কাশন ও (৫) স্ক্রাবার ।

(১) বর্জ্য পৃথকীকরণ (Segregation of waste) : এই প্রক্রিয়ায় পচনশীল, অপচনশীল ও দূষিত বর্জ্যকে পৃথক করা হয় । বর্জ্য পৃথকীকরণের মাধ্যমে জৈব ভঙ্গুর বর্জ্যকে পুনর্নবীকরণ প্রক্রিয়ায় মিশ্রসারে পরিণত করে কৃষিকাজে হিউমাস হিসাবে ব্যবহার করা যায় । আবার, জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যকে সুষ্ঠু বিলিব্যবস্থা ও পুনর্নবীকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । বর্তমানে কেরালায় প্লাস্টিকের দ্রব্য থেকে অশোধিত তেল উৎপাদন করা হচ্ছে ।

(২) ভরাট করণ (Land filling) : এই প্রক্রিয়ায় একটি বিশাল গর্তে গৃহস্থালি ও পৌরসভার বর্জ্য আবর্জনাকে ফেলে তার ওপর মাটি চাপা দেওয়া হয় । এই বর্জ্য আবর্জনার পচনে হিউমাস তৈরি হয় এবং পরে তা কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয় । তবে এই ব্যবস্থায় মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন হয় । তবে মাটির মধ্যে ঢাকা দেওয়া থাকে বলে বর্জ্য থেকে কোনো রোগজীবাণু বায়ুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে না । একই জায়গায় বর্জ্যগুলি জমে থাকার ফলে বৃষ্টি হলে তা থেকে নোংরা দূষিত জল চুইয়ে চুইয়ে আশেপাশের জলাশয়ের ভূগর্ভস্থ জলস্থরে মিশ্ব পানীয় জলের দূষণ ঘটাতে পারে । বর্জ্য ধোয়া ওই দূষিত জলকে লিচেট বলে ।   

(৩) কম্পোস্টিং বা মিশ্রসারে পরিণতকরণ (Composting) : প্রাকৃতিকভাবে জৈব বর্জ্যের বিয়োজনের প্রক্রিয়াকে কম্পোস্টিং বলে । এই পদ্ধতিতে কৃষিজ বর্জ্য, অন্যান্য জৈব বর্জ্য এমনকি বিপদজনক জৈব বর্জ্যপদার্থকে গর্তে ফেলে পচিয়ে মিশ্র সার তৈরি করা হয় এবং পরে তা কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় । এভাবে উৎপন্ন জৈব সারে উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফেট প্রভৃতি পুষ্টিকর উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে থাকে । ভারতে প্রধানত দুটি পদ্ধতিতে কম্পোস্টিং হয় —  (ক) ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি বা অবাত কম্পোস্টিং ও (খ) যান্ত্রিক পদ্ধতি বা সবাত কম্পোস্টিং ।

(ক) ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি বা অবাত কম্পোস্টিং : প্রথমে মাটিতে পরিখা বা ট্রেঞ্চের মত একটি অগভীর লম্বা গর্ত করা হয় এবং তার মধ্যে নানা ধরনের জৈব বর্জ্য ফেলে তার ওপরে পয়ঃপ্রণালী ও গবাদি পশুর মলমূত্রের একটি স্তর তৈরি করা হয় । এর ওপর মাটি চাপা দিয়ে ১৫-২০ দিন রেখে দিলে নীচের জৈব পদার্থ অবাত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজিত হয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি হয় । একে ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি বা অবাত কম্পোস্টিং বলি ।

(খ) যান্ত্রিক পদ্ধতি বা সবাত কম্পোস্টিং :  প্রথমে বর্জ্য পদার্থ থেকে ধাতুখণ্ড, কাচ প্রভৃতি আলাদা করা হয় এবং তার পর অবশিষ্ট জৈব বর্জ্য পদার্থকে যন্ত্রের সাহায্যে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয় । এরপর ওগুলির সঙ্গে মলমূত্র মেশানো হয় এবং শেষে ঘূর্ণায়মান যন্ত্রে রেখে সবাত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজন ঘটানো হয় । এইভাবে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বর্জ্য বিয়োজিত হয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি হয় । এটি যান্ত্রিক পদ্ধতি বা সবাত কম্পোস্টিং নামে পরিচিত।

(৪) নিষ্কাশন (Drainage Method) : এই পদ্ধতিতে নর্দমার ময়লা জল ও অন্যান্য তরল বর্জ্যকে নিকাশি নালা, সেপটিক ট্যাংক ও পয়ঃপ্রণালীর মাধ্যমে নিষ্কাশন করা হয় । ভারতের বেশিরভাগ শহরে নিকাশি নালাগুলি নদীর সঙ্গে যুক্ত । তাই এর ক্ষতিকর দিক হল নদীর জলের দূষণ ।

(৫) স্ক্রাবার (Scrubber) : বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের যান্ত্রিক পদ্ধতি হল স্ক্রাবার । কলকারখানা, শক্তিকেন্দ্র প্রভৃতির ধোঁয়ায় নির্গত বিষাক্ত গ্যাসীয় বর্জ্যকে স্ক্রাবার যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধৌত করে সেই দূষকগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে । বর্তমানে স্ক্রাবার গ্যাসীয় বর্জ্যের মধ্যে প্রতিক্রিয়াসাধক বস্তুর অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে অ্যাসিড গ্যাসগুলিকে দূরীভূত করে । স্ক্রাবার যন্ত্রে সাধারণত দু-ভাবে গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের বা নিষ্কাশন করা হয় । যথা— (ক) আর্দ্র স্ক্রাবিং ও (খ) শুষ্ক স্ক্রাবিং ।

(ক) আর্দ্র স্ক্রাবিং : এক্ষেত্রে কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস, ধূলিকণা প্রভৃতি বায়ুদূষককে কোনো জলীয় দ্রবণের মধ্যে চালনা করে বিশুদ্ধ বাতাস নির্গত করা হয় ।

(খ) শুষ্ক স্ক্রাবিং : এই পদ্ধতিতে জলীয় দ্রবণ ছাড়াই বস্তুকণা ও দূষিত বাতাস স্ক্রাবারের মাধ্যমে পরিস্রুত করে বিশুদ্ধ বাতাস নির্গত করা হয় । সাধারণত শুষ্ক স্ক্রাবিং পদ্ধতিতে অম্লধর্মী গ্যাস অপসারণ করা হয় ।

*****

Comments

Related Items

বর্জ্যের উৎস (Source of waste)

বর্জ্যের উৎস (Source of waste) : বর্তমান আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় মানুষের নানাবিধ কার্যকলাপেরপরিধিই হল বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্র । বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্রগুলি হল — (১) গৃহস্থালির বর্জ্য, (২) শিল্প বর্জ্য, (৩) কৃষিজ বর্জ্য,  (৪) পৌর

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste)

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste) : বিভিন্ন কারণে পরিবেশে নানা প্রকারের বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে । বর্জ্য পদার্থ তিন প্রকার, যেমন— (ক) কঠিন বর্জ্য, (খ) তরল বর্জ্য ও (গ) গ্যাসীয় বর্জ্য ।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)

বর্জ্যের ধারণা (Concept of Waste) : 'বর্জ্য' কথাটির অর্থ হল 'যা বর্জনযোগ্য' । যে-কোনো কঠিন, তরল অথবা গ্যাসীয় সম্পদকে প্রাথমিকভাবে ব্যবহারের পরে যে মূল্যহীন, নষ্ট বা খারাপ হয়ে যাওয়া অব্যবহার্য বস্তু পড়ে থাকে, যা সরাসরি মানুষের কাজে না লেগে পরিবেশ দূষণ

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?

বান ডাকা (Tidal Bores)

বান ডাকা (Tidal Bores) : সাধারণত বর্ষাকালে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ভরা কোটালের সময় চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে জোয়ারের জল নদীর খাড়িপথ ও মোহনা দিয়ে খুব উঁচু হয়ে প্রবল বেগে উজানের দিকে অর্থাৎ নদী প্রবাহের বিপরীত দিকে অগ্রসর হয় । ঢেউ, জলোচ্ছ্বাসসহ নদীর এই