Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 06/27/2021 - 10:13

প্লাবনভূমি (Flood Plain) : নদী মধ্যপ্রবাহ থেকে মোহনার দিকে যতই অগ্রসর হতে থাকে, ততই নদীর স্রোতের বেগ কমতে থাকে । স্রোতের বেগ কমে যাওয়ায় নদীবাহিত শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাদা, পলি, বালি, প্রভৃতি নদী গর্ভে ও নদীর দুই তীরে জমা হতে থাকে । ফলে নানা রকম ভূমিরূপ গড়ে ওঠে । সমভূমি প্রবাহে ও বদ্বীপ প্রবাহে নদীর সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, প্লাবন ভূমি হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । সমভূমি প্রবাহের শেষে ও বদ্বীপ প্রবাহে নদী প্রশস্ত ও অগভীর উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় । নদীর মধ্য ও নিম্ন গতিতে সমভূমি অঞ্চলে নদীর ঢাল ক্রমশ কমতে থাকায় নদীর সঞ্চয় কাজ ক্রমেই বাড়তে থাকে । নদী বাহিত নুড়ি, কাদা, পলি প্রভৃতি জমে নদীগর্ভ ভরাট ও অগভীর হয়ে যায় । বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টিপাতে নদীতে অতিরিক্ত জল এসে পড়লে তা নদীখাত দিয়ে নিকাশিত হতে না পেরে দু-কুল উপচে নদী উপত্যকায় বন্যা বা প্লাবনের সৃষ্টি করে । বন্যার জলের সঙ্গে বাহিত পলি, বালি, কাদা প্রভৃতি নদীর দুই তীরের অববাহিকা অঞ্চলের নিম্নভূমিতে থিতিয়ে পড়ে সঞ্চিত হয় । প্লাবনের পর নদীর জল নেমে গেলেও নদীর উঁচু পাড় স্বাভাভিক বাঁধের মতো অবস্থান করায় নীচু সমতলভূমির জল বেরোতে পারে না, ফলে তারা প্লাবিত হয়েই থাকে । প্রায় প্রতি বছর এই অঞ্চলে নতুন পলি সঞ্চয় ঘটে । এইভাবে নদী উপত্যকার নিম্ন অংশে পলি সঞ্চয়ের ফলে যে ভুমিরূপের সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবনভূমি বলে । নদীবাহিত পলি অনেকদিন ধরে নদীর দু’পাশে সঞ্চিত হলে পলিগঠিত যে সমতল ভূ-ভাগের সৃষ্টি হয় তাকে পলি সমভূমি বলে । 

উত্তর প্রদেশের হরিদ্বার থেকে বিহারের রাজমহল পর্যন্ত নানান স্থানে গঙ্গার গতিপথের দু'পাশে প্লাবনভূমি দেখা যায় । মিশরের নীল নদের গতিপথে প্রথমে স্বাভাবিক বাঁধ এবং পরে বিস্তৃত প্লাবনভূমি দেখা যায় ।

*****

Comments

Related Items

অধঃক্ষেপণ (Precipitation)

অধঃক্ষেপণ (Precipitation) : সূর্যের উত্তাপে ভূপৃষ্ঠের সমুদ্র, হ্রদ, নদী, পুকুর, খাল, বিল প্রভৃতি জলরাশি থেকে জল জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় । জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস হাল্কা হওয়ার দরুন ঊর্ধগামী হয় । উপরের বায়ুমণ্ডলের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এলে ঘনিভবনের ফলে জলীয়বাষ

ঘনীভবন (Condensation)

ঘনীভবন (Condensation) : যে প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প জলকণায় পরিণত হয়, তাকে ঘনীভবন বলে । আর্দ্র বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয় । এই জলকণাসমূহ বিভিন্ন

বায়ুর আর্দ্রতা (Humidity)

বায়ুর আর্দ্রতা (Humidity) : বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে বা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাসকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে । বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে তাকে আর্দ্র বায়ু এবং কম থাকলে তাকে শুষ্ক বায়ু বলে । বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা প্রধানত বায়ুর উষ

বায়ুর আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ (Humidity and Precipitation)

বায়ুর আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ (Humidity and Precipitation):

বায়ুপ্রবাহের পরিমাপ

বায়ুপ্রবাহের পরিমাপ : বায়ু কোনদিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে, তা বাতপতাকার (Windvane)-এর সাহায্যে সহজেই নির্ণয় করা যায় । অ্যানিমোমিটার (Anemometer) নামক যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ পরিমাপ করা হয় । বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ মাপার একক হল নট (১ নট = ১.৮ ক