পৃথিবীব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন ও গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার বদ্বীপ অঞ্চলের ওপর এর প্রভাব

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 07/24/2021 - 11:07

পৃথিবীর জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল । বিজ্ঞানীদের মতে আধুনিক কৃষিকাজ, শিল্প ও নগরায়ণের ফলে উদ্ভুত গ্রীন হাউজ গ্যাসের প্রভাবে ও বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাবে পৃথিবীর জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে । বিগত ৩০০ বছরে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের বৈচিত্র্য বিশেষভাবে পরলক্ষিত হয় । যেমন—

(i) ১৯০৫ - ২০০৫ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর গড় উষ্ণতা প্রায় ১.১°C বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই ধারা একই রকম থাকলে ২১০০ শতাব্দীতে গড় উষ্ণতা ২°C - ৩.৫°C বৃদ্ধি পাবে ।

(ii) এই উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য সমুদ্র জলতলের উচ্চতা প্রায় ১০-১৫ মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তার ফলে নদী মোহানা ও মহাসাগরের ১৫ মি. উচ্চতাসম্পন্ন দ্বীপগুলি সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হবে ।

(iii) সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ঘূর্ণবাত, বজ্রপাত ও বৃষ্টিপাতের প্রকোপ বাড়বে ।

(iv) গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি ফলে সামুদ্রিক ও স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটবে ।

♦ গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার বদ্বীপ অঞ্চলের ওপর পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব : গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার বদ্বীপ অঞ্চলের দক্ষিণ অংশ সুন্দরবন নামে পরিচিত । নদনদী বাহিত পলি, কাদা, বালি, নুড়ি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলে এই তিন নদীর মোহানায় পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে । অসংখ্য দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই অঞ্চলে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি গড়ে উঠেছে । প্রায় ৯,৬৩০ বর্গ কিমি. এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই খাঁড়ি অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠেছে এবং বর্তমানে প্রায় ৪,২৬৭ বর্গ কিমি. জুড়ে অবস্থান করছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যাঞ্চল সুন্দরবন । জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে—

(i) এই অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রাণী প্রজাতি বিপন্ন ।

(ii) বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধিতে এখানকার দ্বীপগুলির আয়তন কমে গেছে ।

(iii) বেশ কিছু দ্বীপ জলের তলায় নিমজ্জিত হয়ে গেছে ।

(iv) ১৯৮০ - ২০১২ সাল পর্যন্ত কেবলমাত্র সুন্দরবন অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৫৩°C ।

(v) সমুদ্র জলতল বৃদ্ধিতে উপকূলের ম্যানগ্রোভ অরণ্য জলে নিমজ্জিত হচ্ছে ।

(vi) উচ্চ জোয়ারের জলতল বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলের লোনা জলের ক্ষেত্র ক্রমশ বেড়ে চলেছে ।

(vii) সমুদ্র জলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার জন্য এই অঞ্চলে ঝড়ঝঞ্ঝা ও ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ।

(viii) জলতলের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় জোয়ারের সময় নদীবাঁধ ভেঙ্গে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে । এর ফলে লবণাক্ত জল প্রবেশ করে উর্বর কৃষিজমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এবং জলঘটিত রোগ ব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পাছে ।  

*****

Comments

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।