নদীর বিভিন্ন প্রকারের কাজ (Works of a River)

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 06/20/2021 - 16:53

নদীর বিভিন্ন প্রকারের কাজ (Works of a River) : উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত নদী তার গতিপথে প্রধানত (১) ক্ষয়সাধন (Erosion), (২) বহন (Transportation) ও (৩) অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় (Deposition) —এই তিন প্রকারে কাজ করে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গড়ে তোলে । যেমন—

(১) ক্ষয়সাধন (Erosion):- পার্বত্যপ্রবাহ বা উচ্চগতিতে নদী প্রধানত (ক) জলপ্রবাহ ক্ষয় (Hydraulic action), (খ) অবঘর্ষ ক্ষয় (Corrasion or Abrasion), (গ) ঘর্ষণ ক্ষয় (Attrition), (ঘ) দ্রবণ ক্ষয় (Solution) —পদ্ধতিতে ক্ষয়কার্য সাধন করে থাকে ।

(ক) জলপ্রবাহ ক্ষয় (Hydraulic action):- পার্বত্য অঞ্চলে নদীখাতের নরম ও আলগা পাথরগুলি জলস্রোতের আঘাতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং কালক্রমে ভেঙে গিয়ে জলস্রোতের দ্বারা বহুদূরে বাহিত হয় ।

(খ) অবঘর্ষ ক্ষয় (Corrasion or Abrasion):- নদীবাহিত পাথরগুলির সঙ্গে নদীখাতের ঘর্ষণ বা অবঘর্ষের ফলে নদীখাত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং নদীখাতে ছোটো ছোটো গর্তের সৃষ্টি হয় । গর্তগুলির জন্য নদীখাত আরও দ্রুত ক্ষয়ে যায় ।

(গ) ঘর্ষণ ক্ষয় (Attrition):- নদীর স্রোতের সঙ্গে বাহিত পাথরগুলি পরস্পরের সাথে ঘর্ষণে এবং ঠোকাঠুকিতে ক্ষয় হয়ে অবশেষে ক্ষুদ্রাকার কণায় পরিণত হয় ।

(ঘ) দ্রবণ ক্ষয় (Solution):- কোনো কোনো পাথর, যেমন— চুনাপাথর, লবণ শিলা প্রভৃতি নদীর জলের সংস্পর্শে গলে গিয়ে বা দ্রবীভূত হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ।

পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল ও নদীর জলের বেগ অধিক থাকায় নদী (ক) জলপ্রবাহ ক্ষয়ের মাধ্যমে বা শিলাখণ্ডকে উপত্যকায় আছড়ে (খ) অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় এবং নদীবাহিত শিলাখণ্ড নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে (গ) ঘর্ষণ ক্ষয়ের মাধ্যমে এবং নদীর জল ক্যালসিয়াম কার্বনেট সমৃদ্ধ শীলাকে (ঘ) দ্রবণ প্রক্রিয়ায় দ্রবীভূত করে বিভিন্ন ভূমিরূপ সৃষ্টি করে । যেমন— (i) V -আকৃতির উপত্যকা, (ii) গিরিখাত, (iii) ক্যানিয়ন, (iv) শৃঙ্খলিত শৈলশিরা, (v) জলপ্রপাত, (vi) খরস্রোত, (vii) প্রপাতকূপ, (viii) মন্থকূপ প্রভৃতি ।

(২) বহন (Transportation) :- সমভূমি প্রবাহ বা মধ্যগতিতে নদী প্রধানত (ক) আকর্ষণ প্রক্রিয়া (Traction), (খ) লম্ফদান প্রক্রিয়া (Saltation),  (গ) ভাসমান প্রক্রিয়া (Suspension), (ঘ) দ্রবণ প্রক্রিয়া (Solution) —পদ্ধতিতে বহন, ক্ষয় ও সঞ্চয় -এর মিলিত কার্যের দ্বারা নদী ছোটো বড়ো শিলাখণ্ড, নুড়ি, বালি, কাঁকড়, পলি প্রভৃতি পদার্থসমূহকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবহন করে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি করে । যেমন— (i) নদী-বাঁক, (ii) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ প্রভৃতি ।

(ক) আকর্ষণ প্রক্রিয়া (Traction):- খুব বড়ো বড়ো পাথর নদীর স্রোতের টানে বা আকর্ষণে বাহিত হয় ।

(খ) লম্ফদান প্রক্রিয়া (Saltation):- কিছুটা বড়ো বা মাঝারি আকৃতির পাথরগুলি স্রোতের সঙ্গে বাহিত হওয়ার সময় নদীখাতে বার বার ধাক্কা খেয়ে লাফেয়ে লাফিয়ে অগ্রসর হয় ।

(গ) ভাসমান প্রক্রিয়া (Suspension):- কাদা, পলি, বালি প্রভৃতি হালকা পদার্থগুলি নদী ভাসিয়ে নিয়ে যায় । নদী যে পরিমাণ পদার্থ বহন করে, তার প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ ভাসমান প্রক্রিয়ায় বহন করে ।

(ঘ) দ্রবণ প্রক্রিয়া (Solution):- চুনাপাথর, লবণ-জাতীয় শিলা প্রভৃতিকে জলে গুলে বা দ্রবণের মাধ্যমে নদী বয়ে নিয়ে চলে ।

(৩) অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় (Deposition) :- বদ্বীপ প্রবাহ বা নিম্নগতিতে নদীর প্রধান কাজ অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় । নদীর মধ্যগতিতেও অবক্ষেপণ বা সঞ্চয়কার্য হয়ে থাকে । নদী প্রধানত (ক) পর্বতের পাদদেশে সঞ্চয়, (খ) নদীতীরে সঞ্চয়, (গ) নদীবক্ষে সঞ্চয়, (ঘ) মোহনায় সঞ্চয় — এইসব পদ্ধতিতে অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় করে থাকে । পর্বতের পাদদেশে নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে পললব্যজনী গঠিত হয় । সমভূমি ও বদ্বীপ প্রবাহে ভূমির ঢাল ও নদীর জলস্রোতের বেগ খুব কমে গেলে নদী তার বাহিত বোঝাকে আর বহন করতে না পেরে নদীতীরে, অববাহিকায়, নদীবক্ষে ও মোহানার কাছে সঞ্চয় করে বিভিন্ন ভূমিরূপ গড়ে তোলে । যেমন— (i) পলল ব্যজনী, (ii) নদী-বাঁক, (iii) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, (iv) প্লাবনভূমি, (v) স্বাভাবিক বাঁধ, (vi) নদীচর, (vii) বদ্বীপ প্রভৃতি ।

****

Comments

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।