Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 07/27/2021 - 10:11

গ্রাবরেখা [Moraine] : হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বাহিত হয়ে নীচের দিকে অগ্রসর হয় । এই সময় উপত্যকার বিভিন্ন অংশে এইসব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখণ্ড বা শিলাচূর্ণের কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । এইরূপ সঞ্চিয়জাত ভুমিরূপকে গ্রাবরেখা (Moraine) বলে ।

গ্রাবরেখার শ্রেণিবিভাগ (Classification of Moraine) : গ্রাবরেখার অবস্থান অনুযায়ী গ্রাবরেখা নানা ধরনের হয়, যেমন:- (i) পার্শ্ব গ্রাবরেখা (lateral Moraines), (ii) মধ্য গ্রাবরেখা (Medial Moraines), (iii) প্রান্ত গ্রাবরেখা (Terminal Moraines), (iv) ভূমি গ্রাবরেখা (Ground Moraine), (v) হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা ।

(i) পার্শ্ব-গ্রাবরেখা (Lateral Moraine) : পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে । এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ হিমবাহের গতিপথের দু-পাশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়ে যে ভূমিরূপ গড়ে উঠে, তাকে পার্শ্ব-গ্রাবরেখা বলে ।

(ii) মধ্য-গ্রাবরেখা (Medial Moraine) : পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে । এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ পাশাপাশি দুটি হিমবাহের মিলনস্থলের মধ্যভাগে হিমবাহের গতিপথে সঞ্চিত হয়ে যে গ্রাবরেখা গঠিত হয়, তাকে মধ্য গ্রাবরেখা বলে । 

(iii) প্রান্ত-গ্রাবরেখা [Terminal Moraine]:  পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে । এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহ যে স্থানে এসে সম্পূর্ণরূপে গলে যায় সেখানে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়ে যে গ্রাবরেখা গঠিত হয়, তাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে ।

(iv) ভূমি গ্রাবরেখা [Ground Moraine] : পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে । এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের নীচে ভূপৃষ্ঠে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়ে যে গ্রাবরেখা গঠিত হয়, তাকে ভূমি গ্রাবরেখা বলে ।

(v) হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা : পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে । এই সমস্ত শিলাখণ্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের ফাটলের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে ও স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়ে যে গ্রাবরেখা গঠিত হয়, তাকে হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা বলে ।

উদাহরণ: তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় লাচুং ও লাচেন অঞ্চলে নানা ধরনের গ্রাবরেখা দেখা যায় ।

****

Comments

Related Items

বায়ুর উষ্ণতা (Air Temperature)

বায়ুর উষ্ণতা (Air Temperature) : বায়ুর উষ্ণতা বলতে বায়ুর তাপমাত্রাকে বোঝায় । বায়ুর উষ্ণ এবং শীতল অবস্থার তুলনামূলক পরিমাপকেই বায়ুর উষ্ণতা বলা হয় । সূর্যকিরণ হল বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার প্রধান উৎস । সূর্যের তাপ গ্রহণ বা তার প্রতিফলন ঘটিয়ে বায়ু উষ্ণ বা শ

ওজোন স্তর (Ozone Layer)

ওজোন স্তর (Ozone Layer) : বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরে অর্থাৎ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে ২০ - ৩৫ কিমি.

ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere)

ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere) : এক্সোস্ফিয়ার স্তরের ওপরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বেষ্টনকারী চৌম্বকক্ষেত্রটি হল ম্যাগনেটোস্ফিয়ার স্তর । এটি বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ স্তর । এক্সোস্ফিয়ার স্তরের ওপর ১,৫০০ কিমি.

এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere)

এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere) : এক্সোস্ফিয়ার হল বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে দূরবর্তী স্তর । এই স্তরটি আয়নোস্ফিয়ারের ওপরে প্রায় ৭০০ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত ।

আয়োনোস্ফিয়ার বা থার্মোস্ফিয়ার (Ionosphere or Thermosphere)

আয়োনোস্ফিয়ার (Ionosphere) : মেসোস্ফিয়ার স্তরের শেষ সীমা হল মেসোপজ । আর এই মেসোপজের ওপরে প্রায় ৫০০ কিমি.