উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (The Northern Mountains)

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 12/19/2021 - 20:55

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (The Northern Mountains) : ভারতের সমগ্র উত্তর অংশ জুড়ে উত্তরে তিব্বত মালভূমি এবং দক্ষিণে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের মাঝে অবস্থান করছে উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল । প্রায় নিরবিচ্ছিন্ন পর্বতশ্রেণি নিয়ে গড়ে ওঠা এই অঞ্চলটি পশ্চিমে কাশ্মীর থেকে পূর্বে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত । প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৬০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার চওড়া বিশাল এই পার্বত্য অঞ্চলটি ভারতের উত্তর সীমান্তকে প্রাচীরের মতো রক্ষা করছে । ভূপ্রকৃতির বিভিন্নতা অনুযায়ী এই অঞ্চলটি আবার পাঁচ ভাগে বিভক্ত । যথা — (১) হিমালয় পর্বতশ্রেণি (The Himalayan Ranges), (২) কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি (Karakoram Ranges), (৩) লাডাক পর্বতশ্রেণি (Ladakh Range), (৪) উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল বা পূর্বাঞ্চল (The North-eastern region) এবং  (৫) মেঘালয় মালভূমি অঞ্চল (Meghalaya Plateau region)।

(১) হিমালয় পর্বতশ্রেণি (The Himalayan Ranges): পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি । উত্তর-পশ্চিমের পামীরগ্রন্থি থেকে নির্গত হয়ে এই পর্বতশ্রেণি অর্ধচন্দ্রাকারে পশ্চিমে জম্মু-কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বতশৃঙ্গ থেকে শুরু করে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের নামচা-বারওয়া পর্বতশৃঙ্গ পর্যন্ত প্রায় ২,৫০০ কিমি দীর্ঘ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে । নাঙ্গা পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৮,১২৬ মি. এবং নামচাবারওয়া পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৭,৭৫৬ মি. ।

ভূপ্রকৃতি : হিমালয় পর্বতশ্রেণিটি প্রস্থ বরাবর দক্ষিণ থেকে উত্তরে বিভিন্ন উচ্চতার চারটি সমন্তরাল পর্বতশ্রেণির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে । এই চারটি পর্বতশ্রেণি হল— (i) শিবালিক হিমালয়, (ii) হিমাচল হিমালয় বা অবহিমালয়, (iii) হিমাদ্রি বা উচ্চহিমালয়, (iv) টেথিস হিমালয়

(i) শিবালিক হিমালয় (The Outer Himalayas or Shiwalik) : হিমালয় পর্বতশ্রেণির সর্ব দক্ষিণ প্রান্তে কম উচ্চতাযুক্ত ছোটো ছোটো পাহাড় সারি বেঁধে শিবালিক বা বহির্হিমালয় গঠিত হয়েছে । এই পর্বতশ্রেণির গড় উচ্চতা ৬০০ মিটার থেকে ১৫০০ মিটার এবং প্রস্থ ১০ কিমি. থেকে ১৫ কিমি. । এই অঞ্চলটির দক্ষিণ ঢাল বেশ খাড়া এবং উত্তরের অংশ ঢালু প্রকৃতির ।

(ii) হিমাচল হিমালয় বা অবহিমালয় (The Lesser Himalayas or Himachal) : শিবালিক হিমালয়ের উত্তরে এবং হিমাদ্রি হিমালয়ের দক্ষিণে গড়ে ২০০০ মিটার থেকে ৩৩০০ মিটার উঁচু এবং ৬০ কিমি. থেকে ৮০ কিমি. চওড়া পর্বতশ্রেণিটি হিমাচল হিমালয় বা অবহিমালয় নামে পরিচিত । বহুযুগ ধরে ক্ষয়ের ফলে হিমাচল হিমালয় বহু অংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । পিরপঞ্জাল, ধৌলাধর, মুসৌরি, নাগটিব্বা মহাভারত প্রভৃতি এই অঞ্চলের প্রধান পর্বতশ্রেণি । হিমাচল হিমালয় উত্তরে ক্রমশ ঢালু হয়ে হিমাদ্রি হিমালয়তে মিশেছে ।

(iii) হিমাদ্রি বা উচ্চহিমালয় (The Greater Himalayas or the Himadri) : হিমাচল হিমালয়ের উত্তরে অবস্থান করছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি হিমাদ্রি হিমালয় বা উচ্চ হিমালয় । এই পর্বতশ্রেণির গড় উচ্চতা ৬,০০০ মিটারেরও বেশি । হিমালয় পর্বতের এই অংশটি বছরের সব সময় বরফে ঢাকা থাকে বলে একে হিমাদ্রি বা হিমগিরি বলা হয় । হিমাদ্রি হিমালয়ের বিখ্যাত শৃঙ্গগুলি হল—পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট । এর উচ্চতা ৮,৮৫৪ মিটার । তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা । এর উচ্চতা ৮,৫৯৮ মিটার । মাকালু পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৮,৪৮১ মিটার ।  ধবলগিরি পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৮,১৭২ মিটার, নন্দাদেবী পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৭,৮১৭ মিটার, কামেট পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৭,৭৫৬ মিটার প্রভৃতি । হিমাদ্রি হিমালয় ক্রমশ ঢালু হয়ে তিব্বতের মালভূমিতে মিশেছে ।

(iv) টেথিস হিমালয় (Trans-Himalayas or the Tethys Himalayas) : হিমাদ্রির উত্তরে প্রায় ৪০ কিমি. চওড়া ও ৪,০০০ মিটার থেকে ৫,০০০ মিটার গড় উচ্চতাসম্পন্ন পর্বতশ্রেণিকে টেথিস বা তিব্বতীয় হিমালয় বলে । এখানের জাস্কর পর্বতশ্রেণির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল লিওপারগেল । এর উচ্চতা হল ৭,৪২০ মিটার ।

আঞ্চলিক বিভাগ (Regional Divisions of the Himalayas) : আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে হিমালয় পর্বতশ্রেণিকে দৈর্ঘ্য বরাবর তিনটি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করা যায় । যেমন — (i) পশ্চিম হিমালয় (Western Himalayas), (ii) মধ্য হিমালয় (Central Himalayas) ও (iii) পূর্ব হিমালয় (Eastern Himalayas) ।

(i) পশ্চিম হিমালয় (Western Himalayas) : পশ্চিমে জম্মু-কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বত থেকে পূর্বে নেপাল সীমান্তে অবস্থিত কালি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটিকে পশ্চিম হিমালয় বলা হয় । ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পশ্চিম হিমালয়কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা: (i.i) কাশ্মীর হিমালয় (Kashmir Himalaya), (i.ii) হিমাচল হিমালয় (Himachal Himalaya) এবং (i.iii) কুমায়ুন হিমালয় (Kumaon Himalayas) ।

(i.i) কাশ্মীর হিমালয় (Kashmir Himalaya) : এই অংশে দক্ষিণ থেকে উত্তরে পরস্পর সমান্তরালে অবস্থান করছে পুঞ্চ পাহাড়, পিরপঞ্জাল ও জাস্কর পর্বতশ্রেণি । পিরপঞ্জাল ও জাস্কর পর্বতশ্রেণির মাঝখানে অবস্থান করছে বিখ্যাত কাশ্মীর উপত্যকা । এই সমতল উপত্যকার অসামান্য নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য একে 'ভূস্বর্গ' বলে । এই উপত্যকার মাঝে রয়েছে বিখ্যাত ও ভারতের উচ্চতম স্বাদু জলের হ্রদ ডাল হ্রদউলার হ্রদ । পিরপিঞ্জল পর্বতশ্রেণি কাশ্মীর উপত্যকাকে ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে । এখানে বানিহাল, জোজি লা, বুর্জি লা প্রভৃতি গিরিপথগুলি উল্লেখযোগ্য । কেবলমাত্র বানিহাল বা জহর পাস, পিরপিঞ্জল পাস, বুলন্দপীর প্রভৃতি গিরিপথগুলো দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় প্রবেশ করা যায় । কাশ্মীর হিমালয়ের জোজিলা পাস গিরিপথটি দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে লাদাখের রাজধানী লে-তে যাওয়া যায় । ভারতের সর্বোচ্চ গিরিপথ খারদুং লা এই অঞ্চলে অবস্থান করছে । এর উচ্চতা ৫,৩৫৯ মিটার । বিয়াফো, বলটারো, হিসপার প্রভৃতি এখানকার উল্লেখযোগ্য বিশালাকৃতির হিমবাহ ।

(i.ii) হিমাচল হিমালয় (Himachal Himalaya) : পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত হিমাচল হিমালয় অঞ্চলে ধৌলাধর, নাগটিব্বা, মুসৌরি প্রভৃতি প্রধান পর্বতশ্রেণি অবস্থান করছে ।

(i.iii) কুমায়ুন হিমালয় (Kumaon Himalayas) : উত্তরাখণ্ডে অবস্থিত কুমায়ুন হিমালয়ের উত্তর অংশের গড় উচ্চতা ৬,০০০ মিটারেরও বেশি । নন্দাদেবী, ত্রিশূল, কেদারনাথ প্রভৃতি বিখ্যাত কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গ এখানে অবস্থান করছে । নন্দাদেবী পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৭,৮১৭ মিটার, ত্রিশূল পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৭,১২০ মিটার, কেদারনাথ পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৬,৯৪০ মিটার । এখানে হিমবাহসৃষ্ট বহু 'দুন' উপত্যকা রয়েছে । এই অঞ্চলের হিমবাহসৃষ্ট হ্রদগুলিকে 'তাল' বলে । এই তালগুলির মধ্যে নৈনিতাল, ভীম তাল, সাততাল, নওকুচি তাল প্রভৃতি বিখ্যাত । কুমায়ুন হিমালয়ের মানাপাস, নিতিপাস প্রভৃতি গিরিপথগুলি দিয়ে ভারতের উত্তরাঞ্চল রাজ্য থেকে তিব্বত যাওয়া যায় ।

(ii) মধ্য হিমালয় (Central Himalayas) : পশ্চিমে নেপালের কালি নদী থেকে পূর্বে ভারতের সিঙ্গালিলা পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটি মধ্য হিমালয় নামে পরিচিত । মধ্য হিমালয় হল পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের সীমানা । এই অংশে অবস্থান করছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট । এছাড়া মাকালু, ধবলগিরি, অন্নপূর্ণা, গৌরীশঙ্কর প্রভৃতি পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গগুলি এই পার্বত্য অঞ্চলটিতে অবস্থিত । মধ্য হিমালয়ের সমগ্র অংশই নেপাল রাষ্ট্রের অন্তর্গত ।

(iii) পূর্ব হিমালয় (Eastern Himalayas): পশ্চিমে সিঙ্গালিলা পর্বত থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের নামচাবারওয়া শৃঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত অংশটিকে বলে পূর্ব হিমালয় । পূর্ব হিমালয়ের সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণি পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলাকে নেপাল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে । পশ্চিম থেকে পূর্বে এই অঞ্চলটি তিনটি ভাগে বিভক্ত । — (ক) দার্জিলিং-সিকিম হিমালয়, (খ) ভুটান হিমালয় এবং (গ) অরুণাচল হিমালয় । দার্জিলিং-সিকিম হিমালয়ে অবস্থান করছে ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম তথা পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা । এর উচ্চতা হল ৮,৫৯৮ মিটার । কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গটি নেপালের ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে অবস্থিত । সিকিম ও দার্জিলিং হিমালয় প্রায় খাড়াভাবে তরাই -এর সমভূমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে । এ ছাড়াও সন্দাকফু, ফালুট, সবরগ্রাম প্রভৃতি পর্বতশৃঙ্গ এই অঞ্চলে অবস্থিত । অরুণাচল হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল নামচাবারওয়া । এর উচ্চতা হল ৭,৭৫৬ মিটার । পূর্ব হিমালয়ের নাথুলা পাস, জেলেপলা পাস প্রভৃতি গিরিপথগুলি দিয়ে তিব্বতের চুম্বি উপত্যকায় যাওয়া যায় ।

(২) কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি (Karakoram Ranges) : এই পর্বতশ্রেণিটি পামীর মালভূমি থেকে পশ্চিমে সিন্ধু নদী পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য জুড়ে অবস্থান করছে । লাডাক মালভূমির উত্তরে অবস্থিত কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির গড় উচ্চতা ৬,১০০ মি. । ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তথা পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ গডউইন অস্টিন বা K2 এই অংশে অবস্থান করছে । এর উচ্চতা হল ৮,৬১১ মিটার ।

(৩) লাডাক পর্বতশ্রেণি (Ladakh Range) : কারাকোরাম ও জাস্কর পর্বতশ্রেণির মাঝে অবস্থান করছে প্রায় ৩৫০ কিমি. দীর্ঘ লাডাক পর্বতশ্রেণি । এই অঞ্চলটির গড় উচ্চতা ৬,০০০ মি. । এই পর্বতশ্রেণির উত্তরে অবস্থান করছে ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি লাডাক । ভারতের বৃহত্তম হিমবাহ সিয়াচেন এখানে অবস্থিত ।

(৪) উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল বা পূর্বাঞ্চল (The North-eastern region) : ভারতের একেবারে উত্তর-পূর্ব অংশে মেঘালয় বাদে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে ভারত ও মায়ানমার সীমান্ত বরাবর উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত অনেকগুলি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটি সামগ্রিকভাবে উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল বা পূর্বাঞ্চল নামে পরিচিত । এই অঞ্চলে পাটকই, লুসাই, নাগা, মিশমি, মিকির, কোহিমা, বরাইল প্রভৃতি ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রসারিত হয়েছে । অঞ্চলটির গড় উচ্চতা ১,৫০০ মিটার থেকে ৪,০০০ মিটার । মিশমি পর্বতের দাফা বুম পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ । এর উচ্চতা হল ৪,৫৭১ মিটার । মণিপুরে ইম্ফল উপত্যকায় অবস্থিত লোগটাক হ্রদ নিসর্গ সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত ।

(৫) মেঘালয় মালভূমি (Meghalaya Plateau region) : মেঘালয় প্রদেশে অবস্থিত গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া ও মিকিরের পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে মেঘালয় মালভূমি গঠিত । অঞ্চলটি অতীতে ভূ-আলোড়নের ফলে ছোটোনাগপুর মালভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বর্তমানে সমপ্রায়ভূমিতে পরিণত হয়েছে । অঞ্চলটির গড় উচ্চতা ৬০০-২,০০০ মি. । এই মালভূমির পশ্চিমে অবস্থিত গারো পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নকরেক । এর উচ্চতা হল ১,৪১২ মিটার । মধ্যভাগে খাসি পাহাড়ের লুম শিলং সমগ্র মেঘালয় মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ । এর উচ্চতা হল ১,৯৬১ মিটার । আর পূর্বপ্রান্তে অবস্থান করছে জয়ন্তিয়া পাহাড় । শিলং মালভূমির দক্ষিণে চেরা মালভূমি অবস্থিত । এটি চুনাপাথরে গঠিত । এই মালভূমিতে চুনাপাথরের বহু গুহা দেখা যায় ।   

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের গুরুত্ব :

(i) হিমালয় পর্বত ভারতের উত্তর সীমান্তে দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মতো দণ্ডায়মান থেকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে ভারতকে রক্ষা করছে ।

(ii) উত্তরে হিমালয় পর্বতের অবস্থান ভারতকে শীতল সাইবেরিয় বায়ুর তীব্র শীতলতা থেকে রক্ষা করছে ।

(iii) মৌসুমী বায়ু মেঘালয় মালভূমিতে ধাক্কা খেয়ে চেরাপুঞ্জি-মৌসিনরাম অঞ্চলে বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত ঘটায় ।

(iv) হিমালয়ের সুউচ্চ প্রাচীরে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ভারতে বৃষ্টিপাত ঘটায় ।

(v) এই অঞ্চল থেকে উৎপন্ন বরফগলা জলে পুষ্ট নদনদী উর্বর ভূমি গঠন করে ভারতকে শস্যশ্যামলা করেছে ।

(vi) এই অঞ্চলের বনভূমির মূল্যবান কাঠ ও বনজ সম্পদ এখানকার অধিবাসীদের প্রধান জীবনজীবিকা ।

(vii) ভারতের গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদীগুলি হিমালয় পর্বত থেকে প্রচুর পরিমাণে পলি বয়ে নিয়ে এসে উত্তর ও পূর্ব ভারতের বিশাল সমভূমি অঞ্চলের সৃষ্টি করেছে ।

(viii) মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এখানে বহু পর্যটনকেন্দ্র ও স্বাস্থ্যনিবাস গড়ে উঠেছে ।

*****

Comments

Related Items

বর্জ্যের উৎস (Source of waste)

বর্জ্যের উৎস (Source of waste) : বর্তমান আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় মানুষের নানাবিধ কার্যকলাপেরপরিধিই হল বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্র । বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্রগুলি হল — (১) গৃহস্থালির বর্জ্য, (২) শিল্প বর্জ্য, (৩) কৃষিজ বর্জ্য,  (৪) পৌর

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste)

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste) : বিভিন্ন কারণে পরিবেশে নানা প্রকারের বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে । বর্জ্য পদার্থ তিন প্রকার, যেমন— (ক) কঠিন বর্জ্য, (খ) তরল বর্জ্য ও (গ) গ্যাসীয় বর্জ্য ।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)

বর্জ্যের ধারণা (Concept of Waste) : 'বর্জ্য' কথাটির অর্থ হল 'যা বর্জনযোগ্য' । যে-কোনো কঠিন, তরল অথবা গ্যাসীয় সম্পদকে প্রাথমিকভাবে ব্যবহারের পরে যে মূল্যহীন, নষ্ট বা খারাপ হয়ে যাওয়া অব্যবহার্য বস্তু পড়ে থাকে, যা সরাসরি মানুষের কাজে না লেগে পরিবেশ দূষণ

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?

বান ডাকা (Tidal Bores)

বান ডাকা (Tidal Bores) : সাধারণত বর্ষাকালে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ভরা কোটালের সময় চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে জোয়ারের জল নদীর খাড়িপথ ও মোহনা দিয়ে খুব উঁচু হয়ে প্রবল বেগে উজানের দিকে অর্থাৎ নদী প্রবাহের বিপরীত দিকে অগ্রসর হয় । ঢেউ, জলোচ্ছ্বাসসহ নদীর এই