রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগ সমূহ

Submitted by arpita pramanik on Sat, 01/05/2013 - 23:55

রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগ সমূহ :

কোনো রোগের কারণে অথবা ক্ষতের মাধ্যমে দেহ থেকে অতিরিক্ত রক্ত নির্গত হয়ে গেলে, রক্ত সঞ্চালনের [blood transfusion] মাধ্যমে তা প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে । বর্তমানে বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক, নার্সিং হোম অথবা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্ত পাওয়া যায় । সব মানুষের রক্ত এক ধরনের নয়, অর্থাৎ রক্ত বিভিন্ন গ্রুপের হতে পারে । রোগীকে রক্ত দেওয়ার আগে সতর্কতার সাথে রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে তবেই রোগীকে রক্ত প্রদান করা উচিত ।

রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগেরও সঞ্চালন ঘটতে পারে, যথা : AIDS, হেপাটাইটিস এবং ম্যালেরিয়া ।

অর্জিত অনাক্রম্যতা ঘাটতি রোগ লক্ষণ সমূহ [ Acquired Immune Deficiency Syndrome = AIDS]:- আমাদের দেহে রোগ সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এক বিশেষ ক্ষমতা থাকে, যাকে অনাক্রম্যতা [immunity] বলা হয় । দেহের অনাক্রম্যতা ধর্মের ব্যবহার করে সর্বপ্রথম বসন্ত রোগের টীকা তৈরি করেন এডওয়ার্ড জেনার [Edward Jenner] । কিছু কিছু রোগের সাপেক্ষে আমরা জন্ম থেকেই অনাক্রম্যতা বিশিষ্ট হই এবং কিছু কিছু রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অথবা রোগের জীবাণুর অক্ষতিকর অবস্থার টীকা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা অনাক্রম্যতা লাভ করি ।

[১] এডস [AIDS : Acquired Immuno Deficiency Syndrome]:-  এডস একটি সাংঘাতিক রোগ, যা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে একেবারে নষ্ট করে দিয়ে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় । এখনও পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী রোগের কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি । 1981 সালের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই রোগকে প্রথম সনাক্ত করা হয় । জানা গিয়েছে যে, HIV নামে একটি ভাইরাস এই রোগের জন্য দায়ী । 

এডস সংক্রমণের লক্ষণ :-  HIV ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করার পর সাধারণত 2 — 10 বছরের মধ্যে AIDS রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয় । এই রোগের প্রধান কয়েকটি লক্ষণ হল :

[i]  দেহের ওজন ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া ,

[ii]  ক্রমাগত পেট খারাপ হওয়া, যা একেবারে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে,  

[iii]  প্রায়ই জ্বর হওয়া,  

[iv] মুখে, জিভে ও গলায় ঘা,

[v]  আক্রান্ত দেহে হারপিসসহ ত্বকের অন্যান্য রোগের আবির্ভাব ,

[vi] যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া জাতীয় রোগ,

[vii] ক্যান্সার প্রভৃতি ।

ওপরের এই সব রোগ লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার এক থেকে ছ'বছেরের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয় ।

 

এডস প্রতিরোধ করার জন্য অবশ্য পালনীয় নিয়মাবলী:-

[i]  সেলুন বা নাপিতের কাছে অন্য লোকের ব্যবহার করা ব্লেড, ক্ষুর বা রেজার ব্যবহার করা উচিত নয় ।

[ii] রক্ত নেওয়ার সময় প্রথমে রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, রক্তদাতার AIDS আছে কি না ।  

[iii] সব সময় একবার ব্যবহারযোগ্য ডিসপোজেবল [Disposable] ইনজেকশন সিরিঞ্জ ও সূচ ব্যবহার করা উচিত ।

[iv] অজানা ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সংসর্গ করা উচিত নয় ।

 

[২] হেপাটাইটিস [Hepatitis]:- ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি ক্ষতিকারক রোগ হল হেপাটাইটিস । এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির যকৃত ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং যকৃতের প্রদাহ সৃষ্টি হয় । সাধারণত দূষিত খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে হেপাটাইটিস A রোগের সংক্রমণ ঘটে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি রক্ত গ্রহণ অথবা সংক্রামিত ব্যক্তির রক্তের সংস্পর্শযুক্ত ইনজেকশনের সূচ ব্যবহারের জন্য হেপাটাইটিস-B  রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে । হেপাটাইটিস-B হল অত্যন্ত ভয়াবহ ও ক্ষতিকারক রোগ । সঠিক সময়ে এই রোগ ধরা না পড়লে এই রোগে প্রায়ই মৃত্যু হতে দেখা যায় ।

[৩] ম্যালেরিয়া [Malaria] :-  Plasmodium vivax নামে আদ্যপ্রাণীর সৃষ্টি করা একটি ক্ষতিকারক রোগ হল ম্যালেরিয়া । এই রোগের অন্যতম লক্ষণগুলি হল — 2 —3 দিন পর পর প্রবল জ্বর, রক্তাল্পতা, যকৃত ও প্লীহার বৃদ্ধি এবং প্রদাহ প্রভৃতি । আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু পাওয়া যায় এবং স্ত্রী-অ্যানোফিলিস মশার দংশনের মাধ্যমে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে । 

প্রতিরোধ:- রক্ত বাহিত রোগগুলি যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে সংক্রামিত হতে না পারে, সেই কারণে কোনো লোকের কাছ থেকে রক্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে রক্ত দাতার রক্তে জীবাণুশূণ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হওয়া প্রয়োজন ।

*****

Related Items

কোশের গঠন ও বৈশিষ্ট্য

যে কোশে সংগঠিত নিউক্লিয়াস এবং পর্দাঘেরা কোশঅঙ্গাণু থাকে না সেই রকম কোশকে প্রোক্যারিওটিক কোশ বা আদি কোশ বলে । যে কোশে সুগঠিত বা সংগঠিত নিউক্লিয়াস এবং পর্দাঘেরা কোশ-অঙ্গাণু থাকে, সেই রকম কোশকে ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ বলে । ...

অ্যাড্রিনালিন (Adrenaline)

অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির মেডালা অঞ্চল থেকে অ্যাড্রিনালিন হরমোন নিঃসৃত হয় । অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিদ্বয় বৃক্ক দুটির ওপর অবস্থিত । অ্যাড্রিনালিনকে এপিনেফ্রিন ও বলা হয় । অ্যাড্রিনালিন প্রাণীদের সংকটকালীন বা জরুরিকালীন হরমোন নামে পরিচিত, কারণ বিপদকালে এই হরমোন দেহকে ...

ভাইরাস, জীবাণু, রোগ এবং স্বাস্থ্যবিধি

রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাসের রোগসংক্রমণ প্রক্রিয়া, উপকারী ব্যাকটিরিয়া, মানবদেহে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটিরিয়া, উপকারী ছত্রাক, অপকারী ছত্রাক, ক্ষতিকর প্রোটোজোয়া, রোগ এবং স্বাস্থ্যবিধি, টীকাকরণ এবং অনাক্রম্যতাকরণ, সাধারণ জীবাণু নাশকের ব্যবহার ...

অভিযোজন (Adaptation)

প্রত্যেক জীব সব সময়েই চেষ্টা করে তার পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে বা মানিয়ে নিতে এবং সেই পরিবেশ থেকে নানান রকমের সুবিধা পেতে । পরিবেশের বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেকে ঠিক মতো মানিয়ে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা এবং বংশবৃদ্ধি ...

জৈব বিবর্তন বা অভিব্যক্তি (Evolution)

ল্যাটিন শব্দ 'Evolver' থেকে Evolution কথাটির উত্পত্তি হয়েছে । আর Evolution কথাটির অর্থ 'ক্রমবিকাশ' । পৃথিবীতে প্রথম উত্পন্ন জীব ছিল এককোশী এবং সরল প্রকৃতির । ওই এককোশী সরল জীব থেকে ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত জটিল ..