মাইটোসিসের দশা (Stages of Mitosis)

Submitted by arpita pramanik on Thu, 12/13/2012 - 21:51

মাইটোসিসের দশা (Stages of Mitosis)

মাইটোসিস বিভাজন দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা: (A) নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস এবং  (B) সাইটোপ্লাজমের বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস

(A) নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস:- মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস, চারটি দশায় সম্পন্ন হয় । মাইটোসিসের এই দশাগুলি হল [1] প্রফেজ,  [2] মেটাফেজ,   [3] অ্যানাফেজ   এবং [4] টেলোফেজ

ক্যারিওকাইনেসিসের সংজ্ঞা:- যে প্রক্রিয়ায় মাতৃকোশের নিউক্লিয়াসটি চার দশার মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠন করে, তাকে ক্যারিওকাইনেসিস বলে । এক কথায় নিউক্লিয়াসের বিভাজন পদ্ধতি-ই হল ক্যারিওকাইনেসিস

ক্যারিওকাইনেসিসের কাজ:-

[i]  অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করা ।

[ii]  মাতৃ নিউক্লিয়াসের বৈশিষ্ট্যাবলি অপত্য নিউক্লিয়াসে সঞ্চারিত করা ।

[1] প্রফেজ (Prophase):-

[i] এই দশার প্রারম্ভে নিউক্লিয়াসটি আকার ও আয়তনে বড়ো হয় । এরপর জলবিয়োজনের ফলে নিউক্লিয় জালক বা ক্রোমাটিন সূত্র থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোম সৃষ্টি হয় । পরে প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড গঠন করে, এরা সেন্ট্রিমিয়ার অঞ্চলে জোড়ায় জোড়ায় পরস্পরের সঙ্গে পেঁচিয়ে অবস্থান করে ।

[ii] এই পর্যায়ে নিউক্লিওলাসনিউক্লিয় পর্দা ক্রমশ বিলুপ্ত হতে থাকে ।

[iii]  প্রাণী কোশের ক্ষেত্রে সেন্ট্রিওলটি বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য সেন্ট্রিওল গঠন করে নিউক্লিয়াসের দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে ।

প্রফেজের সংজ্ঞা :  মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস বিভাজনের যে দশায়

[i] নিউক্লিয় জালিকা থেকে ক্রোমোজোম সৃষ্টি হয়,

[ii]  প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হয়ে ২টি করে ক্রোমাটিন গঠন করে এবং

[iii]  নিউক্লিয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি ঘটতে থাকে, তাকে প্রফেজ বলে ।

প্রফেজের কাজ:-

[i]  ক্রোমোজোম সৃষ্টি করা ।

[ii]  ক্রোমাটিড গঠন করা ।

[iii]  নিউক্লিয় পর্দা এবং নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি ঘটানো ।

[iv]  ক্রোমাটিডদ্বয়ের স্পাইরালাইজেশন ঘটানো ।

[2] মেটাফেজ [Metaphase]:- 

এই দশার শুরুতে নিউক্লিয় পর্দা এবং নিউক্লিওলাস সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হলে, বেম বা মাকু গঠিত হয় । বেমের উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বেমতন্তুগুলি বিস্তৃত থাকে । ক্রোমোজোমগুলি বেমের বিষুব অঞ্চলে বেমতন্তুর সঙ্গে সেন্ট্রিমিয়ার দিয়ে আটকে থাকে ।

প্রাণীকোশের বেমতন্তু গঠিত হয় নব গঠিত সেন্ট্রিওলের অ্যাস্ট্রাল রশ্মি থেকে এবং উদ্ভিদ কোশের বেমতন্তু গঠিত হয় সাইটোপ্লাজমীয় তন্তু মাইক্রোটিউবিউল থেকে । 

মেটাফেজের সংজ্ঞা: মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস বিভাজনের যে দশায় বেম গঠিত হয় এবং ক্রোমোজোমগুলি বেমের নিরক্ষীয় তলে বিন্যস্ত থাকে, তাকে মেটাফেজ বলে ।

মেটাফেজের কাজ:-

[i] বেমতন্তুসহ বেম বা স্পিণ্ডল গঠন করা ।

[ii] ক্রোমোজোমগুলি বেমের বিষুব অঞ্চলে বেম তন্তু দিয়ে আটকে রাখা ।

[iii] নিউক্লিয় পর্দা এবং নিউক্লিওলাসের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটানো ।

[3] অ্যানাফেজ [Anaphase]:-

এই দশায় ক্রোমোজোমের সেন্ট্রিমিয়ার দু'ভাগে বিভক্ত হওয়ায় ক্রোমাটিডগুলি পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি অপত্য ক্রোমোজোম গঠন করে । এরপর অপত্য ক্রোমোজোমের অর্ধেক অংশ উত্তর মেরুর দিকে এবং অর্ধেক অংশ দক্ষিণ মেরুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে । এই রকম চলনকে ক্রোমোজোমীয় গমন বলে ।

অ্যানাফেজের সংজ্ঞা:- মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস বিভাজনের যে দশায় অপত্য ক্রোমোজোমগুলি বেমের দুই বিপরীত মেরুপ্রান্তে পৌঁছায়, তাকে অ্যানাফেজ বলে

অ্যানাফেজের কাজ:-

[i]  অপত্য ক্রোমোজোম সৃষ্টি ।

[ii] অর্ধেক অপত্য ক্রোমোজোমকে উত্তর মেরু এবং অর্ধেক অপত্য ক্রোমোজোমকে দক্ষিণ মেরুতে পাঠানো ।

[iii] স্টেমবডি গঠন করা ।

[4] টেলোফেজ [Telophase]:-

টেলোফেজ হল মাইটোসিসের শেষ বা চতুর্থ দশা । এই দশার শুরুতে ক্রোমোজোমগুলি বেমের দুই মেরু প্রান্তে পৌঁছুলে তাদেরকে বেষ্টন করে আবার নিউক্লিয় পর্দার আবির্ভাব ঘটে এবং নিউক্লিওলাস পুনর্গঠিত হয় । এই অবস্থায় ক্রোমোজোমগুলি পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে নিউক্লিয় জালক গঠন করে, এর ফলে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয় ।

টেলোফেজের সংজ্ঞা :- মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস বিভাজনের যে দশায় একটি মাতৃ নিউক্লিয়াস থেকে বেমের দুই বিপরীত মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়, তাকে টেলোফেজ বলে ।

টেলোফেজের কাজ:-

[i] বেমের দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী ক্রোমোজোমদের ঘিরে নিউক্লিয় পর্দার আবির্ভাব ঘটানো ।

[ii] নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটানো ।

[iii] দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করা ।

(B) সাইটোপ্লাজমের বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস (Cytokinesis)

মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে সাইটোপ্লাজমের বিভাজন শুরু হয় । উদ্ভিদ কোশের ক্ষেত্রে অপত্য নিউক্লিয়াস দুটির মাঝখানে কোশপাত [cell plate] গঠিত হয় । কোশপাত গঠনে মাইক্রোটিউবিউল এবং ছোটো ছোটো গলগি ভেসিকল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । পরে এই কোশপাত কোশপ্রাচীরে রূপান্তরিত হয়, ফলে জনিতৃ কোশটির সাইটোপ্লাজম দু'ভাগে ভাগ হয়ে গিয়ে দু'টি অপত্য কোশসৃষ্টি করে ।

প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস বিভাজনের পর নবগঠিত নিউক্লিয়াসে দুটির মাঝখান থেকে উভয় দিকের কোশপর্দা ভিতরের দিকে নলাকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । ফলে সাইটোপ্লাজম ক্লিভেজ [cleavage] প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে দু'টি অপত্যকোশগঠন করে ।

সাইটোকাইনেসিস সংজ্ঞা:  মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোশবিভাজনের যে দশায় বিভাজনরত কোশের সাইটোপ্লাজম বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসকে এমনভাবে বেষ্টন করে থাকে, যার ফলে দুটি অপত্যকোশের সৃষ্টি হয়, তাকে সাইটোকাইনেসিস বলে ।

সাইটোকাইনেসিসের কাজ :

[i]  সাইটোপ্লাজমকে বিভাজিত করা ।

[ii]  অপত্যকোশসৃষ্টি করা ।

উদ্ভিদকোশের সাইটোকাইনেসিস  ও প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস -এর পার্থক্য

উদ্ভিদকোশের সাইটোকাইনেসিস প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস
১. এটি সেলপ্লেট গঠনের মাধ্যমে ঘটে ১. এটি ফায়ারিং বা ক্লিভেজ পদ্ধতিতে ঘটে ।
২. দুই নিউক্লিয়াসের মাঝে জমতে থাকা ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট কণাগুলি একের পর এক জুড়ে গিয়ে সেলপ্লেট গঠন করে । সেলপ্লেটটি পরে মধ্যচ্ছদায় রূপান্তরিত হয়, আর এরই দু'পাশে সেলুলোজ, পেকটিন ইত্যাদি জমতে থাকায় একসময় প্রাথমিক কোশপ্রাচীর গড়ে ওঠে । এভাবেই মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম সমান দু'ই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ।

২. দুটি নিউক্লিয়াসের মাঝে বিষুব অঞ্চলের দু'ধার বরাবর দুটি খাঁজের সৃষ্টি হয় । ক্রমে ওই খাঁজ দুটি গভীর হয়ে পরস্পরের দিকে বাড়তে থাকলে এক সময় তারা মিলিত হয় এবং সাইটোপ্লাজমটি দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে । 

 

*****

Related Items

জনন ও বংশগতি

জনন অর্থাৎ বংশবিস্তার হল জীবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । পরিণত জীব অপত্য জীব সৃষ্টি করার মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখে । যে জীব থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে জনিতৃ জীব এবং জনিতৃ জীব থেকে সৃষ্টি হওয়া জীবকে অপত্য জীব বলে । ...

কোশ ও কোশ বিভাজন

কোশের প্রকারভেদ, প্রোক্যারিওটিক কোশ বা আদি কোশ, ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ, প্রোক্যারিওটিক কোশবা আদি কোশ, প্রোক্যারিওটিক কোশের সংজ্ঞা, প্রোক্যারিওটিক কোশের গঠন, প্রোক্যারিওটিক কোশের প্রধান বৈশিষ্ট্য, ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ ...

হরমোন (Hormones)

জীবদেহের যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সারা দেহে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে তাকেই হরমোন বলা হয় । হরমোন সাধারণত বিশেষ ধরনের কোষ, কলা এবং অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় । ওই জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সাধারণত প্রাণীদের ক্ষেত্রে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে ...

মানুষের স্নায়ুতন্ত্র ও জ্ঞানেন্দ্রীয়

উত্তেজনায় সাড়া দেওয়া জীবের একটি বিশেষ ধর্ম । পরিবেশ থেকে আসা নানান রকম উদ্দীপনা যেমন; চাপ, তাপ, ব্যথা, স্পর্শ, আলো, শব্দ, স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি গ্রহণের জন্য প্রাণীদেহে রিসেপ্টর নামে এক রকমের গ্রাহক যন্ত্র থাকে । নিউরোন, নিউরোনের শ্রেণিবিভাগ, মস্তিষ্ক ...

রেচন (Excretion)

রেচনের সংজ্ঞা এবং তার ব্যাখ্যা, রেচন অঙ্গ ও তন্ত্র, রেচন পদার্থ, রেচনের গুরুত্ব, উদ্ভিদের রেচন, উদ্ভিদের রেচনের বৈশিষ্ট্য, উদ্ভিদের রেচন পদার্থ ত্যাগের পদ্ধতি, উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন পদার্থ এবং তাদের অর্থকরী গুরুত্ব, নাইট্রোজেনবিহীন রেচন পদার্থ, নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ ...