বৃক্কের মাধ্যমে নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্যপদার্থের বহিষ্করণ

Submitted by arpita pramanik on Sun, 11/25/2012 - 14:58

প্রয়োজনীয় পদার্থ শোষিত হওয়ার পর বৃক্কের মাধ্যমে নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্যপদার্থের বহিষ্করণ (Excretion of nitrogenous waste through kidney after reabsorption or essential substances)

[১] দেহের অব্যবহৃত প্রোটিন ডি-অ্যামাইনেজ (di-aminase) নামে একরকমের উৎসেচকের প্রভাবে অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয় । এই অ্যামোনিয়া যকৃতে এসে আরজিনেজ [Arginase] নামে এক রকমের উৎসেচকের সহায়তায় অরনিথিন চক্রের (Ornithin cycle) মাধ্যমে ইউরিয়ায় পরিণত হয় ।

[২]  এই ইউরিয়া এবং অন্যান্য রেচন পদার্থযুক্ত রক্ত বৃক্কীয় ধমনীর মাধ্যমে বৃক্কে পৌঁছায় এবং অন্তর্মুখী ধমনিকা দিয়ে গ্লোমেরিউলাসে আসে ।  অন্তর্মুখী ধমনিকার তুলনায় বহির্মুখী ধমনিকার ব্যাস সংকীর্ণ হওয়ায় গ্লোমেরিউলাসে রক্তের যে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়, তারই ফলে রক্তের জলীয় অংশ (প্রোটিন ছাড়া), রেচন পদার্থ ও বিভিন্ন খনিজ লবণসহ গ্লোমেরিউলাসের জালকের পাতলা প্রাচীর ভেদ করে পরিস্রুত হয়ে ব্যাওমান ক্যাপসুলে প্রবেশ করে

[৩]  ব্যাওমান ক্যাপসুল থেকে পরিস্রুত তরল বৃক্কীয় নালিকায় প্রবেশ করে এবং সেখানে পরিস্রুত তরলের প্রয়োজনীয় পদার্থের (জল, গ্লুকোজ, অ্যামাইনো অ্যাসিড ও কয়েক ধরণের খনিজ লবণ ) পুনঃশোষণ (reabsorption) ঘটে । অ্যান্টি-ডাই-ইউরেটিক হরমোন বা ADH বৃক্কীয় নালীর  পুনঃশোষণে সহায়তা করে ।  পুনঃশোষণের পর বৃক্কীয় নালিকায় অবস্থিত তরলকেই মুত্র (urine) বলে । বৃক্কীয় নালিকার কিছু কিছু রেচন পদার্থ, যেমন : অ্যামোনিয়া, হিপপিউরিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি ক্ষরিত হয়ে মুত্রের মধ্যে অবস্থান করে । বৃক্কীয় নালিকার পুনঃশোষণের পর বাকি তরল মুত্র রূপে সংগ্রাহী নালীতে প্রবেশ করে । সেখান থেকে মুত্র মাইনর ও মেজর ক্যালিক্স হয়ে গবিনীতে নিঃসৃত হয় ।

ADH বা অ্যান্টি-ডাই-ইউরেটিক হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থির পশ্চাদ ভাগ থেকে ক্ষরিত হয়, যা বৃক্কীয় নালীর পুনঃশোষণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহন করে । এই হরমোনের কম ক্ষরণে বৃক্কীয় নালিকায় পুনঃশোষণের হার কমে যাওয়ায় অতিরিক্ত মুত্র সৃষ্টি হতে থাকে, ফলে বহুমুত্র (শর্করা বিহীন) রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় ।

মুত্র কী ? 

মুত্র মেরুদন্ডী প্রাণীদের জলীয় রেচন পদার্থ । স্বাভাবিক মুত্র পরিষ্কার, ফিকে হলুদ বর্ণের এবং গন্ধযুক্ত (aromatic odour) । বৃক্কের নেফ্রনের মধ্যে মুত্র সৃষ্টি হয় এবং বৃক্ক থেকে নিঃসৃত হয়ে গবিনীর মাধ্যমে বাহিত হয়ে মুত্রাশয়ে সঞ্চিত হয় । এর পর প্রয়োজনকালে মুত্রনালীর মাধ্যমে দেহের বাহিরে নির্গত হয় ।

মুত্রের উপাদান [Composition of urine] :- একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের প্রতিদিন প্রায় 1500 cc  বা 1½ লিটার মুত্র উত্পন্ন ও নিঃসৃত হয় । ওই পরিমাণ মুত্রে জল ছাড়া প্রায় 50 gm. কঠিন পদার্থ থাকে । কঠিন পদার্থের মধ্যে নানারকম অজৈব ও জৈব পদার্থ থাকে ।

মুত্রের প্রধান অজৈব পদার্থগুলি :- সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, সালফেট, ফসফেট, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম,  আয়রণ ইত্যাদি । 

মুত্রের প্রধান জৈব পদার্থগুলি :-  ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিনিন, হিপপিউরিক অ্যাসিড, কিটোন বডি, অ্যাসিটোন ইত্যাদি । 

*****

Related Items

কর্ণ বা কান (Ear)

যে জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাহায্যে মানুষ বহিরাগত শব্দ শোনে তাকে কর্ণ বা কান বলে । মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হল - বহিঃকর্ণ, মধ্য কর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ । মানুষের বহিঃকর্ণটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত; যথা- কর্ণছত্র, কর্ণকুহর, এবং কর্ণপটহ । কর্ণছত্র দুটি মাথার দু'পাশে অবস্থিত এবং অনৈচ্ছিক ...

চক্ষু বা চোখ (Eye)

যে বিশেষ অঙ্গের দ্বারা প্রাণীরা পরিবেশ থেকে আলোকজাত উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং বহির্জগতের দৃশ্য দেখতে পায়, তাকে চোখ বলে । চক্ষু বা চোখ হল আমাদের দর্শনেন্দ্রিয় । আমাদের চোখ দুটি মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে অক্ষিকোটরে অবস্থিত । প্রতিটি চোখ একটি অক্ষিগোলক, একজোড়া অক্ষিপল্লব ...

প্রতিবর্ত চাপ বা রিফ্লেক্স আর্ক

যে স্নায়ুপথে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্নায়ুস্পন্দন আবর্তিত হয়, তাকে প্রতিবর্ত চাপ বা রিফ্লেক্স আর্ক বলে । প্রতিবর্ত চাপ সাধারণত তিনটি স্নায়ুকোষ দ্বারা গঠিত । তবে দুই অথবা বহু স্নায়ুকোষের সমন্বয়েও প্রতিবর্ত চাপ গঠিত হাতে পারে । প্রতিবর্ত চাপে সাইন্যাপস অর্থাৎ স্নায়ু-সন্নিধির অবস্থান অনুযায়ী ...

প্রতিবর্ত ক্রিয়া (Reflex action)

প্রাণীদেহে নির্দিষ্ট উত্তেজনার প্রভাবে যে তাত্ক্ষনিক, স্বতঃস্ফুর্ত ও অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তাকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে । প্রতিবর্ত ক্রিয়ার দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল- এই ক্রিয়া অনৈচ্ছিক এবং এটি সুষুম্নাকান্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । সুতরাং সুষুম্নাকান্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রিত প্রাণীদের অনৈচ্ছিক ...

স্নায়ু সন্নিধি ও স্নায়ুগ্রন্থি

সাইন্যাপস্ বা প্রান্তসন্নিকর্ষ হল দুটি নিউরোনের সংযোগস্থল, যেখানে একটি নিউরোনের অ্যাক্সনের প্রান্ত এবং অন্য একটি নিউরোনের ডেনড্রাইটের প্রান্ত খুব কাছাকাছি থাকে কিন্তু কখনই স্পর্শ করে না, মাঝে একটি আনুবীক্ষণিক ফাঁক থেকেই যায়, আর এর মধ্য দিয়েই নিউরোহিউমর নামে তরলের ...