Submitted by arpita pramanik on Fri, 01/04/2013 - 23:13

প্রোটোজোয়া (Protozoa) :

প্রোটোজোয়ার সংজ্ঞা [Definition of Protozoa]:- এককোশী আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী বলা হয় ।

ক্ষতিকর প্রোটোজোয়া [Pathogenic Protozoa]:- আদ্যপ্রাণীদের মধ্যে কিছু প্রাণী মানবদেহে পরজীবীরূপে বসবাস করে এবং নানারকম রোগ সৃষ্টি করে । এখানে পাঠক্রমভুক্ত কয়েকটি আদ্যপ্রাণীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হল :

[১] ম্যালেরিয়া-পরজীবী [Malaria Parasite]:- প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স [Plasmodium vivax] নামে এক রকমের আদ্যপ্রাণী [protozoa] হল ম্যালেরিয়া রোগ সৃষ্টিকারী পরজীবী প্রাণী । এরা অন্তঃকোশীয় [interacellular] হওয়ায় অন্তঃপরজীবী [endoparasite] হিসেবে মানবদেহের যকৃৎ-কোশ বা লোহিত রক্তকণিকায় বসবাস করে এবং মানবদেহে ও অন্যান্য প্রাণীদেহে ম্যালেরিয়া রোগ সৃষ্টি করে । এদের অযৌন দশা মানবদেহে এবং যৌন দশা স্ত্রী-অ্যানোফিলিস মশার দেহে সম্পন্ন হয় ।  স্ত্রী-অ্যানোফিলিস এই পরজীবীর বাহক । ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রধান লক্ষণ হল কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, উচ্চ তাপমাত্রা এবং ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়া । এই জ্বরের তিনটি অবস্থা হল কম্পন অবস্থা, জ্বরাবস্থা এবং ঘর্মাবস্থা সিঙ্কোনা গাছের উপক্ষার থেকে প্রাপ্ত কুইনাইন হল এই জ্বরের প্রতিষেধক ও নিরামক ঔষধ । 1880 খ্রিস্টাব্দে ফরাসী বিজ্ঞানী ল্যাভেরান [Laveran] প্রথম মানুষের রক্তে ম্যালেরিয়া পরজীবীর উপস্থিতি লক্ষ করেন । 1898 খ্রিস্টাব্দে রোনাল্ড রস [Ronald Ross] কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং তদানীন্তন প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতালে গবেষণা করে পাখির ম্যালেরিয়ায় অ্যানোফিলিস মশকীর ভুমিকা নির্ণয় করেন । রোনাল্ড রস তার ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত কাজের জন্য (ম্যালেরিয়া পরজীবী আবিষ্কার এবং রোগবিস্তারে মশকীর ভুমিকা) 1902 খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার পান ।

 

[২] এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা [Entamoeba histolytical]:-  এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা মানবদেহের বৃহদন্ত্রে বসবাসকারী এক রকমের ক্ষতিকর প্রোটোজোয়া । এটি মানবদেহে, উদরাময়, আমাশয়, লিভার অ্যাবসেস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে । এন্টামিবা সংক্রামিত রোগকে সাধারণভাবে অ্যামিবিয়োসিস [Amoebiasis] বলে । এন্টামিবা পোষকদের বৃহদন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি করে । ফলে মলের সঙ্গে পুঁজ ও রক্ত এবং মিউকাস নির্গত হয় । তখন রোগী বারে বারে মলত্যাগ করে এবং মলত্যাগের সময় পেটে ব্যথা অনুভব করে । অনেক সময় রোগীর জ্বরও হতে পারে । এই লক্ষণগুলিকেই একসাথে আমাশয় রোগ আখ্যা দেওয়া হয় ।

*****

Related Items

জনন ও বংশগতি

জনন অর্থাৎ বংশবিস্তার হল জীবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । পরিণত জীব অপত্য জীব সৃষ্টি করার মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখে । যে জীব থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে জনিতৃ জীব এবং জনিতৃ জীব থেকে সৃষ্টি হওয়া জীবকে অপত্য জীব বলে । ...

কোশ ও কোশ বিভাজন

কোশের প্রকারভেদ, প্রোক্যারিওটিক কোশ বা আদি কোশ, ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ, প্রোক্যারিওটিক কোশবা আদি কোশ, প্রোক্যারিওটিক কোশের সংজ্ঞা, প্রোক্যারিওটিক কোশের গঠন, প্রোক্যারিওটিক কোশের প্রধান বৈশিষ্ট্য, ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ ...

হরমোন (Hormones)

জীবদেহের যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সারা দেহে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে তাকেই হরমোন বলা হয় । হরমোন সাধারণত বিশেষ ধরনের কোষ, কলা এবং অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় । ওই জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সাধারণত প্রাণীদের ক্ষেত্রে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে ...

মানুষের স্নায়ুতন্ত্র ও জ্ঞানেন্দ্রীয়

উত্তেজনায় সাড়া দেওয়া জীবের একটি বিশেষ ধর্ম । পরিবেশ থেকে আসা নানান রকম উদ্দীপনা যেমন; চাপ, তাপ, ব্যথা, স্পর্শ, আলো, শব্দ, স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি গ্রহণের জন্য প্রাণীদেহে রিসেপ্টর নামে এক রকমের গ্রাহক যন্ত্র থাকে । নিউরোন, নিউরোনের শ্রেণিবিভাগ, মস্তিষ্ক ...

রেচন (Excretion)

রেচনের সংজ্ঞা এবং তার ব্যাখ্যা, রেচন অঙ্গ ও তন্ত্র, রেচন পদার্থ, রেচনের গুরুত্ব, উদ্ভিদের রেচন, উদ্ভিদের রেচনের বৈশিষ্ট্য, উদ্ভিদের রেচন পদার্থ ত্যাগের পদ্ধতি, উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন পদার্থ এবং তাদের অর্থকরী গুরুত্ব, নাইট্রোজেনবিহীন রেচন পদার্থ, নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ ...